Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রেলের জমি ছাড়ার নির্দেশ পেয়ে মুশকিলে স্কুল

জমি ও জলের সংযোগদুই সমস্যায় প্রবল আতান্তরে পড়েছে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের ধারে অবস্থিত ইস্টার্ন রেলওয়ে প্রাথমিক স্কুল। প্রায় লাটে উঠেছে দৈনন্দিন পড়াশোনা। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রায় তিন মাস আগে পানীয় জলের পাইপ ফেটে গেলেও জলের নতুন সংযোগ দেয়নি রেল। শুধু তাই নয়, রেল কর্তারা ওই স্কুলটিকে অন্যত্র উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে সঙ্কটে পড়েছে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের ধারে অবস্থিত এই স্কুলের পড়ুয়ারা। পুরো বিষয়টি জেলা শিক্ষা দফতর, জেলা সর্বশিক্ষা মিশন ও কাটোয়া পুরসভাকে জানিয়ে চিঠি দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

পুরসভার জলই একমাত্র ভরসা পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

পুরসভার জলই একমাত্র ভরসা পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০১:৪৪
Share: Save:

জমি ও জলের সংযোগদুই সমস্যায় প্রবল আতান্তরে পড়েছে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের ধারে অবস্থিত ইস্টার্ন রেলওয়ে প্রাথমিক স্কুল। প্রায় লাটে উঠেছে দৈনন্দিন পড়াশোনা। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রায় তিন মাস আগে পানীয় জলের পাইপ ফেটে গেলেও জলের নতুন সংযোগ দেয়নি রেল। শুধু তাই নয়, রেল কর্তারা ওই স্কুলটিকে অন্যত্র উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে সঙ্কটে পড়েছে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের ধারে অবস্থিত এই স্কুলের পড়ুয়ারা। পুরো বিষয়টি জেলা শিক্ষা দফতর, জেলা সর্বশিক্ষা মিশন ও কাটোয়া পুরসভাকে জানিয়ে চিঠি দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

ওই স্কুলের শিক্ষকরা জানান, রেল কর্মীদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য ১৯৭২ সালের ১ অক্টোবর এই প্রাথমিক স্কুলটি চালু হয়েছিল। নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় প্রথম থেকেই বর্ধমান-কাটোয়া রোডের ধারে রেলওয়ে রিক্রিয়েশন ক্লাবে স্কুলটি চলছে। একটি মাত্র ঘরেই প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস হয়। পড়ুয়াদের মাটিতে বসতে হয়। টিনের ছাদ দিয়ে জল পড়ে। ঘরে জায়গা না থাকায় পঞ্চবটি পাড়ার একটি স্কুল থেকে মিড ডে মিল আনা হয়। আগে জনপ্রিয় থাকলেও সম্প্রতি জেলায় কয়েকটি নামী বেসরকারি স্কুল তৈরি হওয়ায় এই স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যায় ভাটা পড়েছে। বর্তমানে স্কুলে ১৪০ জন পড়ুয়া রয়েছেন। তার মধ্যে রেল কর্মীর সন্তানের সংখ্যা হাতে গোনা। প্রায় সব পড়ুয়ারই স্থানীয় মিল পাড়া, মাঠ পাড়া থেকে পড়তে আসেন। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষোভ, রেলের কর্মচারীদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে স্কুলের ঘর ও সংলগ্ন মাঠটি ব্যবহার করা হয়। তখন তাঁদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। স্কুল পড়ুয়া মঙ্গলী দাস, শর্মিলা ভাস্করদের অভিযোগ, “মাটিতে বসে পড়াশোনা করতে সমস্যা হয়।”

রেল সূত্রে খবর, ইস্টার্ন রেলওয়ে প্রাথমিক স্কুলটি যে জমিতে রয়েছে সেখানে অন্য প্রকল্পের কাজ হবে। তাই স্কুলটিকে সরে যেতে বলা হয়েছে। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। রেলের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জেলা শিক্ষা দফতর। সর্বশিক্ষা মিশনের বর্ধমান জেলা আধিকারিক ভাস্কর পালের অভিযোগ, “রেল কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও রেল ওই স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। এমনকী পানীয় জলের সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি অচিন্ত্য চক্রবর্তী জানান, এর আগে দুর্গাপুরে একই সমস্যা হয়েছিল। তখন রেলের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানো হয়েছিল। তাঁর আশ্বাস, “এ ক্ষেত্রেও রেলের সঙ্গে কথা বলেই সমস্যা মেটানো হবে।

কিন্তু নিজেদের কর্মীদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য তৈরি করা স্কুল কেন বন্ধ করতে চাইছে রেল? পূর্ব রেলের এক কর্তা বলেন, ওই স্কুলটি শিক্ষা দফতর অনুমোদিত হলেও রেলের নিজস্ব স্কুল নয়। স্কুলটিতে বর্তমানে রেলকর্মীর সন্তানরা পড়ে না বললেই চলে। এছাড়া কাটোয়াকে ঘিরে রেলের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে ওই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মুখ দেখবে। সে জন্যই স্কুলটিকে অন্যত্র তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “স্কুলটিতে পানীয় জলের সংযোগের জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।” তবে বিষয়টি সমাধানের জন্য কাটোয়া পুরসভা ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছে। শুক্রবার কাটোয়ার পুরপ্রধান শুভ্রা রায় বলেন, “ওই স্কুল লাগোয়া কাছাকাছি এলাকায় পুরসভা একটা জায়গা কিনেছে। সেখানে ওই স্কুলের নতুন ভবন গড়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rail land eastern railway primary school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE