Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মুখ ঢেকেছে বিজ্ঞাপনে

ঢাকা পড়ে গিয়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তিও, কিন্তু হেলদোল নেই প্রশাসনের। কর্তারা আশ্বাস দিচ্ছেন, বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং সব খুলে ফেলা হচ্ছে। আর কয়েক দিনেই সাফ হবে সব। আসলে পরিস্থিতিটা ঠিক কী? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।কোথাও রাস্তার মোড়ে হাত জোড় করে মানুষের কাছে ভোট চাইছেন রাজনৈতিক দলের নেতা, কোথাও বা আবার শারদ শুভেচ্ছা জানিয়ে জামা-কাপড়ের বিজ্ঞাপন— ভোট বা পুজো মেটার পরেও এমন ছবিই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে আসানসোলের বিভিন্ন এলাকায়। সৌজন্যে শহরজোড়া হোর্ডিং, ব্যানার।

বাঁ দিকে, আসানসোলের বিএন আর মোড়ে। ডান দিকে, আসানসোল কোর্ট এলাকায়। ছবি: শৈলেন সরকার।

বাঁ দিকে, আসানসোলের বিএন আর মোড়ে। ডান দিকে, আসানসোল কোর্ট এলাকায়। ছবি: শৈলেন সরকার।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৩৭
Share: Save:

কোথাও রাস্তার মোড়ে হাত জোড় করে মানুষের কাছে ভোট চাইছেন রাজনৈতিক দলের নেতা, কোথাও বা আবার শারদ শুভেচ্ছা জানিয়ে জামা-কাপড়ের বিজ্ঞাপন— ভোট বা পুজো মেটার পরেও এমন ছবিই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে আসানসোলের বিভিন্ন এলাকায়। সৌজন্যে শহরজোড়া হোর্ডিং, ব্যানার।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, হোর্ডিং-এর জেরে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। কোথাও বা নজরে পড়ছে না জরুরি সরকারি বিজ্ঞপ্তি। অভিযোগ, অবৈধ হোর্ডিং সরাতে বা নিয়ন্ত্রণে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্পোরেশন।

আসানসোলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র রবীন্দ্র ভবণ চত্বরে গেলেই রাস্তার দু’পাশে প্রচুর হোর্ডিং নজরে পড়ে। এর জেরে ঢাকা পড়েছে বিভিন্ন বাড়ির জানালা, সরকারি দফতরের সাইনবোর্ডে পুলিশের দেওয়া সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। কিছুটা এগিয়ে গেলেই পড়বে আসানসোলের পুলিশ লাইন। সেখানে আবার বিশাল একটা হোর্ডিং নষ্ট হয়ে গিয়ে কাপড়ের মতো ঝুলছে। বরাকরের বেগুনিয়া মোড়ে হোর্ডিং-এর সৌজন্যে ঢাকা পড়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তিটি। কুলটি ও নিয়ামতপুরের হোর্ডিং সমস্যা আরও প্রকট। সেখানে জিটি রোড সংলগ্ন হোর্ডিংগুলি কার্যত রাস্তার উপরে চলে এসেছে। হোর্ডিং-এর ফলে বার্নপুর স্টেশনের নামটি বেশ ঠাহর করেও বোঝা যাচ্ছে না।

পরিকল্পনাহীন ভাবে হোর্ডিং লাগানোর বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন শহরের বাসিন্দারাও। বার্নপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্যের ক্ষোভ, ‘‘অপরিকল্পিত ভাবে হোর্ডিং লাগানোটা নাগরিক রুচি ও সৌন্দর্য্যের সঙ্গে খাপ খায় না।’’ একই মত সাহিত্যিক মনোজ মাজিরও। হোর্ডিং-এ অজস্র বানান ভুল দৃশ্যদূষণ তৈরি করছে বলে মনে করেন তিনি।

শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকটি জায়গায় হোর্ডিং লাগাতে গিয়ে রাস্তা সংলগ্ন গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। পরিবেশবিদ তথা কলেজের শিক্ষক অরূপ রায় বলেন, ‘‘অনেক সময় গাছের গায়েও পেরেক দিয়ে হোর্ডিং লটকানো হচ্ছে। এটা সবুজ ধ্বংসেরই সামিল।’’ অপরিকল্পিত হোর্ডিং-এর জেরে শহরে যান নিয়ন্ত্রণেও অসুবিধা হচ্ছে বলে মত ট্রাফিক পুলিশের কর্তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আসানসোল থেকে বরাকর পর্যন্ত জিটি রোডের উপর বেশ কয়েকটি এলাকায় হোর্ডিং-এর কারণে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আসানসোল-কুলটির অধিকাংশ হোর্ডিং-ব্যানারই অবৈধ। কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সেগুলি শহরের যেখানে সেখানে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর জেরে কর্পোরেশনের রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে বলে প্রাশাসন সূত্রে খবর। এ দিকে হোর্ডিং নিয়ে অনেক বেনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। পুরসভার কাছেও অধিকাংশ হোর্ডিং নিয়ে কোনও নথি নেই বলে খবর। মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির যদিও বলেন, ‘‘শহরের বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং ও ব্যানার অবৈধ ভাবে লাগানো হয়েছে। এগুলি থেকে কর্পোরেশন রাজস্ব পায় না। শহেরের সৌন্দর্য্যের পক্ষেও তা ক্ষতিকর। আমরা সমস্ত অবৈধ হোর্ডিং খুলে নিতে অভিযান শুরু করেছি।’’ পুর-এলাকায় লাগানো বৈধ ও অবৈধ হোর্ডিংগুলি চিহ্নিত করার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানান জিতেন্দ্রবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE