প্রতীকী চিত্র।
দেওয়ালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। পাশে সিসিটিভি। চেয়ারে বসে রিভলভার হাতে নিয়ে সহকর্মীদের কিছু বলছেন চেক জামা, চোখে চশমা দেওয়া এক ভদ্রলোক। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি ‘ভাইরাল’ হয়ে গিয়েছে। ছবির এই ভদ্রলোক আর কেউ নন গুসকরা পুরসভার ‘বিতর্কিত’ প্রবীণ কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়।
বন্দুক হাতে তাঁর ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তৃণমূলের আরেক ‘বিতর্কিত’ কাউন্সিলর মল্লিকা চোঙদার। তিনি সেখানে লিখেছেন, “তিন নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় পুরসভার ভিতরে বন্দুক নিয়ে ঘুরছেন। এ কোন আজব জায়গা।”
এমনিতে নিত্যানন্দবাবুর সঙ্গে মল্লিকাদেবীর সম্পর্ক ‘মধুর’। বেশ কয়েক মাস আগে, পুরসভার ভিতরেই প্রকাশ্যে ওই দুই কাউন্সিলরের মধ্যে মারামারি বাধে। একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। তারপরে কুনুর নদী দিয়ে অনেক জল বইলেও গুসকরা পুরসভার অন্দরে ওই দুই কাউন্সিলরের পরিবর্তন ঘটেনি। পুরবোর্ডের যে কোনও বৈঠক থেকে পুরপ্রধানের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন— সব নিয়েই প্রকাশ্যে আসে তাঁদের দ্বন্দ্ব। দলের আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোটের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলও গুসকরার সমস্যা মেটাতে কাউন্সিলরদের ডেকে বৈঠক করেন। তবে রিভলভার হাতে কাউন্সিলরের ছবি অন্য রং লাগিয়েছে দ্বন্দ্বে।
গুসকরার কাউন্সিলরদের দাবি, কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখ খুন হওয়ার পর থেকেই রাস্তাঘাটে রিভলভার নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় নিত্যানন্দবাবুকে। পুরসভাতেও সেটি নিয়ে আসেন তিনি। পুরভবনে পূর্ত দফতরে নিজের চেয়ারে বসে হাসতে হাসতে রিভলভার উঁচিয়ে তিনি ‘হুঙ্কার’ দিতে থাকেন, ‘আমাকে যে খুন করতে আসবে, তারও নিস্তার নেই’। ওই দৃশ্য দেখার জন্য কাউন্সিলর ও কর্মীরাও তাঁর ঘরে হাজির হয়ে যান।
দলীয় সূত্রের খবর, তখন রিভলভার কী ভাবে চালাতে হয়, সেটাও তিনি দেখাচ্ছিলেন। তখনই উপ-পুরপ্রধান চাঁদনিহারা মুন্সি ওই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন। বৃহস্পতিবার তাঁর দাবি, “আমি তো লুকিয়ে ছবি তুলিনি। নিত্যানন্দবাবুর অনুমতি নিয়ে আসল রিভলভার দেখে ছবি তুলেছিলাম।”
যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর হাতে থাকা রিভলভারটি এ দিন ‘খেলনা’ বলে দাবি করেছেন নিত্যানন্দবাবু। কিন্তু ‘খেলনা’ বন্দুক নিয়ে কেন গিয়েছিলেন পুরসভায়? কোনও উত্তর না দিয়ে হেসে ফোনটি কেটে দেন নিত্যানন্দবাবু।
আর মল্লিকাদেবী বলেন, “পুরসভার অন্দরে একজন কাউন্সিলর কেন রিভলভার নিয়ে ঢুকছেন, তার জবাব পুরপ্রধানকে দিতে হবে। মৌখিক ভাবে বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়েছে।”
পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায় বলেন, “ফেসবুকে ছবিটি দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছি। ওই ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করা উচিত হয়নি। আর রিভলভারটি আসল না নকল, তা আমি জানব কী করে? তদন্ত করে দেখব।” পুলিশও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy