Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সৌজন্য না প্রায়শ্চিত্ত, তরজা সিপিএম-তৃণমূল

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার। ওই দিন বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ প্রত্যাহারের দাবিতে ডিপিএল কর্তৃপক্ষের কাছে ন’হাজার গ্রাহকের সই সম্বলিত স্মারকলিপি দিতে যান সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা।

হাসপাতালের পথে: বাঁ দিকে, বাম বিধায়কদের প্রতিনিধিদল। ডান দিকে, একই পথে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের পথে: বাঁ দিকে, বাম বিধায়কদের প্রতিনিধিদল। ডান দিকে, একই পথে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১১
Share: Save:

সিপিএম বিধায়ক ভর্তি হাসপাতালে। সোমবারই তাঁকে দেখতে আসার কথা ছিল সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বাম প্রতিনিধি দলের। কিন্তু তার খানিক আগেই যে দলের বিরুদ্ধে ‘মারধর’-এর অভিযোগ, সেই তৃণমূলেরই জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব হাসপাতালে গিয়ে দেখা করলেন দুর্গাপুর পূর্বের বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়ের সঙ্গে। এই ঘটনার পরে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এ সাক্ষাৎ নিছক ‘সৌজন্য’। উল্টো দিকে বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের প্রতিক্রিয়া, ‘এ আসলে পাপের প্রায়শ্চিত্ত।’

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার। ওই দিন বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ প্রত্যাহারের দাবিতে ডিপিএল কর্তৃপক্ষের কাছে ন’হাজার গ্রাহকের সই সম্বলিত স্মারকলিপি দিতে যান সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, সেই সময়ে লাঠি-রড হাতে তৃণমূলের কয়েক জন তাঁদের মারধর করে। আক্রান্ত হন সন্তোষবাবুও। মাথায় ও শিরদাঁড়ায় চোট পাওয়ায় বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় সন্তোষবাবুকে।

এর পরে সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ বিধাননগরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে যান তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন, কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়-সহ শাসক দলের নেতৃত্বরা। সঙ্গে ছিলেন ‘তৃণমূল ঘনিষ্ঠ’ বিশ্বনাথ পাড়িয়ালও। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সন্তোষবাবুর সঙ্গে দেখা করে দ্রুত ‘আরোগ্য কামনা’ করেন তৃণমল নেতৃত্ব। মিনিট দশ-পনেরো থাকার পরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান তৃণমূল নেতৃত্ব। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ছ’জনের বাম পরিষদীয় দল সন্তোষবাবুর সঙ্গে দেখা করেন। ছিলেন সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী, প্রাক্তন সাংসদ সাইদুল হক।

তৃণমূলের এই ‘সাক্ষাৎ’-এর খবর চাউর হতেই দুর্গাপুরবাসীর একাংশের মধ্যে শুরু হয় গুঞ্জন। তাঁদের দাবি, এএসপি বাঁচাতে বা দুর্গাপুরের নানা নাগরিক সমস্যা নিয়ে আন্দোলনের একেবারে প্রথম সারিতে দেখা গিয়েছে সন্তোষবাবুকে। সন্তোষবাবুর উপরে হামলার অভিযোগ তাই আখেরে দলের ভাবমূর্তির পক্ষে ঠিক নয় বলে মনে করছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তা ছাড়া দুর্গাপুরের নানা নাগরিক বিষয় নিয়েও বেশ কিছু দিন ধরেই মিছিল-মিটিং করে জমি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে সিপিএম। শহরবাসীর একাংশের দাবি, সিপিএমের এই আন্দোলনের ঝাঁঝ কমাতেই, এই ‘সাক্ষাৎ’।

যদিও বিষয়টিতে ‘রাজনীতি’ নেই বলেই দাবি তৃণমূলের। ভি শিবদাসনের দাবি, ‘‘এলাকার সিপিএম বিধায়ক হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকে দেখতে আসব না? এটা তো সৌজন্য।’’ কিন্তু মারধরের অভিযোগ তো তাঁর দলের বিরুদ্ধেই?— প্রশ্ন শুনে শিবদাসনের বক্তব্য, ‘‘দল এসব নোংরামি সমর্থন করে না। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক। এই ঘটনায় দলের কেউ যুক্ত থাকলে দলের নিয়ম মেনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

সুজনবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘এটা আসলে পাপের প্রায়শ্চিত্ত! ধরে নিচ্ছি, শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। আমরা সেই শুভবুদ্ধিকে স্বাগত জানাই। এ বার অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হোক। যদি সেটা না হয়, তা হলে জানব, রাজনীতির খেলা খেলছে তৃণমূল।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, শনিবারের পরে কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু তার পরেও কোনও অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়নি। সুজনবাবুর অভিযোগ, ‘‘আসলে এখনও নবান্ন থেকে নির্দেশ আসেনি কাকে গ্রেফতার করা হবে, কী কী অভিযোগ আনা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Santosh Debroy TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE