Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফের ভোট, সুখলাল হাসপাতালেই

তাঁর পায়ে গুলিই ভোট ফিরিয়ে এনেছে ওয়ার্ডে। কিন্তু তিনি আর ভোট দিতে যাওয়ার অবস্থাতেই নেই। নেই তাঁর স্ত্রীও। শুক্রবার আসানসোলের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১২৬ নম্বর বুথে ফের ভোট নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

চলছে চিকিৎসা। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে চিকিৎসা। —নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৫ ০১:০০
Share: Save:

তাঁর পায়ে গুলিই ভোট ফিরিয়ে এনেছে ওয়ার্ডে। কিন্তু তিনি আর ভোট দিতে যাওয়ার অবস্থাতেই নেই। নেই তাঁর স্ত্রীও।

শুক্রবার আসানসোলের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১২৬ নম্বর বুথে ফের ভোট নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসিএলের প্রাক্তন কর্মী সুখলাল কর্মকার শুয়ে থেকেছেন কাল্লা সেন্ট্রাল হাসপাতালে আইসিসিইউ-এ। সারা দিন খাবার নিয়ে বাড়ি-হাসপাতাল করেছেন তাঁর স্ত্রী মায়া। ভোট দিতে আর যাননি।

গত শনিবার গণ্ডগোলের খবর পেয়ে স্ত্রীকে খুঁজতেই বুথের কাছে গিয়েছিলেন সুখলাল।

তার পর?

চিত হয়ে শুয়ে চেয়ে ছিলেন সিলিংয়ের দিকে। প্রশ্ন শুনেই চোখ বুজে ফেলেন সুখলাল। জানান— সে দিন সাতসকালেই নিজের ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। দুপুর ২টো নাগাদ মায়া যান ভোট দিতে। কথা ছিল, তিনি ফেরার পরে খেতে বসবেন। হঠাৎ শোনেন, বুথে ঝামেলা হচ্ছে। মায়ার খোঁজ করতে বেরিয়ে সবে বড় রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। রাস্তার উল্টো দিক ধেয়ে আসে মোটরবাইক বাহিনী। এলোপাথাড়ি গুলি। প্রথমে লাগে কাছেই একটা দেওয়ালে। তার পর ছিটকে তাঁর ডান পায়ে। গুলিতে জখম আরোও দু’জন। তিন জনই রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে থাকেন। এলাকার লোকজন তুলে কাল্লা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

ঘটনাচক্রে, এই হাসপাতালেই দীর্ঘ ৩০ বছর ফার্মাসিস্ট পদে চাকরি করে গত ফেব্রুয়ারিতে অবসর নিয়েছেন সুখলাল। এখন তাঁর একটাই চিন্তা, পা-টা আবার আগের মতো স্বাভাবিক হবে তো? আবার আগের মতো হেঁটে চলে বেড়াতে পারবেন তো? চোখে-মুখে একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে বলেন, ‘‘পা ভাঁজ করতে পারছি না, জানেন। কী যে হবে, বুঝতে পারছি না।’’

সুখলাল বিলক্ষণ জানেন, ওই গোলমালের জেরে তাঁদের বুথে ফের ভোট নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সে কথা তুলতেই প্রায় ফুঁসে ওঠেন তিনি—‘‘আমরা কেন ভোট দিতে যাব বলুন তো! আমি তো কোনও দল করিনা। এক জন সাধারণ ভোটার। প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারল কি? দিনে-দুপুরে এসে গুলি চালিয়ে জখম করে গেল, এক জনও দুস্কৃতীকে পুলিশ ধরতে পারল কি?’’ এমনকী এ দিন কোনও নেতাও তাঁর খোঁজ নিতে আসেননি। কোনও দল করেন না যে!

ভোটের বুথমুখো হননি মায়াও। একটু বেলার দিকে কাল্লা আবাসন কলোনিতে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তিনি রান্না চাপিয়েছেন। জানালেন, একটু আগেই স্বামীকে জলখাবার খাইয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন। দুপুরে মাছের ঝোল-ভাত নিয়ে যেতে বলেছেন চিকিৎসকেরা। তিনিও সারাক্ষণ ভেবে চলেছেন, স্বামীর পা ভাল হবে তো? অক্ষম হয়ে যাবে না তো? এ দিনও বারবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেই কথাই জিগ্যেস করেছেন।

বেলা তো গড়িয়ে যাচ্ছে, আপনি যাবেন না ভোট দিতে?

শান্ত গলায় মায়া বলেন, ‘‘না। আর কোনও দিনই যাব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE