Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভিন্‌ রাজ্যে ছেলের মৃত্যু, সরব পরিবার

পরিবারের অভিযোগ, ওই ফোন আসার পরেই তাঁরা ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের দ্বারস্থ হন তাঁরা।

খণ্ডঘোষে শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

খণ্ডঘোষে শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১৪
Share: Save:

ভিন্‌ রাজ্য থেকে যে দিন ছেলের বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরার কথা, সে দিনই পৌঁছল তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর। রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতে যাওয়া বজরুল মল্লিকের (১৮) মৃত্যু নিয়ে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে খণ্ডঘোষের বেড়ুগ্রামের মোল্লাপাড়ায় তাঁর বাড়িতে যান বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ, জেলা পরিষদের সদস্য অপার্থিব ইসলাম-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই যুবক কয়েক মাস আগে বন্ধুদের মাধ্যমে তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের তিরুধুনাগারে নির্মাণকর্মীর কাজে গিয়েছিলেন। বুধবার বিকেলে মৃতের মা শাদিনা বিবির মোবাইলে ফোন করে জানানো হয়, তাঁর ছেলে কাজ করার সময়ে পাঁচ তলার বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে মারা গিয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ, ওই ফোন আসার পরেই তাঁরা ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের দ্বারস্থ হন তাঁরা।

এ দিন বিকেলে প্রশাসনিক কর্তারা বজরুলের বাড়িতে যান। তাঁদের কাছে মৃতের বাবা আমিন মল্লিক, দাদা রেজাউল মল্লিকেরা অভিযোগ করেন, বাড়ির ছোট ছেলেকে খুন করা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ঠিকাদার গোষ্ঠীর লোকেরা বজরুলকে বাড়ি আসতে দিচ্ছিল না। সে লুকিয়ে টিকিট কেটে রেখেছিল। বুধবার ট্রেনে চড়ার কথা ছিল। তখনই ফোন করে বজরুলের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়।’’ পড়শি মসিহুর রহমান দাবি করেন, ‘‘বজরুলের দেহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রামে ফিরিয়ে আনা ও দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করুক সরকার।’’

ছেলে খুন হয়েছে মনে করছেন কেন? পরিবারের সদস্যদের দাবি, মাসিক ১২ হাজার টাকার চুক্তিতে বজরুল তামিলনাড়ু গিয়েছিলেন। কিন্তু গত ৮-৯ মাসে কোনও পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি। খাবার-থাকার টাকা জোগাড়ের জন্য বিকেলের পরে দোকানে কাজ করছিলেন। মাসখানেক আগে দাদু মারা গেলেও বজরুলকে আসতে দেওয়া হয়নি। মসিহুর বলেন, ‘‘বজরুল কষ্টের কথা বাড়িতে জানালে ওর বাবা বাড়ি ফিরে আসতে বলেন। সে জন্য বজরুল লুকিয়ে ট্রেনের টিকিট কেটেছিল।’’ দাদা রেজাউল ও নজরুল মল্লিকদের দাবি, ‘‘বাড়ি আসার আগে টাকা-পয়সা চাওয়া নিয়ে বাদানুবাদ থেকেই ভাইকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে।’’ জেলা পরিষদের সদস্য অপার্থিব ইসলাম বলেন, ‘‘বজরুলের বন্ধুরা ফিরে এলে আসল ঘটনা সামনে আসবে।’’

এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) শৌভনিক মুখোপাধ্যায় জানান, তামিলনাড়ুর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিক ঠিকানা পরিবারের লোকজন জানাতে না পারায় ও ভাষাগত সমস্যার জন্য অসুবিধে হচ্ছে। যে নম্বর থেকে ফোন করে মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছিল, সেই নম্বরেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘একটি অ্যাম্বুল্যান্সে বজরুলের দেহ নিয়ে আসছেন তাঁর বন্ধুরা। ওখানে ময়না-তদন্তও হয়েছে। শনিবার সকালে ওঁরা পৌঁছনোর পরে ঠিক কী ঘটেছে জানা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Workers Dead
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE