বাঁ দিকে, সেপকো টাউনশিপে আগাছা। ডান দিকে, রাস্তায় জমা জল। বিকাশ মশানের তোলা ছবি।
জ্বরে আক্রান্ত এক বৃদ্ধার মৃত্যুতে ফের ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল দুর্গাপুরে। শহরে অজানা জ্বরের প্রকোপ দেখা দিলেও অনেক এলাকায় এখনও সাফাইয়ের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। পুরসভার অবশ্য দাবি, ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই বৃদ্ধা যে এলাকার বাসিন্দা, সেই সেপকো টাউনশিপেও মশা মারার স্প্রে, ব্লিচিং ছড়ানো হয়েছে।
সেপকো টাউনশিফের বাসিন্দা ঊর্মিলা সিংহ (৬৫) গত ১৩ অগস্ট সন্ধ্যায় ভর্তি হন শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে তাঁর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েনি। তাঁর কিডনির সমস্যা ছিল। তবে বুধবার সকালে ফের রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। এই খবর পুরসভাকে জানানো হয়েছে বলে ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান। দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) লাভলি রায় বলেন, ‘‘মৃত্যুর আগে রক্ত পরীক্ষায় ওই বৃদ্ধার ডেঙ্গি ধরা পড়েছে বলে হাসপাতাল জানিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এই তথ্য ঠিক বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে আমরা গোটা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’’
দুর্গাপুরে প্রায় প্রতি বছরই ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত বছর শহরের মেনগেট এলাকার এক বালিকার মৃত্যু হয়। গত কয়েক দিনে জ্বর নিয়ে শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে অনেকের প্রাথমিক লক্ষণ থাকলেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি মেলেনি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। দুর্গাপুর পুরসভায় এক দিকে রয়েছে বেনাচিতি, ধান্ডাবাগের মতো এলাকা। অন্য দিকে সিটি সেন্টার, বিধাননগরের মতো অভিজাত এলাকা। রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুরের মতো শিল্পতালুকও রয়েছে। নানা এলাকাতেই নিকাশি, ঝোপজঙ্গল সময় মতো সাফ না হওয়ার সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ মানুষজনের। সিটি সেন্টারের অদূরে সেপকো এলাকায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর চাউর হতেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, এখন মশার উপদ্রব যথেষ্ট বেড়েছে। তার উপরে বিভিন্ন রাস্তায় বৃষ্টির জল জমে রয়েছে, যেখানে সহজেই মশা বংশবিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন গ্যারাজ, টায়ারের দোকান রয়েছে রাস্তার পাশে। সেখানে সারা বছর পড়ে থাকা গাড়ির যন্ত্রাংশ, পুরনো টায়ারে জল জমে অনায়াসে। অভিযোগ, মশার উপদ্রব বাড়লেও সে ভাবে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুরসভা।
বৃহস্পতিবার সেপকো টাউনশিপে গিয়ে দেখা গিয়েছে, নানা জায়গা আগাছায় ভরে রয়েছে। রাস্তায় বৃষ্টির জলও জমে আছে। মৃত ঊর্মিলাদেবীর পরিবারের লোকেরা এ দিন কোনও কথা বলতে চাননি। তবে স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ রায় বলেন, ‘‘সামনের রাস্তায় সব সময় জল জমে থাকে। পুরসভা সব সময় সাফাই অভিযানও করে না।’’ অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্লিচিং, মশা মারার ওষুধ স্প্রে করেছেন। শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মশার কামড় থেকে বাঁচতে নিজেরাই নানা ব্যবস্থা করছি।’’ শুধু সেপকো নয়, ধান্ডাবাগ, বিধাননগরের এমএএমসি এলাকাও আগাছায় ভরে গিয়েছে।
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ লাভলিদেবী জানান, সেপকো এলাকায় ইতিমধ্যে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে। ব্লিচিংও ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘সেপকো টাউনশিপ যথেষ্ট সাফসুতরো এলাকা। সেখানে কী ভাবে এরকম হল, তা দেখা হচ্ছে। পুরসভার তরফে এই এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy