Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুজোর রাতে জমজমাট শ্মশান

শ্মশানে জাগিছে শ্যামা মা। খনি-শিল্পাঞ্চলের নানা প্রান্তের শ্মশানে দর্শকের ঢল কালীপুজোয়। নানা সমস্যার মধ্যেও সমারোহের খামতি নেই শ্মশানের পুজোয়। পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা গ্রাম পঞ্চায়েতের মেটালধাওড়া শ্মশানকালী পুজো শুরু করেছিলেন ঠিকাদার শান্তা পাসোয়ান। পুজো কমিটির সম্পাদক কিরণ দাস জানান, শান্তাবাবু বিহারে তাঁর আদি বাড়ি চলে যান।

খান্দরা শ্মশানের পুজো।—নিজস্ব চিত্র।

খান্দরা শ্মশানের পুজো।—নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩১
Share: Save:

শ্মশানে জাগিছে শ্যামা মা।

খনি-শিল্পাঞ্চলের নানা প্রান্তের শ্মশানে দর্শকের ঢল কালীপুজোয়। নানা সমস্যার মধ্যেও সমারোহের খামতি নেই শ্মশানের পুজোয়।

পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা গ্রাম পঞ্চায়েতের মেটালধাওড়া শ্মশানকালী পুজো শুরু করেছিলেন ঠিকাদার শান্তা পাসোয়ান। পুজো কমিটির সম্পাদক কিরণ দাস জানান, শান্তাবাবু বিহারে তাঁর আদি বাড়ি চলে যান। পাশেই একটি বন্ধ কোলিয়ালির ঠিকাদার ছিলেন। স্বপ্নাদেশে পুজো শুরু করেছিলেন। সেই পুজো এখন এলাকায় সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর চাহিদাতেই পাঁচ দিন পরে বির্সজন হয়। এই শ্মশানে মৃতদেহ রাখার ঘরটি ভাঙা। অজয়ের ধারে এই শ্মশানে সব থেকে বড় সমস্যা জল। গ্রীষ্মে নদের সঙ্গে কুয়োও শুকিয়ে যায়। এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ মেলেনি। অন্ডালের উখড়ায় চারটি শ্মশান আছে। সব থেকে পুরনো জমিদারবাড়ির শ্মশানে আগে শুধু জমিদার পরিবারের সদস্যদের দেহ দাহ করা হত। এই শ্মশানে যাওয়ার রাস্তা সংকীর্ণ। এখনও পাকা রাস্তা হয়নি। তবু কালীপুজোর দিন এই শ্মশান ভক্তে ভরে ওঠে। এই পুজো প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো।

এই গ্রামে অবিচল শ্মশানে রাস্তা থেকে অন্য পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত। প্রায় এক শতক ধরে পুজো হচ্ছে। খান্দারা গ্রামের শ্মশানে পুজো শুরু করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সুধীর বাউরি। তিনি এখন বৃদ্ধ। এখানে বছর চারেক আগে দেহ সতকারের জন্য একটি ঘর হয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত পাকা রাস্তা ও জলের স্থায়ী ব্যবস্থা করেছে। রানিগঞ্জের বড়বাজার এলাকা এক সময় জঙ্গলে ঘেরা ছিল। সেখানে শ্মশানকালী পুজো শুরু হয় বারোশো বঙ্গাব্দে। এই মন্দিরের সেবায়েত অশোককুমার চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর জ্যাঠামশাই বৈদ্যনাথ চট্টোপাধ্যায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুখপত্র ছাপতেন। বৃটিশ সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে। কাজী নজরুল ইসলাম ও লেখক শৈলজানন্দের নিত্য যাতায়ত ছিল বৈদ্যনাথবাবুর কাছে। জনশ্রুতি, নজরুল ‘শ্মশানে জাগিছে শ্যামা মা’ গানটি লেখার অনুপ্রেরণা এই মন্দির থেকেই পেয়েছিলেন।

জামুড়িয়ার ইকড়ায় তিনটি শ্মশানকালী পুজো হয়। জনশ্রুতি, বামাখ্যাপা এক বার অন্ডাল-বৈদ্যনাথধাম ট্রেনে চেপে যাচ্ছিলেন। টিকিট না থাকায় তাঁকে ইকড়া স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়। তিনি মনের দুঃখে স্টেশনের সামনে একটি শ্মশানে গিয়ে বসেন। এ দিকে, তার পরে ট্রেন আর চলছে না দেখে ওই ট্রেনের গার্ড ও টিকিট পরীক্ষক বামাখ্যাপার খোঁজে বেরোন। তাঁকে বুঝিয়ে নিয়ে ট্রেনে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে ট্রেন চলা শুরু করে। ওই গ্রামের বাসিন্দা বুধন বাউরি, বাবন বাগদি, বুড়ো চট্টোপাধ্যায়েরা জানান, বামাখ্যাপার স্মৃতিধন্য জামুড়িয়ার নানা জায়গার মানুষের ঢল নামে কালীপুজোয়। এই শ্মশানে সমস্যার অন্ত নেই। বাসিন্দাদের অভিযোগের আঙুল স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলির দিকে। অভিযোগ, কারখানাগুলি বর্জ্য ফেলে শ্মশানের পাশে সিঙ্গার নদীতে। জল কালো হয়ে গিয়েছে। এই জল পান করে গবাদি পশুর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তাই শবযাত্রীরা আর এই জল ব্যবহার করতে পারেন না। দূরে গিয়ে স্নান করতে হয়।

জামুড়িয়ায় অজয়ের পাড়ে বীরকুলটি গ্রামে শ্মশানকালী মন্দিরটি বেলুড় মঠের আদলে। স্থায়ী মন্দিরে পাথরের মূর্তি। ৫৫ বছর ধরে ওই পুজো করছে শিবকালী সেবক সঙ্ঘ। ছোট জায়গায় যাতায়াতে অসুবিধে রয়েছে। জয়নগর, বারুল, সত্তর, তালতোড় গ্রামের মানুষের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ওই পুজোর সঙ্গে। আসানসোল উত্তরে কল্যাণপুর শ্মশানপাড়ের পুজো চলছে ১৯৭০ থেকে। এখন অবশ্য সেখানে শ্মশান নেই। ওই মন্দিরের পুরোহিত মুকুট রায় জানান, মালিকা বাউড়ি নামে এক মহিলা পুজো শুরু করেন।

বারাবনির নুনি শ্মশান সব থেক পুরনো। পুজোর উদ্যোক্তা রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় জানান, ১৯৭৬ সালে পুজো শুরু হয়। তার পরে প্রয়াত শিল্পপতি সিদ্ধেশ্বর উপাধ্যায় বেনারস থেকে শিলামূর্তি এনে দেন। সেই থেকে স্থায়ী মন্দিরে নিত্যপুজো চালু হয়। কন্যাপুর শ্মশান প্রায় দেড়শো বছরের। পুজো হচ্ছে বছর দশেক। দেখভাল করেন বিকাশ মিশ্র। হিরাপুরের পুরনো শ্মশানে কালীপুজো শুরু হয়েছে প্রায় তিনশো বছর আগে। বর্তমান সোবায়েত রাকেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুজোর সময় মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে এই শ্মশান। দামোদরের পাড়ে এই শ্মশানের মূল সমস্যা, প্রতি বছর পাড়ের ভাঙন। এলাকার বাসিন্দা তথা আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ লক্ষণ ঠাকুর জানান, একবার পাড় বেঁধে দিয়েছে ইস্কো। প্রতি বছরই কেউ না কেউ সেই কাজ করে দেয়। শ্মশানের রাস্তা কাঁচা। বৃষ্টিতে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েন শবযাত্রীরা। জামুড়িয়ার বোগড়া, বালানপুর-সহ এই শিল্পাঞ্চলে বহু শ্মশান জনসমাগমে জেগে ওঠে এই কালীপুজোর রাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE