ভরসা জলের ট্যাঙ্কার। নিজস্ব চিত্র
একশো, খুব চাপাচাপি করলে ৮০ টাকা, তার কমে না, কর্মীকে নির্দেশটা দিলেন এক দোকানি। — রবিবার দিনভর দুর্গাপুরে এটাই ছিল ২০ লিটারের একটি জ্যারিকেন জলের দর! ব্যারাজে বিপত্তির জেরে শনি ও রবি, দু’দিনই দুর্গাপুর শহরে জল সরবরাহ বন্ধ ছিল। ফলে ভরসা, এই চড়া দরের জলের জ্যারিকেন, ট্যাঙ্কার ও বাড়িতে মজুত জল।
দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে একটি আট কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ফিডার ক্যানাল’ বেরিয়েছে। ওই ক্যানাল থেকেই পাম্পের সাহায্যে জল তুলে পরিশোধন করে তা শহরে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু মেরামতের জন্য ব্যারাজ থেকে জল বের করে দিতে হয়। ফলে ক্যানালেও জল ছিল না।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার থেকেই দুর্গাপুরের অধিকাংশ এলাকায় পানীয় জলের জন্য হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছিল। রবিবার তা আরও বেড়েছে। দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় জল সরবরাহ করে দুর্গাপুর পুরসভা, ডিএসপি, ডিপিএল, এডিডিএ। পরিস্থিতির সামাল দিতে শনিবার ট্যাঙ্কারে করে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। একই ভাবে পুরসভাও প্রায় ২৫ টি ট্যাঙ্কারে করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জল পাঠিয়েছিল। এ ছাড়া আসানসোল পুরসভা থেকে আরও ২০টি ট্যাঙ্কার আনানো হয়। বাঁকুড়া পুরসভাও দু’টি ট্যাঙ্কার পাঠিয়েছিল। রবিবারও দুর্গাপুর পুরসভা ও ডিএসপি ট্যাঙ্কারে করে নানা ওয়ার্ডে জল পাঠিয়েছে। পুরসভা জানায়, ইসিএল, এসআর অয়েল-সহ নানা সংস্থা থেকে ট্যাঙ্কার ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া বেঙ্গল অম্বুজা-সহ কিছু এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাঁরা জলের ট্যাঙ্কার পানাগড় থেকে ভাড়ায় এনেছিলেন। ট্যাঙ্কার পিছু তাঁদের খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা। এই ট্যাঙ্কারগুলি সেচ প্রকল্পের জন্য বসানো সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে জল ভরেছে।
শহরের নানা প্রান্তের বাসিন্দারা জানান, শনিবার বাড়িতে তবুও কিছুটা জল মজুত ছিল। কিন্তু রবিবার ট্যাঙ্কারের জলই ছিল একমাত্র ভরসা। কিন্তু এর পরেও শহরের জলের চাহিদা মেটেনি। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে জল কিনেছেন। সুযোগ বুঝে ফায়দা লুটতে নেমে পড়েন ব্যবসায়ীদের একাংশও। শহরের ৫৪ ফুট এলাকায় মুড়ি-খইয়ের দোকান রয়েছে সঞ্জয় সাউয়ের। এ দিন সকালে দেখা গেল, তিনটি ২০ লিটারের জ্যারিকেন এনে স্ত্রী’র কাছে রাখলেন। সঙ্গে বলে দিলেন, ‘দাম কম করে ৮০ টাকা।’ কিন্তু অন্য দিন তো এর দাম থাকে ৩৫ টাকার মতো। তা হলে? সঞ্জয়বাবুর দাবি, ‘‘ভোর ভোর গিয়ে বেনাচিতি বাজার থেকে ৫০ টাকা দিয়ে জ্যারিকেন কিনে এনেছি। বেলায় আরও বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই এই দাম।’’ শহরের নানা এলাকায় জল নিয়ে এমন কারবার নজরে পড়ে এ দিন। বাধ্য হয়ে তাইই কিনছিলেন বেনাচিতির বাসিন্দা কিশোর দে। তাঁর কথায়, ‘‘জল ছাড়া তো চলবে না। বেশি কড়ি ফেলেও তাই কিনতে হল।’’
প্রবীণ বাসিন্দাদের দাবি, এ ধরনের জলকষ্ট দুর্গাপুর শহর জুড়ে এক সঙ্গে সব জায়গায় এর আগে কখনও হয়নি। শহরের এক বধূ জানান, সকাল ও বিকেলে দু’বার করে জল আসে। এ ক্ষেত্রে শুক্রবার সকালে জল মিলেছিল। তার পরে থেকেই নির্জলা শহর।
কখন স্বাভাবিক হবে শহরের জল-সরবরাহ? সেচ দফতরের অনুমান, এই পরিস্থিতির উন্নতি হতে আজ, সোমবার দুপুর গড়িয়ে যাবে। কারণ, রবিবার সকাল ছ’টায় এক নম্বর লকগেটটি মেরামতের কাজ শেষ হয়। তারপরে সব গেট বন্ধ করে ব্যারাজে আবার জল ধরে রাখার কাজ শুরু হয়। ব্যারাজ জলপূর্ণ হতে রবিবার গভীর রাত হয়ে যাবে। তার পরে আগের মতো পূর্ণ হবে ‘ফিডার ক্যানাল’। সেই জল বিভিন্ন সংস্থা পাম্প চালিয়ে তুলে পরিশোধনকেন্দ্রে পাঠিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করবে শহরে। এই গোটা প্রক্রিয়ায় আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে প্রাথমিক অনুমান প্রশাসনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy