Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচ বছরেও রাস্তার হাল না ফেরায় ক্ষোভ

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে তৃণমূল পুরবোর্ড— মেমারি পুর এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দারাই এমনটাই দাবি। তাঁরা স্পষ্টই বলছেন, যে যে প্রতিশ্রুতিতে ভর করে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল পাঁচ বছরে তার মধ্যে বাদ পড়ে গিয়েছে সবচেয়ে জরুরি কাজটাই। তাঁদের দাবি, যাতায়াতে সমস্যা, রাস্তা চওড়া করে যানজট মেটানোর যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা হয়নি। এই সুযোগে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের তালিকাকে সম্বল করছে বিরোধীরাও।

হাসপাতাল মোড়ের সংকীর্ণ, ভাঙা এই রাস্তা দিয়েই চলে যাতায়াত।

হাসপাতাল মোড়ের সংকীর্ণ, ভাঙা এই রাস্তা দিয়েই চলে যাতায়াত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেমারি শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৩
Share: Save:

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে তৃণমূল পুরবোর্ড— মেমারি পুর এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দারাই এমনটাই দাবি। তাঁরা স্পষ্টই বলছেন, যে যে প্রতিশ্রুতিতে ভর করে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল পাঁচ বছরে তার মধ্যে বাদ পড়ে গিয়েছে সবচেয়ে জরুরি কাজটাই। তাঁদের দাবি, যাতায়াতে সমস্যা, রাস্তা চওড়া করে যানজট মেটানোর যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা হয়নি। এই সুযোগে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের তালিকাকে সম্বল করছে বিরোধীরাও।

বাসিন্দাদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রাস্তা নিয়ে। মেমারির হাসপাতাল রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এতটাই সংকীর্ণ যে অ্যাম্বুল্যান্সই ঢুকতে পারে না। রাস্তার দু’ধারের ড্রেনও সংস্কারের অভাবে বুজে গিয়েছে। ফলে ফি বছর বর্ষায় মেমারি হাসপাতালের সামনে হাঁটু জল জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে মানুষের। তাঁদের দাবি, অনেক বলেও পুরসভা এই বিষয়ে নজর দেয়নি। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কালীতলা পাড়ার বাসিন্দা অচিন ভট্টাচার্য বলেছন, “মেমারি শহর ক্রমে বাড়ছে। তাই আগের তুলনায় রাস্তাঘাট চওড়া করার দরকার রয়েছে। যেমন, মেমারি ওল্ড স্টেশন রোড, কৃষ্ণ বাজার, হাসপাতালে রোডকে চওড়া করে এই রাস্তাগুলি দিয়ে গাড়ি চলাচল মসৃণ করার খুবই দরকার রয়েছে। কিন্তু এতদিনেও কিছুই হয়নি। রাস্তাগুলি পড়ে রয়েছে মান্ধাতার আমলে। ফলে যানজট এ শহরের নিত্যচিত্র।’’ তিনি আরও বলেন, “মেমারি শহরের বুকে কয়েকটি জায়গায় ত্রিফলা আলো বসেছে। কিন্তু যে আলোগুলি বসানো হয়েছে তাদের রোশনাই অত্যন্ত কম। তাই মনে হয়, সেগুলি না বসালেই ভাল হতো।” শহরের আর এক বাসিন্দার আবার অভিযোগ, ‘‘বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সাফাইয়ের জন্য পুরসভা মাসে ১৫ টাকা করে নেয়। কিন্তু শহরের নানা প্রান্তে যেভাবে আবর্জনা পড়ে থাকে, তাতে মনে হয় শুধু টাকাই নেওয়া হয়, পরিষেবা দেওয়াটা আর আর হয়না।’’

জিটি রোডের পুরনো এলআইসি পাড়ার বাসিন্দা অনীলকুমার মণ্ডলেরও অভিযোগ, ‘‘মেমারি শহরে ফুটপাথ বলে কিছু নেই। এই বর্ধিষ্ণু শহরে পথচারীদের হাঁটা চলার উপায় নেই। শুনেছিলাম, পুরসভা এ দিকে নজর দেবে। কোথায় কী! এই তো কৃষ্ণবাজারে ফুটপাথ হবে বলে দুপাশে ইঁট বসানো হলো। কিন্তু দেখা গেল হকারেরা তাতে পাকাপাকি ভাবে গেঁড়ে বসলেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘প্রতিদিন চকদিঘি মোড় থেকে কলেজ মোড়ের জিটি রোড পর্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে বড় বড় ট্রাক পার হয়। প্রায়ই ওই এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। পুরসভার উচিত ছিল দু’পাশের বাতিস্তম্ভ ও ফোনস্তম্ভ সরিয়ে রাস্তা চওড়া করা। এতে মানুষের উপকার হতো।”

সংস্কারের অভাবে পলিথিনে বুজেছে নর্দমা।

মেমারি শহরে ভোটের প্রচারে মাইকের পাশাপাশি কান পাতলেই এখন আর একটা জিনিস শোনা যাচ্ছে। তা হল পাড়ায় পাড়ায় জটলায় নানা পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ। স্থানীয় হাসপাতালে মোড়ে দেখা হলো শেখ আইনাল হকের সঙ্গে। তিনি ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সোমেশপুরের বাসিন্দা। চায়ের দোকানে বেঞ্চে বসে বলতে লাগলেন ক্ষোভের কথা। বললেন, ‘‘দুঃস্থদের জন্য বিপিএল করে দেব বলেছিল। বাস্তবে কিছুই হয়নি। বাম আমলে ঘর করার জন্য নেওয়া ২০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ারও কথা ছিল, কেউ তা ফেরত পেয়েছেন বলে তো জানিনা।” সংখ্যা দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দেন, গোটা মেমারির ১৬টি ওয়ার্ডে ৬২১টি এমন বাড়ি তৈরি হয়েছিল যেগুলির উপভোক্তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। পুরসভা দেয় বাকি ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু একটি বাড়ির টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি বলে তাঁর দাবি। চায়ের দোকানে বসে থাকা শ্রাবন সাউ নামে এক জনেরও অভিযোগ, বিদায়ী বোর্ডের আমলে ১৬টি ওয়ার্ডে হোম ফর হোমলেস প্রকল্পে মোট ৬০টি একলাখ টাকার বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু এই বাড়িগুলি বন্টন করা হয়েছে তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে। সাধারণ মানুষ তা পাননি।

জিটি রোডের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিজয়কুমার সিংহ বলেন, “জিটি রোডের একপাশে ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে অর্ধেক শহরই অবস্থিত। এই এলাকায় একটি বাসস্টান্ডের পরিকল্পনা বিগত সিপিএমের বোর্ড নিয়েছিল। কিন্তু বিদায়ী তৃণমূলের বোর্ডের সময় তা নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়নি।’’ তাঁর আরও দাবি, মেমারিতে একটি বৃদ্ধাবাস তৈরির জন্য বহুবার তিনি পুরসভার কাছে দরবার করেছিলেন। কিন্তু কোনও কাজই হয়নি।

বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, মেমারি শহরের সৌন্দর্য্যায়ন ঘটলেও, আসল সমস্যা মেটেনি। রাস্তায় আলো বসেছে, তৈরি হয়েছে ফোয়ারা। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিষেবার উন্নতি হয়নি। অনেকেরই দাবি, মনে হচ্ছে এই বোর্ডের সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনাই ছিলনা শহরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে।

সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিরোধীদের প্রচারেও এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কথা শোনা যচ্ছে। সিপিএমের নির্বাচনী ইস্তাহারে সরাসরি বলা হয়েছে, বিদায়ী পুরবোর্ড ঘোষণা করেছিল মেমারির সমস্ত গরিব পরিবারকে বিপিএল কার্ড দান করা হবে। তাঁদের বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। নিখরচায় পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। এমনকী আগের সিপিএমের বোর্ড দুঃস্থদের বাড়ি তৈরি করতে যে ২০ হাজার টাকা করে নিয়েছিল, ক্ষমতায় এলে তা ফেরত দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল।

তবে মেমারি পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীর দাবি, এ সবই মিথ্যা রটনা। শহরের উন্নয়নে প্রচুর কাজ করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘শহরকে সাজানো থেকে শুরু করে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছি আমার। ভোটের মুখে বিরোধীরা নানা মিথ্য রটনা রটাচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের এই পুরসভায় তৃণমূলই এ বার ১৬-০ ফলে জিতবে। বিরোধীরা হারের ভয়ে দিশেহারা।” যদিও কী কী কাজ হয়েছে তার স্পষ্ট তালিকা তিনি দিতে পারেননি। জানতে চাইলে বলেন, “আমি ভোট নিয়ে খুব ব্যস্ত রয়েছি।”

এ বারও প্রচারে বেরোনো প্রার্থীদের দেখে একটাই প্রশ্ন মেমারির, এ বারে কাজগুলো হবে তো?

ছবি: উদিত সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE