Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
দাবি দলেই

বিরোধী-স্বরে সিঁদুরে মেঘ দেখেন নরেন

নানা রকম কাজকর্মের বিরোধিতা আসছিল দলের ভেতর থেকেই। দলীয় নেতৃত্বের কাছেও সরব হচ্ছিলেন অনেকে। দলে কোণঠাসা হতে শুরু করায় হয়তো নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নরেন চক্রবর্তী।

সুশান্ত বণিক
শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:০১
Share: Save:

নানা রকম কাজকর্মের বিরোধিতা আসছিল দলের ভেতর থেকেই। দলীয় নেতৃত্বের কাছেও সরব হচ্ছিলেন অনেকে। দলে কোণঠাসা হতে শুরু করায় হয়তো নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নরেন চক্রবর্তী। তাই নিজের কাছে তিনি আগ্নেয়াস্ত্র রেখে থাকতে পারেন বলে খনি-শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল এবং আইএনটিটিইউসি নেতা-কর্মীদের একাংশের দাবি।

ব্যাগে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে গত রবিবার কলকাতা বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন নরেনবাবু। গোটা ঘটনাটি নিয়ে জারি রয়েছে চাপান-উতোর। নরেনবাবুর পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, ষড়যন্ত্র করে দলের একাংশ ফাঁসিয়েছে তাঁকে। তৃণমূলের একাংশেরও ধারণা, নরেনবাবুকে নিয়ে দলের অন্দরে ‘যেমন টানাপড়েন’ শুরু হয়েছিল, তাতে এই ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।

কয়েক দিন আগেই পাণ্ডবেশ্বরের ডালুরবাঁধে আইএনটিটিইউসি-র একটি সম্মেলন হয়। সংগঠনের একটি সূত্রের দাবি, সেই সময়ে শীর্ষ নেতৃত্বকে হাতের কাছে পেয়ে অনেকেই নরেনবাবুর বিরুদ্ধে সরব হন। তাঁরা অভিযোগ করেন, সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে নানা অনৈতিক কাজ করছেন তিনি। তাঁকে অপসারণের দাবিও ওঠে।

আইএনটিটিইউসি-র এক নেতা দাবি করেন, ‘‘এমন অভিযোগ সামনে আসায় নরেনবাবু অস্বস্তিতে পড়েন। ঘনিষ্ঠ মহলে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কাও প্রকাশ করেন। ব্যক্তিগত রক্ষীর সংখ্যাও বাড়িয়েছিলেন।’’ এমনকী, তাঁকে নিজের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে দেখেছেন বলেও দাবি করেন জেলা পরিষদে নরেনের সহকর্মী কর্মাধ্যক্ষদের একাংশ। জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কার কথা নরেনবাবু রাজ্যের এক মন্ত্রীকেও জানিয়েছিলেন।

নরেনবাবুকে নিয়ে দল বা শ্রমিক সংগঠনের অন্দরে বিরোধী স্বর তৈরি হল কেন? তৃণমূলের এক শ্রমিক নেতার যুক্তি, খনি এলাকার নিয়ম, শ্রমিকদের উপরে আধিপত্য বাড়াতে পারলে আয় বাড়বে। সেই সঙ্গে এলাকাতেও প্রভাব বিস্তার করা যাবে। নরেনবাবুও সব সময় চেয়েছেন শ্রমিকদের উপরে প্রভাব তৈরি করতে। তাতেই সংঘাত তৈরি হয়েছে অন্য নানা নেতার সঙ্গে। কিন্তু সেই সঙ্গেই ওই নেতা জুড়ছেন, ‘‘শিল্পাঞ্চলের এক প্রভাবশালী নেতার হাত মাথায় থাকায় দলে নরেনের জায়গা পাকা ছিল।’’

তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা যায়, বছর দেড়েক ধরে পাণ্ডবেশ্বর এলাকায় বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা খোলা মুখ খনি থেকে কয়লা তুলছে। সেই সব খনির ঠিকা শ্রমিকদের নিয়ে সম্প্রতি ‘কয়লা খাদান ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়ন’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন নরেনবাবু। তার কার্যকরী সভাপতিও হন তিনি। যা একেবারে ভাল ভাবে নেননি আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেস’-এর নেতারা। এক নেতা বলেন, ‘‘নরেনের ওই সংগঠনটি দল অনুমোদিত নয়। অথচ, দলের নাম ভাঙিয়ে ওই সংগঠন দেখিয়ে যথেচ্ছ বেনিয়ম চলছে।’’

আইএনটিটিইউসি সূত্রের খবর, নরেনবাবুর বিরুদ্ধে ঠিকা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরির বেশ কিছুটা অংশ সংগঠনের তহবিল গড়ার নামে হাতিয়ে নেওয়া-সহ নানা অভিযোগ উঠেছে ডালুরবাঁধে ওই সম্মেলনে নেত্রী দোলা সেনের সামনে। এ সব করে পরোক্ষে শ্রমিক সংগঠনের ক্ষতি করার অভিযোগও তোলা হয়। দোলা সেন অবশ্য বলেন, ‘‘নরেন সংগঠনের সদস্য নন। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’’ যদিও ‘কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেস’-এর সম্পাদক হরেরাম সিংহ দাবি করেন, নরেনবাবু তাঁদের শ্রমিক সংগঠনের এক জন সক্রিয় সদস্য।

নরেনবাবুর পরিবার ও ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীরা অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় বেনিয়মের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কাছে কখনও কোনও আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল না বলেও তাঁদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE