Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শক্তিগড়ে দুর্ঘটনায় মৃত ৩

গভীর রাতে জাতীয় সড়কে যে বালি বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে, তা আগে বুঝতে পারেননি চালক। যখন বোঝেন, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। সোজা ট্রাকের পিছনে গিয়ে আছড়ে পড়ে গাড়িটি। ন’জন যাত্রীর মধ্যে চালক-সহ তিন জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাকিরা হাসপাতালে। কলকাতা থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুর ছুঁয়ে দিল্লির দিকে চলে যাওয়া ২ নম্বর জাতীয় সড়কে এই ঘটনা নতুন নয়। রাস্তার ধার ঘেঁষে দাঁড় করানো থাকে বালির ট্রাক।

শক্তিগড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার পরে ছবিটি তুলেছেন উদিত সিংহ।

শক্তিগড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার পরে ছবিটি তুলেছেন উদিত সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০১:০৬
Share: Save:

গভীর রাতে জাতীয় সড়কে যে বালি বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে, তা আগে বুঝতে পারেননি চালক। যখন বোঝেন, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। সোজা ট্রাকের পিছনে গিয়ে আছড়ে পড়ে গাড়িটি। ন’জন যাত্রীর মধ্যে চালক-সহ তিন জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাকিরা হাসপাতালে।
কলকাতা থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুর ছুঁয়ে দিল্লির দিকে চলে যাওয়া ২ নম্বর জাতীয় সড়কে এই ঘটনা নতুন নয়। রাস্তার ধার ঘেঁষে দাঁড় করানো থাকে বালির ট্রাক। নিয়মিত যাঁরা গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করেন, তাঁরা সতর্কই থাকেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না, তাঁরা বিপদে পড়ে যান।
বুধবার গভীর রাতে বিহার থেকে কলকাতায় ফিরছিল গাড়িটি। যাত্রীরা একই পরিবারের। বাড়ি নিউটাউনের হাতিয়ারায়। পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন শেখ সাবির (৩৫), তাঁর স্ত্রী নাজিমা খাতুন (৩০) এবং শ্যালক রমজান মণ্ডল (২৮)। আশ্চর্যজনক ভাবে, সাবির-নাজিমার ন’বছরের ছেলে শাহিল শেখ প্রায় অক্ষত। তিন জন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রমজানের বাবা ইশাক মহম্মদ বিহারের মুজাফ্ফরপুরে গত মঙ্গলবার মারা গিয়েছেন। খবর পেয়ে রমজান তাঁর মা কাটুন বিবি ও অন্য আত্মীয়দের নিয়ে সেখানে যান। গোরে মাটি দিয়ে ফেরার সময়ে পেশাদার গাড়িচালক সাবির বর্ধমানের গলসি পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে আসেন। গলসির একটি ধাবায় রাতের খাওয়া সারেন তাঁরা। তার পরে চালকের আসনে বসেন রমজান। তিনি নিউটাউনে নিজের এলাকায় গাড়ি চালালেও পেশাদার নন। গাড়িতে ছিলেন সাবিরের বাবা মহম্মদ করিমও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “সবে মাত্র ঘুম এসেছে। এমন সময় খুব জোরে আওয়াজ। গাড়িটা উল্টে গেল। আর কিছু মনে নেই।”

শক্তিগড় এমনিতেই ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ’ এলাকা বলে চিহ্নিত। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে রাস্তার দু’ধারে বোর্ড দিয়ে লেখা আছে ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা, গাড়ি আস্তে চালান।’ গত পাঁচ মাসে ওই এলাকায় অন্তত ৪০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ন’জন মারা গিয়েছেন। এ বারের দুর্ঘটনাটি ঘটে জোতরামের হাটতলার কাছে একটি নার্সিংহোমের কাছে। শক্তিগড় ফাঁড়ির পুলিশ জানিয়েছে, গলসির শিল্লাঘাট থেকে হুগলি যাওয়ার পথে বালি ভর্তি ট্রাকের চাকা ফেটে গিয়েছিল। তাই সেটি রাস্তার ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ে। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) কার্তিক মণ্ডল বলেন, “ট্রাককে পাশ কাটাতে গিয়ে গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে।”

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠায়। দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও কাটুন বিবি-সহ তিন জনকে ভর্তি করানো হয়েছে। মৃতদেহগুলিও ময়না-তদন্তের জন্য সেখানেই পাঠানো হয়েছিল। বর্ধমান মেডিক্যালের সামনে দাঁড়িয়ে মহম্মদ করিম বলেন, “শেষকৃত্য সেরে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় নিজেরাই শেষ হয়ে গেল। এখনও সব কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman road accident bus Durgapur Bihar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE