Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বৃষ্টিতে স্টেশনে আশ্রয় বৃদ্ধের, সহায় যুবকেরা

ঝিরঝিরে বৃষ্টি ও ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে দাঁইহাট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শুয়েছিলেন বৃদ্ধ। আড্ডা দিতে গিয়ে তা দেখতে পেয়ে বৃদ্ধকে তুলে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করলেন এলাকার কিছু যুবক। পুরসভা পরিচালিত কমিউনিটি সেন্টারে অস্থায়ী ভাবে বৃদ্ধের থাকার ব্যবস্থাও করলেন তাঁরা।

দাঁইহাটে শঙ্করবাবুর সঙ্গে এলাকার যুবকেরা। নিজস্ব চিত্র

দাঁইহাটে শঙ্করবাবুর সঙ্গে এলাকার যুবকেরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া ও মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৫
Share: Save:

ঝিরঝিরে বৃষ্টি ও ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে দাঁইহাট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শুয়েছিলেন বৃদ্ধ। আড্ডা দিতে গিয়ে তা দেখতে পেয়ে বৃদ্ধকে তুলে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করলেন এলাকার কিছু যুবক। পুরসভা পরিচালিত কমিউনিটি সেন্টারে অস্থায়ী ভাবে বৃদ্ধের থাকার ব্যবস্থাও করলেন তাঁরা।

প্রায়ই বিকেলে স্টেশনে আড্ডা দিতে যান দাঁইহাটের সুভাষ রোডের বাসিন্দা সুমন দাস, সৈকত দাস, সুরজ দেবনাথেরা। তাঁরা জানান, শনিবার দুপুরে স্টেশনে গিয়ে দেখেন, ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কুঁকড়ে শুয়ে রয়েছেন ওই বৃদ্ধ। প্রথমে তাঁকে ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন ওই যুবকরা। তার পরে শঙ্কর মুখোপাধ্যায় নামে বছর তিরাশির ওই বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তাঁর বাড়ি আসলে নলাহাটিতে। হুগলির কোন্নগরে একটি কাপড় কারখানায় কাজ করতেন। থাকতেন হাওড়ার লিলুয়ায় ভাড়া বাড়িতে। নানা সময়ে রঙের মিস্ত্রির কাজও করেছেন। বছর নয়েক আগে স্ত্রী সুরবালা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর থেকে বিড়ম্বনা শুরু হয়, দাবি তাঁর।

শঙ্করবাবু জানান, কখনও সন্তানদের কাছে, কখনও আশ্রমে দিন কেটেছে তাঁর। ছেলে পরিবার নিয়ে থাকেন হাওড়ার সালকিয়ায়। বৃদ্ধের অভিযোগ, মাস দুয়েক আগে ছেলে-পুত্রবধূ সেখান থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেয়। তখন মন্তেশ্বরে মেয়ের বাড়িতে যান তিনি। কিন্তু দিন সাতেক আগে সেখান থেকেও তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বৃদ্ধের দাবি, সেখান থেকে হাঁটতে-হাঁটতে তিনি প্রথমে কুসুমগ্রামে যান। ফের দিন দুয়েক হেঁটে দাঁইহাটে পৌঁছন। সেখানেই প্ল্যাটফর্মে অভুক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন।

সুমন, সুরজেরা বলেন, ‘‘এই ঠান্ডায় ছেঁড়া লুঙ্গি ও পাতলা চাদর পরে স্টেশনে কাঁপছিলেন উনি। দাঁইহাট ফাঁড়ির পুলিশের সহায়তায় ওঁকে শনিবার নোয়াপাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করাই। সুস্থ হওয়ার পরে এ দিন পুরসভার কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে এসেছি।’’ বৃদ্ধকে নতুন জামাকাপড়ও কিনে দিয়েছেন মনা মণ্ডল, স্নেহাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। রাতে তাঁর শুশ্রূষা করেন প্রীতম ধারা। খাওয়া-দাওয়া, ওষুধের ব্যবস্থাও করেছেন ওই যুবকেরাই। শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘ছেলেমেয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। রক্তের সম্পর্ক না থাকা এই নাতিরাই প্রাণে বাঁচাল।

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মহম্মদ মহসিন বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। ওঁর উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক (কাটোয়া) সৌমেন পাল জানান, শঙ্করবাবুর ছেলেমেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। বৃদ্ধের ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে মন্তেশ্বরে তাঁর মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘তাড়িয়ে দেওয়ার কথা একেবারে মিথ্যে। বাবা নিজেই দিন কয়েক আগে হঠাৎ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। নানা জায়গায় খোঁজ করেও পাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rainy Day Shelter Dainhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE