Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আশ্রমে হাসি দুই দিদির ফোঁটায়

পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বারান্দা গ্রামে তার পরে প্রতি বছরই পরমানন্দ সেবাশ্রমে ভাইফোঁটা দিতে যান সুস্মিতা সরকার ও সোমা মালিক।

ফোঁটা: কেতুগ্রামের আশ্রমে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

ফোঁটা: কেতুগ্রামের আশ্রমে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

সুচন্দ্রা দে
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

ঘরে-ঘরে যখন ভাইফোঁটা হতো, মুখ কালো করে আশ্রমে বসে থাকত ওরা। কচি মুখগুলো দেখে মায়া হতো দুই কিশোরীর। বছর ছয়েক আগে এক ভাইফোঁটার দিনে ধান-দুর্বা, চন্দনের বাটি হাতে তারা পৌঁছে গিয়েছিলে ওই অনাথ আশ্রমে। হাসি ফুটেছিল ওই শিশু-কিশোরদের মুখে।

পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বারান্দা গ্রামে তার পরে প্রতি বছরই পরমানন্দ সেবাশ্রমে ভাইফোঁটা দিতে যান সুস্মিতা সরকার ও সোমা মালিক। এখন তাঁরা বছর একুশের তরুণী। শুধু ভাইফোঁটা নয়, আশ্রমের ছেলেদের সঙ্গে নানা উৎসবেও মেতে ওঠেন। সীমিত সামর্থ্যে তাঁদের নানা আবদারও মেটানোর চেষ্টা করেন স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ওই দুই ছাত্রী।

কেউ কাজ করত কোনও দোকানে, কেউ পড়ে থাকত স্টেশনে। শিশুকল্যাণ সমিতির (সিডব্লিউসি) উদ্ধার করা এমন বেশ কিছুর এখন আশ্রয় কেতুগ্রামের এই আশ্রম। প্রায় তিন বিঘা জমির উপরে এই আশ্রমটি পরিচালনা করে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ভাইফোঁটা কী, আগে জানত না এখানকার অনেকেই। এখন প্রত্যেক ভাইফোঁটার সকালে তারাই উপোস করে দুই দিদির অপেক্ষায় থাকে।

এ দিনও সকাল-সকাল আশ্রমে পৌঁছন দুই ছাত্রী। টিউশন করে বাঁচিয়ে রাখা টাকায় রসগোল্লা এনেছিলেন সোমা। একে-একে ৪৩ জন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেন তাঁরা। সেই ফাঁকেই জড়িয়ে ধরে কেউ আবদার করে, ‘‘দিদি রংমশাল, তুবড়ি কিনে দিতে হবে।’’ কেউ আবার বলে, ‘‘চকোলেট চাই।’’ মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের আদর করেন দুই দিদি। দুপুরে মাছ-ভাত খাওয়ার আয়োজন করেন আশ্রম কর্তৃপক্ষ।

সুস্মিতা কান্দরা রাধাকান্ত কুণ্ডু কলেজে পড়েন। সোমা বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজের ছাত্রী। সুস্মিতা প্রায়ই আশ্রমে এসে ছোটদের পড়াশোনায় সাহায্য করেন। বর্ধমানের মেসে থাকলেও ছুটিতে বাড়ি এলে আশ্রমে আসেন সোমাও। তাঁরা বলেন, ‘‘ছোট মুখগুলোয় হাসি দেখলে মন ভরে ওঠে। তাই এখানে আসি। ইচ্ছে করলেও ওদের জন্য বেশি কিছু আনতে পারি না। যখন নিয়মিত রোজগার করব, ওদের আরও ভাল উপহার দেব।’’

আশ্রমের তরফে ব্রহ্মচারী দেবব্রত বলেন, ‘‘মেয়ে দু’টো এখানকার বাচ্চাদের ভীষণ ভালবাসে। মা-বাবার স্নেহ না পেলেও দুই দিদির ভালবাসা তো পাচ্ছে ওরা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE