Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অভাবের মোকাবিলা করে, বাধা উড়িয়ে সফল চার

কাটোয়ার আক্রা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রাহুল পালের বাবা নার্সিংহোমে কম্পাউন্ডারের কাজ করেন। মাস গেলে হাজার চারেক টাকা আয়। একান্নবর্তী পরিবারে একটি ঘরই বরাদ্দ পাল পরিবারের।

সফল: বাঁ দিক থেকে-মিতালি, রাহুল, তহমিনা, অনন্যা।—নিজস্ব চিত্র

সফল: বাঁ দিক থেকে-মিতালি, রাহুল, তহমিনা, অনন্যা।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া ও কালনা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

বাধা বরাবরই ছিল। তবু পরিশ্রম, জেদে ভর করে সাফল্য ছিনিয়ে নিয়েছে ওরা। কিন্তু সামনের পথ আরও কঠিন। তাই মাধ্যমিকে ভাল ফল করেও মুখ শুকনো তিন জনের। দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না বাবা-মায়েদেরও।

ছোট থেকেই পড়তে ভালবাসত মেয়েটা। ছুটির দিনেও বই-ই ভরসা। অভাবের মোকাবিলা করে সেই সঙ্গীর হাত ধরেই মাধ্যমিকে ৫৫৪ পেয়েছে কাটোয়ার মু্স্থুলি গ্রামের মিতালি পাল। ঘোড়ানাশ উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী মিতালীর বাবা সনৎবাবু তাঁতশ্রমিক। সারা বছর কাজও থাকে না তাঁর। মাস গেলে যে সামান্য আয় তাতে কোনরকমে তিন মেয়েকে পড়াচ্ছেন তিনি। মিতালি জানায়, পরীক্ষার পরেই আত্মঘাতী হয়ে মারা যান মা সুমতিদেবী। তারপর থেকে মামারবাড়ি শ্রীবাটিতেই থাকছে সে। শিক্ষিকা হতে চায় সে। তবে বাধ সেধেছে দারিদ্র। সনৎবাবু বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষার জন্য ওর মামারবাড়ির সাহায্য নিতে হচ্ছে। নাহলে আমার আর ক্ষমতা কই!’’

কাটোয়ার আক্রা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রাহুল পালের বাবা নার্সিংহোমে কম্পাউন্ডারের কাজ করেন। মাস গেলে হাজার চারেক টাকা আয়। একান্নবর্তী পরিবারে একটি ঘরই বরাদ্দ পাল পরিবারের। তার মধ্যেও ৬৩৭ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। বাবা রোহিতবাবু বলেন, ‘‘বেশি গৃহশিক্ষক দিতে পারিনি। বন্ধুদের কাছে বই জোগাড় করেই পড়েছে ছেলে।’’ আর রাহুল বলে, ‘‘বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ডাক্তার হতে চাই। এখন থেকেই প্রস্তুত করছি নিজেকে।’’

কালনা ২ ব্লকের আঙ্গারসন এম এম উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে ৬০১ পাওয়া তহমিন খাতুনেরও স্বপ্নপূরণে বাধা পারিবারিক অর্থকষ্ট। মামুদপুর এলাকার এই ছাত্রী জানায়, বাবা খেতমজুর। পড়াশোনার জন্য আর বেশি টাকা খরচ করা সম্ভব নয় তাঁর। এত দিন স্কুলের সম্পাদক সুদীপ মণ্ডল নানা ভাবে সাহায্য করেছেন তহমিনাকে। বড় হয়ে শিক্ষিকা হয়ে তহমিনাও চায় সবার পাশে দাঁড়াতে।

কাঁকসার সিলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অনন্যা দত্ত মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৪৪। পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের অভাব ঘোচানোই তার লক্ষ্য। তার বাবা কল্যাণবাবু প্রতিদিন সিলামপুর থেকে দুর্গাপুরে এসে বাড়ি-বাড়ি সংবাদপত্র বিলি করেন। তিনি জানান, শিক্ষকেরা প্রায় বিনামূল্যে টিউশন দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। কী হবে, জানি না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Financial crisis Madhyamik Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE