Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
কাটোয়া মহকুমা

দুই স্তরই পুরোপুরি বিরোধীহীন

পঞ্চায়েত ভোট-প্রক্রিয়া নিয়ে আজ, শুক্রবার রায় দেবে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। তার আগে পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে কাটোয়ার গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে কোনও বিরোধী প্রার্থী নেই।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। ফাইল চিত্র

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। ফাইল চিত্র

সুচন্দ্রা দে
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৬
Share: Save:

একটা আস্ত মহকুমায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের দুই স্তরে এক জনও প্রার্থী নেই বিরোধী দলের! মহকুমার নাম কাটোয়া।

পঞ্চায়েত ভোট-প্রক্রিয়া নিয়ে আজ, শুক্রবার রায় দেবে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। তার আগে পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে কাটোয়ার গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে কোনও বিরোধী প্রার্থী নেই। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের সন্ত্রাস এর জন্য দায়ী। তৃণমূলের দাবি, বিরোধীদের প্রার্থী দাঁড় করানোর মতো সংগঠনই নেই।

প্রশাসন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই মহকুমার পাঁচটি পঞ্চায়েত সমিতির মোট ১৩৪টি আসনে এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩৫টি আসনের একটিতেও প্রার্থী দিতে পারেন বিরোধী দলগুলি। জেলা পরিষদের মাত্র দু’টি আসনে বিজেপি এবং তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল এসইউসি। তার মধ্যেও দু’জন প্রার্থী আদালতের নির্দেশে ভোট-প্রক্রিয়া স্থগিত করার অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশের আগেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে এখন যা পরিস্থিতি, আদালতের নির্দেশে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আর কোনও সুযোগ না থাকলে গোটা মহকুমা কার্যত বিরোধী-শূন্য হতে চলেছে। যে দু-একটি জায়গায় লড়াই হওয়ার মতো পরিস্থিতি, সেগুলিতে তৃণমূলেরই গোঁজ প্রার্থী রয়েছে। সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র দাবি, অতীতে কাটোয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে ভোটের আগেই এমন বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েত হয়নি।

কংগ্রেসের মহকুমা সম্পাদক শুভাশিস সামন্তের কথায়, ‘‘রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীনও হুমকি, মারধরের ঘটনা ঘটত। তার পরেও ১৯৯৮, ২০০৩, ২০০৮-র পঞ্চায়েত ভোটে কাটোয়া ১ ও ২ ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েত জিতেছিল কংগ্রেস।’’ একই মত সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের। ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটেও কাটোয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতি-সহ ওই ব্লকের চারটি ও কাটোয়া ২ ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত সিপিএম জিতেছিল। অঞ্জনবাবুর মন্তব্য, ‘‘আগে কখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যাতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যায়নি।’’

বিরোধীদের অভিযোগ, রাস্তায় যে ‘উন্নয়ন’ দাঁড় করিয়ে রেখে বীরভূমে ভোটের আগেই জেলা পরিষদ দখল করেছে তৃণমূল, প্রায় সে রকম সূত্রই কাজ করেছে কাটোয়া মহকুমার নানা জায়গায়। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তিন দিন আগে থেকে খাজুরডিহি, হরিপুর, গীধগ্রাম, সরগ্রাম, শ্রীখণ্ড-সহ নানা এলাকায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে শাসক দলের মুখ ঢাকা মোটরবাইক বাহিনীকে। বাহিনীর ভয়ে বিরোধীরা যাতে পথেই না বেরোতে পারে, তার জন্য এই ব্যবস্থা বলেই দাবি করেছে বিরোধী শিবির। এ ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনে ‘বিশেষ পাহারা’-র জন্য রাখা হয় কিছু লোকজনকে। কাটোয়া মহকুমাশাসকের দফতরের যাদের সঙ্গেই দফায় দফায় গোলমাল হতে দেখা যায়।

তবে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, আসলে এই মহকুমায় প্রার্থী দাঁড় করানোর মতো আর সংগঠনই নেই বিরোধীদের। অথচ ঘটনা হল, ২০১৬ বিধানসভা ভোটেও কাটোয়া ১ ব্লকের খাজুরডিহি, করোজগ্রাম এবং কাটোয়া ২ ব্লকের শ্রীবাটি, কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সব কটি পঞ্চায়েতেই এগিয়েছিল কংগ্রেস-সিপিএম জোট। ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে কেতুগ্রাম ২-র পাঁচটি পঞ্চায়েতে জেতে সিপিএম। তা হলে আচমকা সংগঠন ভেঙে গেল কী ভাবে? শাসক দলের এক নেতার কথায়, ‘‘সরকারের উন্নয়ন দেখেই বিরোধীদের পাশে প্রার্থী হওয়ার মতো আর কেউ নেই।’’ কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘কেউ মনোনয়ন দিতে না এলে আমরা কী করব! জেলা পরিষদের মনোনয়ন তো নির্বিঘ্নেই দিয়েছিলেন বিরোধীরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE