Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফের প্রশ্ন বিভ্রাট, এ বার সংস্কৃতে

গত কয়েক বছর ধরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের ফল-বিভ্রাটের আতঙ্ক ছিল। এ বছর থেকে যেন ভর করেছে প্রশ্ন-বিভ্রাটের জুজু! চলতি মাসেই আইনের স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় অর্থনীতি ও সোশিওলজির প্রশ্ন এক থাকায় সোশিওলজি পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

গত কয়েক বছর ধরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের ফল-বিভ্রাটের আতঙ্ক ছিল। এ বছর থেকে যেন ভর করেছে প্রশ্ন-বিভ্রাটের জুজু!

চলতি মাসেই আইনের স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় অর্থনীতি ও সোশিওলজির প্রশ্ন এক থাকায় সোশিওলজি পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছিল। সোমবার সংস্কৃতের স্নাতকোত্তর স্তরের ‘স্পেশ্যাল পেপার’ ব্যাকরণ বিভাগের বাক্যপদীয় (পেপার নম্বর: ৩০৩) ও শ্রীপ্রত্যয় (পেপার নম্বর: ৩০৪)-র প্রশ্ন এক থাকায় দু’টি পরীক্ষাই বাতিল করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই পরীক্ষা দুটি নেওয়া হবে যথাক্রমে ১৫ ও ১৭ মার্চ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিমাই সাহা এ দিন দুপুরে পরীক্ষা নিয়ামক, সংস্কৃত বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক সূত্রেই জানা যায়, গত শুক্রবার স্নাতকোত্তর স্তরের সংস্কৃত তৃতীয় সেমেস্টারের নতুন সিলেবাসের ‘স্পেশ্যাল পেপার’ ব্যাকরণ বিভাগের বাক্যপদীয় পরীক্ষা ছিল। কিন্তু তার বদলে প্রশ্ন করা হয় শ্রীপ্রত্যয় ও আত্মনেপদ বই থেকে। এ নিয়ে হইচই হতে ইউনিট একের ২০ নম্বরের প্রশ্ন মুখে বলে দেন ওই বিভাগের অধ্যাপিকা সত্যবতী বন্দ্যোপাধ্যায়। পনেরো জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কয়েকজন বলেন, “অন্য পেপারের প্রশ্ন চলে আসায় আমাদের আলাদা ঘরে অপেক্ষা করতে বলা হয়। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে অধ্যাপিকা আমাদের বলেন, ‘তোমরা তো কম পরীক্ষার্থী, আমি ২০ নম্বরের প্রশ্ন মুখে বলে দিচ্ছি, ওই প্রশ্নের পাশে লিখে নাও’। আমরা মুখে বলে দেওয়া প্রশ্নেই উত্তর লিখি।”

এ দিন ছিল ৩০৪ নম্বর পেপারের পরীক্ষা (শ্রীপ্রত্যয় ও আত্মনেপদ)। বেলা ১২টা থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা হলেও ঘণ্টাখানেক কেটে যাওয়ার পরেও প্রশ্ন না পেয়ে ১৫ জন পরীক্ষার্থী অধৈর্য হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসা করতেই সংস্কৃত বিভাগ থেকে বলা হয়, বাক্যপদীয় পরীক্ষায় যে যে প্রশ্ন এসেছিল, শ্রীপ্রত্যয় ও আত্মনেপদেও সেই প্রশ্ন এসেছে। অর্থাৎ ফাঁস হওয়া প্রশ্নতেই পরীক্ষা দিত পরীক্ষার্থী। তাঁদের হাতে প্রশ্ন যাওয়ার আগেই বিষয়টি ধরে ফেলেন ওই অধ্যাপিকা। খবর দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক দফতরে। গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে ছুটে যান পরীক্ষা নিয়ামক রাজীব মুখোপাধ্যায়-সহ অন্য আধিকারিকরা। রাজীববাবুর কথায়, “শুক্রবারে প্রশ্নপত্রে গোলমাল হয়েছে আমরা তো জানতামই না। তার উপর আমাদের না জানিয়েই মুখে মুখে প্রশ্ন বলা হয়েছে, এ ভেবেই অবাক লাগছে। ওই বিভাগকে সম্পূর্ণ রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।”

পরীক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে একের পর এক ঘটনায় বেশ বিরক্ত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য। এ দিনের বৈঠকে তিনি পরীক্ষা নিয়ামক দফতর ও সংস্কৃত বিভাগের কর্তাদের বকাবকি করেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। শেষমেষ দু’টি পরীক্ষাই বাতিল করে দেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য। তিনি বলেন, “একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন এমন হল, তা ওই কমিটি খুঁজে দেখবে।”

গত ৪ ফেব্রুয়ারি আইনের স্নাতক পরীক্ষায় সোশিওলজির প্রশ্নে অর্থনীতির প্রশ্ন হুবহু এক হয়েছিল। তখনও পরীক্ষা বাতিল করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামীকাল, বুধবার সেই পরীক্ষা নেওয়া হবে। তার আগে বিএডের একটি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। একের পর এক প্রশ্ন-বিভ্রাটের জেরে অস্বস্তিতে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ।

সংস্কৃত বিভাগের প্রধান ভাস্করজ্যোতি ঘোষাল এখন ছুটিতে আছেন। তিনি বলেন, “বড় গোলমাল হয়নি বলেই শুনেছি।’’ পরীক্ষা নিয়ামক রাজীব মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন-বিভ্রাটে তাঁদের দফতরের কোনও ভূমিকা নেই বলে জানান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক নন্দীর কথায়, “বারবার কেন এই ঘটনা ঘটছে তা খুঁজে বের করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।” এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষালের টিপ্পনি, “বিভ্রাট আর বিশ্ববিদ্যালয় যেন সমার্থক হয়ে যাচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sanskrit Question Paper
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE