Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

গণ্ডগোল ছাড়া মিটল ফের-ভোট

কৌতূহলী হয়ে বুথে উঁকি মারতে চোখে প়়ড়ল, এক যুবকের সামনেই ভোটারদের প্রতীক চিহ্নে ছাপ মারতে হচ্ছে। 

প্রতিবাদ: চলছে পথ অবরোধ, বুধবার মেমারির আমাদপুর মোড়ে। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী

প্রতিবাদ: চলছে পথ অবরোধ, বুধবার মেমারির আমাদপুর মোড়ে। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী

সৌমেন দত্ত  ও কেদারনাথ ভট্টাচার্য
মেমারি ও পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০৩:২৩
Share: Save:

মেমারির চাকনাড়া গ্রাম। বুধবার সকাল। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের বুথ থেকে কিছুটা দূরে কাগজের ঠোঙায় মুড়ি চিবোচ্ছিলেন এলাকার জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী মহম্মদ ইসমাইল। মোটরবাইক নিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়াতেই বললেন, “বেশিক্ষণ দাঁড়ানোর দরকার নেই। বুথে গিয়ে দেখবেন, সব স্বাভাবিক।”

বুথে যাওয়া হল। প্রাথমিক স্কুলের বাইরে পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক লাইন। অনেক ভোটার দাঁড়িয়ে। বাইরে প্রচুর পুলিশও। ভোটদানে ‘অস্বাভাবিকত্ব’ কিছু আছে কিনা, বোঝার উপায় নেই। তবে, বুথের ভিতর থেকে বেরনোর সময় দুই মহিলা গজগজ করলেন, “আগে বলে দিলেই হত, ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করতাম না।” কৌতূহলী হয়ে বুথে উঁকি মারতে চোখে প়়ড়ল, এক যুবকের সামনেই ভোটারদের প্রতীক চিহ্নে ছাপ মারতে হচ্ছে।

সোমবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন এই চাকনাড়া-সহ জেলার ১৭টি বুথে ‘বেনিয়ম’ হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে ওই বুথগুলিতে পুনর্নির্বাচন হয়েছে। সিপিএম ও বিজেপির অভিযোগ, এ দিনও ভোট ‘অবাধ’ হল না। সকাল থেকে একাধিক বুথে বিরোধী প্রার্থীর এজেন্ট বসতে না দেওয়া কিংবা দুপুরের পরে বুথ দখল করে ‘ছাপ্পা’ মারার অভিযোগ উঠেছে। বর্ধমান ১ ব্লকের তালিত এবং ভাতারের ওড়গ্রামের দু’টি বুথেই বিরোধীদের কোনও এজেন্ট ছিল না।

মেমারির চাকনাড়া থেকে বেশ কিছুটা দূরে আমাদপুরের কেজা গ্রাম। সেখানকার প্রাথমিক স্কুলের দু’টি বুথে ভোট হয়েছে। ওই গ্রামে ঢোকার মুখেই কয়েক জন পথ আটকে একগুচ্ছ প্রশ্ন ছুড়ে দেন। সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে বুথের দিকে যাওয়ার ‘অনুমতি’ মিলল। দু’টি বুথের ভিতরেই কোনও ভোটার নেই। অথচ বাইরে ভিড়। প্রশ্ন করতেই এক যুবক বললেন, ‘‘সবই তো বুঝতে পারছেন। খামোকা সময় নষ্ট করে লাভ কী?’’ পরের গন্তব্য ছিল গোপগন্তার ১ পঞ্চায়েতের মণ্ডলজোনা গ্রাম। সেখানেও বুথ ফাঁকা। অথচ ভোটকর্মীরা জানালেন, বেলা ১২টার মধ্যে মোট ৫৪৮ ভোটারের অর্ধেকের নাকি ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে! এই বুথেই সোমবার কয়েক জন দুষ্কৃতী ঢুকে ‘ছাপ্পা’ দিচ্ছিল বলে স্থানীয়রা ব্যালট বাক্স থেকে ব্যালট পেপার জলে ফেলে দিয়েছিল।

মেমারি ১ ব্লকের সাতটি বুথে এ দিন পুনর্নির্বাচন হয়েছে। পূর্বস্থলী ২ ব্লকে এমন বুথ ছিল চারটি। ওই চার বুথেই কোথাও ব্যালট বাক্স পোড়ানো হয়েছিল, ব্যালট পেপার লুট হয়েছিল, কোথাও বুথ সংলগ্ন এলাকা শাসক-বিরোধী সংঘর্ষ দেখেছিল। বহিরাগতদের দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল। তবে, ভোটের দিন কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিল বিরোধীরা। এ দিন ছবিটা ছিল একেবারেই আলাদা। বুথের ভিতরে বাইরে মোতায়েন ছিল প্রচুর পুলিশ। পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকের জন্য নিযুক্ত কমিশনের পর্যবেক্ষকও বুথগুলি ঘুরে গিয়েছেন। ফলে, ভোটাররা শান্তিতেই ভোট দিতে পেরেছেন। বিরোধী শিবিরের কাউকে অবশ্য বুথের আশেপাশে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বুথের বাইরে বরং চোখে পড়েছে শুধুই শাসক দলের পরিচিত নেতা-কর্মীদের। এ দিনও বুথগুলিতে ছাপ্পা হয়েছে বলে সিপিএম-বিজেপি’র অভিযোগ।

এ দিন বারবার বৃষ্টির কারণে ভোট গ্রহণ বিঘ্নিত হয়েছে পূর্বস্থলীর ওই বুথগুলিতে। স্বরডাঙা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু’টি বুথ। সেখানে সকাল থেকেই বিদ্যুৎ নেই। মোমবাতির আলোয় ভোট নেওয়া শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ আসে দু’টি এমার্জেন্সি লাইট। অব্যবস্থার কারণে সকাল থেকে এই দুই বুথে ধীরগতিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে। প্রাণগোপাল দাস, নারায়ণ দাসদের ক্ষোভ, ‘‘আড়াই ঘণ্টার বেশি দাঁড়িয়ে।’’ শেষে তৃণমূল কর্মীরা ভোটারদের মধ্যে বিলি করেন মুড়ি চানাচুর।

গলসি-২ ব্লকের বাহিরঘন্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯৩ ও ৯৪ নম্বর বুথে ভোট চলাকালীন এক দল দুষ্কৃতী বুথে ঢুকে ভয় দেখিয়ে ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনিয়ে নিয়েছিল। এ দিন অবশ্য সেখানে শান্তিতেই ভোট হয়েছে।

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “সকাল থেকেই মারধর করে এজেন্টদের তুলে দেওয়া থেকে বুথ দখল করে ছাপ্পা—কোনওটাই বাদ যায়নি পুনর্নির্বাচনেও।” বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীরও অভিযোগ, “হার নিশ্চিত জেনে তৃণমূল রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়েছে।” মেমারি ১ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি মধুসূদন ভট্টাচার্য অবশ্য সমস্ত অভিযোগ-দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “আমাদের দিকে জনসমর্থন রয়েছে। দখল-টখল করতে যাব কেন? বিরোধীদের বলতে হয় তাই বলেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE