আসানসোল মহকুমা জুড়ে নানা রাস্তার হাল এখন এমনই। —নিজস্ব চিত্র।
শহরের চারদিকে নতুন ধাঁচের ঝকঝকে আবাসন, শপিং মল। কিন্তু সেই শহরেই রাস্তায় চলতে গেলে হোঁচট খাওয়া দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে বাসিন্দাদের কাছে। ঘটছে দুর্ঘটনাও। মহকুমা ও পুরসভার উদাসীনতা, সংস্কারের অভাব-সহ একাধিক কারণে আসানসোলের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলির হাল অত্যন্ত খারাপ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভা বা মহকুমা প্রশাসনকে বারবার সংস্কারের দাবি জানিয়ে শুধু আশ্বাস মিলেছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সব থেকে খারাপ অবস্থা বার্নপুর রোডের। ভগৎ সিং মোড় থেকে বানর্র্পুরের স্কব গেট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটির অবস্থা দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। অথচ শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা এই রাস্তার উপরেই রয়েছে একাধিক স্কুল ও সরকারি দফতর। আসানসোল পুলিশ লাইনও রয়েছে এই রাস্তার উপর। কিন্তু রাস্তাটির সর্বত্র পিচ উঠে গিয়ে অজস্র গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি পড়লে গর্তগুলিকে রাস্তার থেকে আলাদা করা যায় না। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে স্কুল-ছাত্রী শ্রেয়া বড়াল বলেন, “বর্ষাকালে প্রায় রোজই আমাদের স্কুল-বাসটা গর্তে পড়ে যায়।”
শুধু যান চলাচলই নয়, যাতায়াতের ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ভগত সিং মোড় থেকে উল্টো দিকে সামান্য এগোলেই সেনরেলে রোড। এই রাস্তা ধরেই আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশন, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ যেতে হয় পড়ুয়াদের। কিন্তু বেশ কয়েক বছর কোনও সংস্কার না হওয়ায় কন্যাপুর রেল টানেলের পর থেকে এই রাস্তাটির অবস্থাও শোচনীয়। টানেলটির পাশে একটি বড় নালা রয়েছে। বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, অল্প বৃষ্টিতেই নালার জল রাস্তায় উঠে আসে। তাছাড়া ক্রমাগত ডাম্পার চলাচল করায় রাস্তার মাঝখানে তৈরি হয়েছে অজস্র গর্ত।
আসানসোল শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা এসবি গড়াই রোড। কিন্তু মহকুমা হাসপাতালের পর থেকে জিটি রোড পর্যন্ত অংশে গড়াই রোডের বেশিরভাগ জায়গায় সংস্কারের অভাবে ভেঙে গেছে। মহিশীলার খেজুর তলা সংলগ্ন রাস্তাগুলিও বর্ষায় ডুব দেয় হাঁটুজলে।
আসানসোল মহকুমা জুড়ে জিটি রোডের অবস্থাও বেশ খারাপ। কয়েকদিন আগে কুলটিতে জিটি রোড খুঁড়ে পাইপ লাইন বসানো হয়। কিন্তু পাইপ লাইনের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে মেরামত করা হয়নি রাস্তাটির। এর জেরে কুলটিতে জিটি রোডটি দু’ধার বরাবর ভেঙে যাচ্ছে। লছিপুর এলাকাতেও জিটি রোডের হাল বেশ খারাপ। এ ছাড়া ধেমোমেনের রেল ইয়ার্ড সংলগ্ন অঞ্চলেও জিটি রোড ভাঙতে শুরু করেছে।
রাস্তাগুলির এই রকম হাল হওয়ায় যান চলাচলের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। ফলে মার খাচ্ছে শিল্পাঞ্চলের অর্থনীতি। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, “নাগরিক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বলেই বাস চালানো বন্ধ করতে পারছি না। আবার বেহাল রাস্তায় বাস চালাতেও ভরসা পাচ্ছি না।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে বর্ষায় রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করা যাবে না। কিন্তু যে রাস্তাগুলির সংস্কার হয়ে গিয়েছে, সেগুলি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। দীর্ঘ ৪ বছর পরে সংস্কার হয়েছে আসানসোল থেকে নিয়ামতপুর হয়ে চিত্তরঞ্জন যাওয়ার রাস্তাটির। কিন্তু দেন্দুয়া এলাকাতে রাস্তার কোনও কাজ হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। এই রাস্তারই সালানপুর সংলগ্ন অংশে ফের একাধিক বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যদিও আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া মহকুমার সব রাস্তা ইতিমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। বর্ষার জন্য কয়েকটি রাস্তার সংস্কারের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy