Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ফের ভোট শুধু দুই বুথে, ক্ষুব্ধ বিরোধীরা

বুথের সামনে থেকে ভোটারদের বাড়ি ফেরানো থেকে চড়-থাপ্পড় মেরে বিরোধী প্রার্থী-এজেন্টদের বের করে দিয়ে ছাপ্পা— পুরভোটের দিন আসানসোলের বহু বুথেরই চেহারা ছিল এই রকম। অন্তত ১৩টি ওয়ার্ডের সব বুথে পুনর্নির্বাচন করানোর দাবি তুলেছিল বিরোধীরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন আসানসোলে মাত্র দু’টি বুথে ফের ভোট নেওয়ার কথা জানানোয় গোটা বিষয়টিকে ‘প্রহসন’ বলে দাবি করেছে তারা। এত বুথ নিয়ে অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও শুধু দু’টি বুথে কীসের ভিত্তিতে পুনর্নির্বাচন হচ্ছে, সে প্রশ্নে মুখে কুলুপ কর্তাদের।

কাল্লার এই বুথেই গোলমাল হয়েছিল। পুনর্নির্বাচন আজ। —ফাইল চিত্র।

কাল্লার এই বুথেই গোলমাল হয়েছিল। পুনর্নির্বাচন আজ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৪৫
Share: Save:

বুথের সামনে থেকে ভোটারদের বাড়ি ফেরানো থেকে চড়-থাপ্পড় মেরে বিরোধী প্রার্থী-এজেন্টদের বের করে দিয়ে ছাপ্পা— পুরভোটের দিন আসানসোলের বহু বুথেরই চেহারা ছিল এই রকম। অন্তত ১৩টি ওয়ার্ডের সব বুথে পুনর্নির্বাচন করানোর দাবি তুলেছিল বিরোধীরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন আসানসোলে মাত্র দু’টি বুথে ফের ভোট নেওয়ার কথা জানানোয় গোটা বিষয়টিকে ‘প্রহসন’ বলে দাবি করেছে তারা। এত বুথ নিয়ে অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও শুধু দু’টি বুথে কীসের ভিত্তিতে পুনর্নির্বাচন হচ্ছে, সে প্রশ্নে মুখে কুলুপ কর্তাদের।

৩ অক্টোবর ভোটের দিন সকাল থেকেই শহর ছিল কার্যত বহিরাগতদের দখলে। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ৭৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিসি কলেজে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, হু়ড়মুড় করে সেখানকার তিনটি বুথে ঢুকে পড়েছে এক দল বহিরাগত। ভোটারদের লাইন ছত্রভঙ্গ করে তারা ঢুকে পড়ে ভিতরে। চিৎকার করে বলে, ‘‘অনেক হয়েছে, আর ভোট দিতে হবে না। সবাই বাড়ি যান।’’ পোলিং এজেন্টদের টেনেহিঁচড়ে, প্রবীণ প্রার্থীকে চড় মেরে বের করে দিয়ে ইভিএমের দখল নিতে দেখা গিয়েছিল ওই দুষ্কৃতীদের। গোটা ঘটনার সময়ে পুলিশ ছিল নীরব দর্শক।

বার্নপুর বয়েজ ও গার্লস হাইস্কুলের বুথগুলিতে চিত্রটা ছিল একটু অন্য রকম। সেখানে বাইরে থেকে দেখলে কোনও গোলমাল ছিল না। কিন্তু ভাল করে খেয়াল করে দেখা গিয়েছিল, জনা কয়েক লোক ঘুরেফিরে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়ে যাচ্ছিল। ভোট দিতে আসা সাধারণ মানুষজন পিছনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে শেষমেশ বিরক্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন। কেউ কেউ পরে সামনে পৌঁছতে পারলেও জেনেছিলেন, তাঁর ভোট আগেই পড়ে গিয়েছে। বহিরাগতদের দখলে চলে গিয়েছিল রামবাঁধের কয়েকটি বুথও।

আজ, শুক্রবার যে দু’টি বুথে পুনর্নির্বাচন হবে, গোলমাল বেধেছিল সেগুলিতেও। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাল্লায় বুথের সামনে গুলিবিদ্ধ হন তিন বিজেপি কর্মী। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে যাওয়ার সময়ে ওই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। সেখানে ১২৬ নম্বর বুথে ফের ভোট নেওয়া হবে। ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৬৭ নম্বর বুথেও ভোট লুঠের অভিযোগ উঠেছিল। সেটিতেও ফের ভোট হবে আজ।

ভোটের দিন শহর জুড়ে তাণ্ডবের অভিযোগে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের তরফে আলাদা ভাবে আন্দোলন করা হয় শহর জুড়ে। বামফ্রন্টের তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রায় ১৩টি ওয়ার্ডের সব ক’টি বুথের তালিকা দিয়ে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার যে দু’টি বুথে পুনরায় ভোটের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাতে বামেদের দেওয়া তালিকার কোনও বুথ নেই। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটি শুধু লোক দেখানো সিদ্ধান্ত। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সাধারণ মানুষে গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে ছেলেখেলা করছে।’’ পার্থবাবু জানান, তাঁরা কর্পোরেশনের ২, ৪, ৫, ৭, ১৩, ৫১, ৭৬, ৮১, ৮৭, ৮৮, ৯১, ৯২ ও ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের সব বুথে ফের ভোটের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু যেখানে বহিরাগতেরা দেদার ছাপ্পা দিয়ে গিয়েছে, সেই সব বুথ নিয়ে কমিশন কোনও পদক্ষেপই করল না বলে তাঁর দাবি।

শুক্রবার আসানসোলে পুনর্নির্বাচন বয়কট করার কথা জানিয়েছে কংগ্রেস। দলের আসানসোল মহকুমা সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘শাসকদল যে ভাবে ভোট লুঠ করেছে তাতে সরকারি সিলমোহর লাগাতেই নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ একই সুর বিজেপি নেতাদের গলাতেও। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের বক্তব্য, ‘‘ভোটের দিন আমাদের কর্মীরা রক্তাক্ত হলেন। ভোট লুঠ হল। সেখানে মাত্র দু’টি বুথে পুনর্নির্বাচন করানো প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।’’

বিরোধীদের এই সব দাবি প্রসঙ্গে আসানসোলের মহকুমাশাসক তথা রিটার্নিং অফিসার অমিতাভ দাস বলেন, ‘‘ভোট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কমিশনের কাছে জমা পড়েছে। এ বিষয়ে যা জানানোর নির্বাচন কমিশনার বিশদে জানিয়েছেন। আমাদের আর কিছু বলার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE