দুর্গাপুরের সৃজনী পেক্ষাগৃহে চলছে সিটু-র জেলা সম্মেলন।—নিজস্ব চিত্র।
মানুষ এখনও পাশে রয়েছেন, কিন্তু নতুন মুখ না থাকায় উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব দেখা দিচ্ছে-- গত বেশ কয়েক বছর ধরে সিপিএমের অভ্যন্তরে জোরাল হয়ে ওঠা এই ‘আত্ম সমালোচনার’ পথকেই সমর্থন করল বর্ধমান জেলা সিটু। সোমবার দুর্গাপুরের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে শুরু হওয়া সিটু-র জেলা সম্মেলনে যোগ দিতে এসে প্রতিনিধিদের একাংশ দাবি তোলেন, প্রকৃত শ্রমিকদের নেতৃত্বের সামনের সারিতে আনতে হবে।
সম্প্রতি ‘শিল্পের জন্য হাঁটুন’ শীষর্ক সিটু-র পদযাত্রায় মানুষের যোগ দান উৎসাহিত করেছে নেতৃত্বকে। রাজ্যে পালাবদলের পরেও সিপিএমের গণ সংগঠনগুলির মধ্যে সিটু এখনও পর্যন্ত তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে বলে নেতৃত্বের দাবি। কিন্তু শিল্পাঞ্চলের কলকারখানায় শাসক দলের একাধিক জুলুমের অভিযোগ ওঠার পরেও তা নিয়ে সে ভাবে সরব হতে পারেনি সিটু। কারণ হিসাবে সিটু-র প্রতিনিধিদের একাংশের অভিযোগ, উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবেই আন্দোলন দানা বাঁধছে না। প্রসঙ্গত রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার সময় কলকারখানায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সিটুর। অতীতে হারাধন রায়, মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়, বিকাশ চৌধুরীর মতো শ্রমিক নেতৃত্বের কারণেই শিল্পাঞ্চলে জোরদার সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছিল সিটু। কিন্তু এখন শিল্পাঞ্চলে একের পর এক নির্বচনে বামফ্রন্টের পরাজয়ের পরে, শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের ঘর গোছানোর জন্য নেতৃত্বের তরফে তেমন সক্রিয়তা দেখা যায়নি বলেই সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রতিনিধিদের একাংশের অভিযোগ।
দিন কয়েক আগে শেষ হওয়া সিপিএমের জেলা সম্মেলনেও দাবি ওঠে নেতৃত্বে নতুন মুখ না আনতে পারলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। দুর্গাপুর, বিশেষ করে বর্ধমান পুরভোটে শাসক দলের সন্ত্রাসের সামনে সিপিএম যে ভাবে আত্মসমর্পণ করে তারও সমালোচনা করা হয় সম্মেলনে। সামনেই ২০১৬-র বিধানসভা ও তার পরের বছর দুর্গাপুর পুর নির্বাচন। তার আগেই পরিস্থিতি সামাল দিতে সিপিএম জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়েন মোট ১৩ জন। আনা হয় তুলনায় বয়সে কম নেতৃত্বকে। একই ভাবে সিটু-র বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের জায়গাতেও নতুন কাউকে আনার সিদ্ধান্তও প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছে বলেই খবর। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন এক সাংসদ ও দলের এক বর্তমান বিধায়কের নাম সিটু মহলে ঘোরাফেরা করছে। যদিও পাল্লা ভারি প্রথম জনের দিকে বলেই খবর। আজ, মঙ্গলবার সম্মেলনের শেষদিনে তা চূড়ান্ত হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা স্তরের এক সিটু নেতা বলেন, “সময় এসেছে শাসকদলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করার। সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে।”
সিপিএমের জেলা কমিটি থেকে দুর্গাপুরের যে ৫ নেতা বাদ পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন সিটুর জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অজিত মুখোপাধ্যায়। বয়সজনিত ও নিস্ক্রীয়তা -- মূলত এই দুই কারণেই তাঁকে বাদ পড়তে হয় বলে সিপিএম সূত্রে খবর। সিটু সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার সরে যাবেন অজিতবাবু। জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তীও সংগঠনে নতুন মুখের পক্ষে সওয়াল করে বলেন, “আমাদের একটা বড় অংশই মনে করছে নেতৃত্ব বদলের সিদ্ধান্তে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। প্রজন্মগত ফারাক তৈরি হয়েছে। নেতৃত্বে শ্রমিকদের যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব থাকলে, তবেই আন্দোলন গতি পাবে।” তবে দাবি উঠলেও বাস্তবে কতখানি ‘মুখ’ বদল হচ্ছে তার জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে আজ, মঙ্গলবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy