একই রাতে রাতে শহরের দু’টি পেট্রোল পাম্পে পরপর লুঠপাটের ঘটনা ঘটল। মারধর করা হয় পাম্পের কর্মীদেরও। বৃহস্পতিবার গভীর রাতের ওই দু’টি ঘটনায় আসানসোলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ী ও শহরের বাসিন্দাদের একাংশ। সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে আসানসোলের মুর্গাশোলে। ওই দিন রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ মুখে কাপড় বাঁধা জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী পাম্পে ঢোকে। ওই সময়, রাতের পালিতে কাজ করছিলেন নরেন মাজি ও অভয় সূত্রধর নামে দুই পাম্পকর্মী। নরেনবাবু জানান, আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দুষ্কৃতীদলটি পাম্পে ঢুকেই দু’জনের উপর চড়াও হয়। তারপর দড়ি দিয়ে বেঁধে ওই দুই কর্মীকে পাম্পেরই একটি শৌচাগারের ভিতর আটকে দেয় দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার সকালে নরেনবাবু বলেন, ‘‘অনেকক্ষণ আটক থাকলেও ভয়ে আওয়াজ করতে পারিনি। মাথা ফেটে রক্ত পড়ছিল।’’ শেষমেশ ওই এলাকা দিয়ে টহল দিতে যাওয়ার সময় ওই দুই কর্মীকে শৌচাগার থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পাম্পের মালিক সুবীর সাহা জানান, শুক্রবার সকালে দেখা যায় চারদিকে লণ্ডভণ্ড অবস্থা। তাঁর দাবি, নগদ বেশ কয়েক হাজার টাকা ও কয়েকটি মোবাইল লুঠ করা হয়েছে।
ওই একই রাতে দু’নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ঘাগরবুড়ি মন্দির সংলগ্ন এলাকায় আরও একটি পেট্রোল পাম্পেও লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। পাম্পের নিরাপত্তারক্ষী মোতিলাল টুডু জানান, রাত তিনটে নাগাদ মুখ বাঁধা অবস্থায় কয়েকজনকে ঢুকতে দেখেই পাম্পকর্মীদের সন্দেহ হয়। বাঁশি বাজাতে শুরু করেন মোতিলালবাবু। এরপর পাম্পের দু’জন নিরাপত্তারক্ষীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পাশের একটি ঝোপের আড়ালে ফেলে রাখে। মারধর করা হয় পাম্পের আরও দু’জন কর্মীকেও। তাদের একটি শৌচাগারে আটক করে রাখা হয়। পাহারায় থাকে দুই দুষ্কৃতী। বাকিরা, পাম্পের কর্মীদের কাছ থেকে মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনতাই করে বলে অভিযোগ। পাম্পের কর্মী সন্তোষ তিওয়াড়ি বলেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ ধরে অনেক চেষ্টায় বাঁধন ছাড়াতে পারি আমরা।’’
শহরের জনবহুল দু’টি এলাকায় অল্প সময়ের ব্যবধানে লুঠপাটের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহরের ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ। ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সে অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যকরী সভাপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ খেতান বলেন, ‘‘আমরা শঙ্কিত। রাতের দিকে এরকমটা চলতে থাকলে চলাফেরা দায় হয়ে পড়বে। প্রভাব পড়বে ব্যবসাতেও।’’ বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও। কংগ্রেসের আসানসোল মহকুমা কমিটির সভাপতি রবিউল ইসলামের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সব থানাকে এক লক্ষ টাকা করে দিচ্ছেন ‘মিলন উৎসব’ করতে। তাই নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে পুলিশ উৎসবে ব্যস্ত।’’ সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ও ‘পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলেছেন। বিজেপি নেতা প্রশান্ত চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ বিরোধী দলের কর্মীদের দমন করতে ব্যস্ত। তাই অপরাধীদের খুঁজে পাচ্ছে না।’’
যদিও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি লুঠের ঘটনারই সিসিটিভি ফুটেজ মিলেছে। তা দেখে ও অন্যান্য সূত্র থেকে লুঠের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজও চলছে। দু’টি ঘটনা একই দল ঘটিয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, লুঠের ঘটনায় জড়িতরা স্থানীয় এলাকারই বাসিন্দা। শহরের নিরাপত্তাও আঁটোসাটো বলে দাবি পুলিশের। এডিসিপি (সেন্ট্রাল) রাকেশ সিংহের বক্তব্য, ‘‘ওই ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই এলাকা জুড়ে তল্লাশি শুরু হয়েছে। লুঠপাটের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy