Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
অভিযোগ কাটোয়ায়

রাত নামলেই হাসপাতাল চত্বরে দুষ্কর্ম

অন্ধকার নামলেই কাটোয়া হাসপাতাল চত্বর নিরাপদ থাকে না, অভিযোগ অনেক রোগীর পরিজনদের। চুরি-ছিনতাই থেকে অশালীন আচরণ, নানা দুষ্কর্মের শিকার হতে হয় মাঝে-মধ্যেই, অভিযোগ তাঁদের।

এই ঘরে পরিজনদের থাকতে দেওয়া নিয়েও উঠেছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

এই ঘরে পরিজনদের থাকতে দেওয়া নিয়েও উঠেছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১৭
Share: Save:

কারও হাসপাতাল থেকে বাড়ি দূরে। কারও আবার রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। নানা কারণে রাতে হাসপাতাল চত্বরেই থেকে যেতে হয় পরিজনদের। কিন্তু অন্ধকার নামলেই কাটোয়া হাসপাতাল চত্বর নিরাপদ থাকে না, অভিযোগ অনেক রোগীর পরিজনদের। চুরি-ছিনতাই থেকে অশালীন আচরণ, নানা দুষ্কর্মের শিকার হতে হয় মাঝে-মধ্যেই, অভিযোগ তাঁদের।

রোগীর পরিজনদের বিশ্রামের জন্য আপতকালীন বিভাগের উল্টো দিকেই দোতলা বিশ্রামাগার রয়েছে। সেই ভবনের একতলায় পুরুষ ও দোতলায় মহিলারা থাকতে পারেন। সে জন্য মাথা পিছু ২০ টাকা দিতে হয়। গত বছর মার্চে বিশ্রামাগারটি চালানোর জন্য এক বছরের ঠিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে নিরপত্তার কোনও বন্দোবস্ত হয়নি। অভিযোগ, গত সপ্তাহে এক দিন রাতে এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক বিশ্রামাগারে এক রোগীর পরিজনের সঙ্গে অভব্যতা করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে বহিরাগত নানা গাড়ির চালকদের আড্ডাখানায় পরিণত হয় হাসপাতাল চত্বর। রাত বাড়লে নেশাগ্রস্তদেরও ভিড় জমে হাসপাতালের মাঠে। রাতে মহিলাদের উত্ত্যক্ত করা হয় বলে অভিযোগ। কেতুগ্রামের পালিটার এক রোগীর আত্মীয় বলেন, ‘‘রাত ৮টার পর থেকে বিশ্রামাগার ছেড়ে নামলেই যেন বিপদ। নেশাগ্রস্ত অনেকে কটূক্তি করে।’’

হাপাতালের মূল তিনটি প্রবেশপথ ছাড়াও আরও ছ’টি ছোট রাস্তা রয়েছ। তার মধ্যে মাস্টারপাড়ার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক লাগোয়া ছোট প্রবেশপথটি সম্প্রতি বন্ধ করে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে মাস্টারপাড়ার ক্লাব লাগোয়া গলি, মর্গের সামনের গলি-সহ পাঁচটি ছোট পথ এখনও খোলা রয়েছে। রাত বাড়লেই সেখান দিয়ে বহিরাগতেরা ঢুকে যত্রতত্র নেশার আসর বসাচ্ছে বলে অভিযোগ।

সমস্যা রয়েছে সাংসদ তহবিলে টাকায় বছর দুয়েক আগে তৈরি ঘরটি নিয়েও। ৫০০ বর্গফুটের ওই একতলা ঘরটি আগে সন্ধ্যার পরে বন্ধ থাকত। তবে জানুয়ারির শেষ দিকে হাসপাতাল পরিদর্শন করে বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল রোগীর আত্মীয়দের জন্য ওই ঘরটি রাতে খুলে দিতে বলেন। ন্যূনতম টাকায় সেখানে রোগীর পরিজনদের রাতে থাকতে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় এক জনকে। কিন্তু আদতে কারও কাছে ১০ টাতা, কারও কাছে ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই ঘরটিতে থাকতে দেওয়ার জন্য আদৌ টাকা নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সমিতিতে কোনও আলোচনা হয়নি। সাংসদের মৌখিক নির্দেশেই তা চলছে।’’ একই কথা জানান মহকুমাশাসক সৌমেন পালও। সাংসদ সুনীলবাবু বলেন, ‘‘রোগীদের সুবিধার্থেই ঘর চালু রাখতে বলি। বিষয়টি খতিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখুন।’’

হাসপাতালের সুপার রতন শাসমলকে শনিবার ফোনে বারবার করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে নিরাপত্তা বাড়াতে সিসি ক্যামেরা বসানো-সহ বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।’’ পূর্ত দফতরের কাটোয়ার সহকারী ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পাঁচটি খোলা পথ বন্ধের জন্য রিভলভিং গেট লাগানো হবে। তাতে যানবাহন ও গবাদি পশুও হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতে পারবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE