Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ব্যারাজে নেই নজর, ক্ষোভ উদ্ধারকাজেও

রবিবার সন্ধ্যায় দামোদরের পাড়ে বেড়াতে গিয়েছিল ছয় কিশোর। স্নান করতে নেমে তলিয়ে যেতে থাকে বড়জোড়ার সুপ্রতিম গোস্বামী। তাকে বাঁচাতে যায় দুই বন্ধু, দুর্গাপুরের দুই বাসিন্দা শুভজিৎ বাউরি ও শুভজিৎ শূর। তলিয়ে যায় তিন কিশোরই।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বিপ্লব ভট্টাচার্য
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৭ ০২:৪৮
Share: Save:

কখনও খবর পাওয়ার পরে দেরিতে পৌঁছনো, আবার কখনও উপযুক্ত সরঞ্জাম ছাড়াই আসা— বিপর্যয় মোকাবিলায় উদ্ধারকাজ নিয়ে অভিযোগ ওঠে প্রায়শই। রবিবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুর ব্যারাজ লাগোয়া দামোদরে তিন কিশোরের তলিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় ফের উঠেছে তেমন অভিযোগ। মৃতদের পরিজনদের দাবি, রাতে উদ্ধারকাজে দক্ষ কর্মীরা কেউ আসেননি। পরের দিন সকালে এলেও তাঁদের কাছে উপযুক্ত সরঞ্জাম ছিল না। ব্যারাজের কাছে স্নানে নেমে দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

রবিবার সন্ধ্যায় দামোদরের পাড়ে বেড়াতে গিয়েছিল ছয় কিশোর। স্নান করতে নেমে তলিয়ে যেতে থাকে বড়জোড়ার সুপ্রতিম গোস্বামী। তাকে বাঁচাতে যায় দুই বন্ধু, দুর্গাপুরের দুই বাসিন্দা শুভজিৎ বাউরি ও শুভজিৎ শূর। তলিয়ে যায় তিন কিশোরই। সোমবার দিনভর তল্লাশি চালিয়ে তিন জনের দেহ উদ্ধার করে রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধারকারী দল।

রবিবার রাত থেকে স্থানীয় বাসিন্দা ও কিশোরদের পরিবারের লোকজন উদ্ধারকাজ নিয়ে ক্ষোভ জানান। তাঁদের দাবি, খবর পাওয়ার পরে দীর্ঘক্ষণ উদ্ধারকারী কোনও দল আসেনি। গভীর রাতে বড়জোড়া থেকে রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীর ১৩ নম্বর ব্যাটলিয়নের বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের কর্মীরা পৌঁছলেও কাজে নামেননি। পুলিশের কাছেও উদ্ধারকাজ চালানোর মতো সরঞ্জাম ছিল না বলে দাবি এলাকাবাসীর। নৌকা, টর্চ নিয়ে দামোদরে খোঁজ শুরু করেন এলাকার কয়েক জন। বাসিন্দা অশোক মজুমদার, বীরেশ জোয়ারদারদের কথায়, ‘‘উপযুক্ত তল্লাশি রাতে শুরুই হয়নি।’’

উদ্ধারকাজে আসা কর্মীরা জানান, রাতে জলে তল্লাশি চালানোর মতো আধুনিক সরঞ্জাম তাঁদের কাছে নেই। জলের তলায় কোথায় দেহ রয়েছে তা বোঝার জন্য ‘সেন্সর’-এর প্রয়োজন হয়, যা নেই। তাছাড়া ওই কিশোরেরা কোথায় তলিয়ে গিয়েছিল, গোড়ায় তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাই রাতে এক বার চেষ্টা করেও কাজ বন্ধ রাখতে হয়। ঘটনাস্থলে দেরিতে আসার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাহিনীর এক আধিকারিক জানান, বিপর্যয় ঘটলে তাঁদের কাছে খবর পৌঁছয় একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায়। ফলে, ঘটনাস্থলে পৌঁছতে কিছুটা সময় লাগে। ওই বাহিনীর ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিক অরিন্দম অধিকারী বলেন, ‘‘আমাদের দল রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কিন্তু অন্ধকারে সে ভাবে কাজ করা যায়নি।’’

এমন দুর্ঘটনার পরেও ব্যারাজের আশপাশে জলে নামা বন্ধ করতে সে ভাবে নজরদারি চোখে পড়েনি। সেচ দফতরের তরফে ব্যারাজের পাশ দিয়ে নদীতে নামার রাস্তাটি পাঁচিল দিয়ে বন্ধ করা থাকলেও, ঘুরপথে প্রায় দেড় কিলোমিটাপ ঘুরে জলের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন অনেকেই। রবিবার সন্ধ্যায় ছয় বন্ধু এই রাস্তা ধরেই দামোদরে গিয়েছিল। এই রকম যাতায়াত রুখতে পাড়ে নজর প্রয়োজন, দাবি এলাকার অনেকের। বছর দুয়েক আগে বড়জোড়া থানার তরফে মাইকে প্রচার করা হতো। এখন তা বন্ধ। তবে পুলিশের আশ্বাস, ফের নজরদারি শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE