Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভোটের আগে জামুড়িয়ায় কোন্দলই ভাবনা তৃণমূলে

শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ, দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ কতটা কাজের কাজ হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে জামুড়িয়ায়। কারণ, প্রচারে আসা দলীয় প্রার্থীর সামনেই প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব। আগেও বারবার এমন কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫৬
Share: Save:

শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ, দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ কতটা কাজের কাজ হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে জামুড়িয়ায়। কারণ, প্রচারে আসা দলীয় প্রার্থীর সামনেই প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব। আগেও বারবার এমন কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু এই ঘটনার পরে দলের ব্লক যুব তৃণমূলের কোর কমিটির তিন জন দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরে দাঁড়িয়েছেন। জেলা তৃণমূল নেতারা অবশ্য বলছেন, প্রার্থীকে জেতাতে সবাই এক হয়েই লড়বেন।

গত ১০ এপ্রিল জামুড়িয়ার তালতোড় গ্রামে প্রচারে যান আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জামুড়িয়া ব্লক যুব তৃণমূল নেতা তথা দলের নির্বাচন কমিটির সদস্য অলোক দাস। প্রার্থী গ্রামে ঢোকার মুখে তাঁদের ঘিরে ঘণ্টা দেড়েক বিক্ষোভ দেখান শ’চারেক তৃণমূল সমর্থক। তাঁদের অভিযোগ, অলোকবাবু দলবিরোধী কাজ করছেন। গত পঞ্চায়েত ভোটে তিনি ভোট দেননি। ‘সিন্ডিকেট’ করে কয়লা বোঝাই গাড়ি থেকে তোলা আদায় করছেন। দলীয় কর্মীদের এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ শোনার পরে তৃণমূল প্রার্থী ভোট মিটে যাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “অভিযোগ শুনেছি। ভোটের পরে এলাকায় দু’পক্ষকে নিয়ে বসে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, তালতোড় গ্রামের ঘটনার পরেই জামুড়িয়া যুব তৃণমূলের কোর কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন সত্যজিৎ অধিকারী, দীনেশ দে ও সুজয় চট্টোপাধ্যায় নামে দলের তিন নেতা। তাঁদের মধ্যে সত্যজিৎবাবু দলের নির্বাচন কমিটির সদস্যও ছিলেন। সেখান থেকেও সরে দাঁড়ান তিনি। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, দলে এক শ্রেণির নেতা দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে জেলা নেতৃত্বের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি। সত্যজিতবাবুর অভিযোগ, “দল ক্ষমতায় আসার পরে অলোকের মতো কিছু নেতা হঠাৎ প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়ে গিয়েছেন। মানুষ এর উৎস জানতে চাইছেন।” পুরো বিষয়টিই সংগঠনের জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটককে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে তাঁর দাবি।

দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার সব রকম অভিযোগ অস্বীকার করে অলোকবাবুর পাল্টা দাবি, “আমার পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে। কয়লা চুরির সঙ্গে যুক্ত থাকার কোনও প্রয়োজন আমার নেই। কোনও সিন্ডিকেটের সঙ্গেও আমি যুক্ত নই।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “যাঁরা আমার বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই এলাকায় রেশন কার্ড, প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।”

যুব তৃণমূলের (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অভিজিৎ ঘটক আবার দাবি করেন, ২০০৯ সালে জামুড়িয়ায় তৈরি হওয়া যুব কোর কমিটির তিন সদস্য সংগঠন বাড়ানোর ব্যাপারে কোনও কাজ করেননি। তাঁর কথায়, “ওই তিন জন পদ আঁকড়ে থেকেও কোনও কাজ করেননি। কিন্তু অলোকবাবু ভাল সংগঠক। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট তৈরির অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।” তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন অবশ্য বলেন, “সিন্ডিকেট চালানো নিয়ে জামুড়িয়া থেকে অভিযোগ এসেছিল। সেই অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে একটি পাল্টা একটি অভিযোগও এসেছে। সিন্ডিকেটের কোনও সংস্রব দলের নেই। দলের নাম জড়িয়ে যদিও কেউ এরকম কিছু করেন, ভোটের পরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তালতোড় গ্রামের ঘটনা কোনও ব্যতিক্রম নয়। প্রার্থী ঘোষণার পরে জামুড়িয়ার কয়েকটি কর্মিসভাতেও ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। জামুড়িয়ার পনিহাটি ওয়ার্কশপ এলাকায় দলীয় প্রার্থীর একটি কর্মিসভায় জেলা আইএনটিটিউসি সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এলাকায় সময় না দেওয়ার অভিযোগ করেন কর্মীরা। তাঁরা দাবি করেন, গত বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পর থেকে তাঁকে আর জামুড়িয়ায় দেখা যায়নি। এর পরে পনিহাটিতেই অন্য একটি কর্মিসভায় সিপিএম থেকে দলে আসা এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান অনেক কর্মী। প্রভাতবাবু যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভের কথা মানতে চাননি।

জেলা তৃণমূলের (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি তথা দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “কর্মীদের মধ্যে যদি কোনও মান-অভিমান থেকে থাকে তাহলে দলীয় স্তরে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jamuria nilotpal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE