শ্রদ্ধায়: কাঁকসার মনেরকোঁদা গ্রামে আদিবাসীদের পুজোর জন্য শালগাছের গোড়া পরিষ্কার করা হচ্ছে।নিজস্ব চিত্র
গাছ কেটে চলছে কাঠ পাচার। কখনও বা তা ব্যবহার করা হচ্ছে জ্বালানির কাজে। এই পরিস্থিতিতে দেখা মেলে না বন্যপ্রাণীদের। বাঁধনা পরবের শেষ দিনে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আসানসোলের নানা এলাকার সাঁওতালরা। তাঁদের অভিযোগ, বন্যপ্রাণ এবং জঙ্গল বাঁচাতে যথেষ্ট সক্রিয় নয় প্রশাসন।
আজ, রবিবার, মকর সংক্রান্তি। সাঁওতালরাও তাঁদের ‘পরব’ (‘সাকরাত’) পালন করেন এ দিন। রয়েছে ‘শিকার উৎসব’-এর (সেন্দরা) রীতিও। কিন্তু এ দিনই সাঁওতালপাড়ার প্রবীণদের আক্ষেপ, অতীতে বহু ধরনের প্রাণী ও পাখির দেখা মিলত এই শিল্পাঞ্চল তথা ছোটনাগপুর মালভূমি এলাকায়। জীবনধারণের জন্য এক সময় শিকারও করতে হতো। কিন্তু এখন নামেই ‘শিকার’। সরকারি নির্দেশে বর্তমানে বন্যপ্রাণ হত্যা প্রায় হয় না বলেই দাবি করেন সাঁওতালপাড়ার বাসিন্দারা। তবে জঙ্গল সাফ হওয়া নিয়ে তাঁরা ক্ষুব্ধ।
সাঁওতালি সমাজের সংগঠন মাঝি মাপাদি মারোয়ার সালানপুর-বারাবনি ব্লকের অন্যতম নেতা লক্ষীরাম টুডুর ক্ষোভ, ‘‘মালভূমির বিস্তীর্ণ এলাকায় জঙ্গল কেটে বসত তৈরি হয়েছে। এমনকী ছোটবড় টিলা, পাহাড়ের জঙ্গলও কেটে নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। চলছে কাঠ পাচার। ফলে বন্যপ্রাণীরাও আর থাকছে না এই এলাকায়।’’ তিনি জানান, তিন-চার দশক আগেও নানা বনাঞ্চলে যথেষ্ট সংখ্যায় ময়ূর, খরগোস, মাইথনের ছোটছোট টিলাগুলিতে সজারুর দেখা মিলত। কিন্তু এখন সে সব আর নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী চিত্তরঞ্জনের কানগুই পাহাড়, মাইথনের বরাকর নদ লাগোয়া বাথানবাড়ি, সিদাবাড়িতে এক সময় গভীর জঙ্গল ছিল। এখনও জঙ্গল কিছুটা থাকলেও সেগুন-সহ নানা দামী কাঠের লোভে জঙ্গল-সাফ চলছে বলে অভিযোগ সাঁওতালদের।
হিরাপুরের দামোদর নদ লাগোয়া হারামডিহি, শ্যামডিহি ও ডিহিকা লাগোয়া গভীর শাল-পলাশের জঙ্গলেও ‘শিকার উৎসব’ হয়। শিকার বলতে প্রধানত মেঠো ইঁদুর, জানান বাথানবাড়ি এলাকার আদিবাসী গ্রামের মোড়ল বিদ্যুৎ মারান্ডি। মাঝি মাপাদি মারোয়া সংগঠনের আসানসোল মহকুমা কমিটির সদস্য হীরালাল সোরেনের দাবি, ‘‘সরকার বন্যপ্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করেছে। তাই শিকারে গিয়ে আমাদের বেশির ভাগ লোকজনই এ বিষয়ে সতর্ক থাকেন।’’ কিন্তু অভিযোগ, শিকার প্রায় বন্ধ হলেও দুষ্কৃতীদের নজর থেকে বাঁচতে পারেনি জঙ্গল। তাঁরা জানান, জঙ্গল সাফ করে সেগুন-সহ নানা কাঠ পাচার করে দেওয়া হচ্ছে নানা এলাকার চেরাই মিলে। অনেকে আবার জ্বালানি সংগ্রহ করতেও কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গাঠ কেটে চলেছেন।
‘জাহের থানে’ তির ছোঁড়ার প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নিতে নিতেই এক প্রবীণের আক্ষেপ, ‘‘আমরা সচেতন। কিন্তু প্রশাসন আর এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর কারণে জঙ্গল নষ্ট হচ্ছে।’’ এর ফলে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্যও বিঘ্ন ঘটছে বলে অভিযোগ স্থানীয় পরিবেশকর্মীদের।
যদিও দুর্গাপুরের জেলা বন আধিকারিক মিলনকান্তি মণ্ডল বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণ ও জঙ্গল রক্ষার বিষয়ে আমাদের আধিকারিক ও কর্মীরা নিয়মিত নজরদারি চালান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy