ভাঙা দরজা দিয়েই ঘরে ঢুকছে শিশুরা।
দিঘির এক পাড়ে ব্যবহারের অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে নতুন ভবন, আরেক পাড়ে ভগ্নপ্রায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘরে গাদাগাদি করে চলছে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি। দেওয়াল চুঁইয়ে জল, শ্যাওলার মধ্যেই নিত্য বই-খাতা নিয়ে বড় হওয়ার লড়াইয়ে জুটেছে ওই খুদেরা। মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামের এক মাত্র শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটির (নম্বর ১৯০৯) হাল এমনই।
জেলার বহু শিশুশিক্ষা কেন্দ্রই পরজীবি হয়ে টিকে রয়েছে। কোথাও ক্লাব ঘরে তো কোথাও প্রাথমিক বিদ্যালয় শুরুর আগে সকালে ক্লাস হয়। আর যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এসে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রর নামে জমি দান করেন, সেখানে সরকার পাকা ভবন তৈরি করে দেয়। ক্ষীরগ্রামের ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি তৈরি হয়েছে ১৯৯৯ সালে। প্রথমে স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলে সকালে কেন্দ্রটি চলত। ২০০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত হয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি ঘরে উঠে আসে। তার কয়েক বছর পরে দিঘির এক পাড়ে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের জন্য জমি দান করেন গ্রামবাসীরা। একটি বড় ঘর, রান্নার সরঞ্জাম রাখার ঘর, শৌচাগার, টিউবওয়েল তৈরি করে দেয় সরকার। ২০১২ সালের ৫ মে নতুন ভবনের চাবিও তুলে দেওয়া প্রধান শিক্ষিকার হাতে। তারপর দু’বছর কেটে গেলেও ভবনটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটির বর্তমান ভবনটিকে এক নজর দেখলে মনে হবে ভুতুড়ে বাড়ি। দেওয়ালে শ্যাওলা ভর্তি। ঘরের আলসেতে আগাছা জমেছে। অন্ধকার, স্যাঁতসেতে ঘরে আলো ঢোকে না বললেই চলে। একরকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই কোনওরকমে চলছে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি। ওই কেন্দ্রের পড়ুয়া সুরুম্বী হাজরা, সুজয় ভুঁইয়াদের অভিযোগ, “দেওয়াল চুঁইয়ে জল পড়ে। সবসময় ভয় হয়, এই বুঝি ছাদ ভেঙে পড়ল।” পড়ুয়াদের ভয়ের কথা মেনে নিয়েছেন ওই কেন্দ্রের শিক্ষিকা ক্ষুদু কুণ্ডুও।
তালাবন্ধ নতুন ভবন।
পূর্ত দফতরও ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিটি আবাসনকে ‘বিপজ্জনক’ ঘোষণা করেছে। কিন্তু তারপরেওনতুন ভবন ব্যবহার করা হচ্ছে না কেন? ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষিকা রুনু হাজারার দাবি, “মিড-ডে মিল চালানোর জন্য নতুন ভবনে কোনও আচ্ছাদন নেই। রান্না করা যাবে না বলেই আমরা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটিকে স্থানান্তরিত করিনি।” প্রধান শিক্ষিকার যুক্তির বেড়াজালে মাথায় ছাদ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা নিয়েই প্রতিদিন বই-খাতা বগলে হাজির হচ্ছে ৭৩ জন পড়ুয়া।
শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত না হওয়ায় অভিভাবকরাও বেশ ক্ষুব্ধ। অসন্তুষ্ট ওই কেন্দ্রের রান্নার দায়িত্বে থাকা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও। তবে প্রধান শিক্ষিকার দাবি, “রান্নাঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত প্রধান থেকে বিডিও পর্যন্ত সমস্ত স্তরে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। প্রশাসনের কর্তারা আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছেন।” ব্যবহার না হওয়ায় নতুন ভবনের টিউবওয়েল খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত না করার পিছনে প্রধান শিক্ষিকার যুক্তি মানতে নারাজ ক্ষীরগ্রাম পঞ্চায়েত থেকে মঙ্গলকোটের বিডিও সবাই। তৃণমূল পরিচালিত ক্ষীরগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অভিজিৎ সামন্ত বলেন, “কোনও সমস্যা থাকলে তা ধীরে ধীরে মিটে যাবে। তার আগে ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ভবনটা ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে ভবনটাও তো খারাপ হয়ে পড়বে।” বিডিও সুশান্ত মণ্ডলও বলেন, “এ রকম অদ্ভুত অজুহাতে ভবন ব্যবহার না করে বিপজ্জনক ঘরে যে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি চলছে, তা আমার নজরে ছিল না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy