Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

স্বামী কোথায়? মা-ছেলের দিন কাটছে গাছতলায়

অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে থেকে স্বামীকে নিয়ে ওঠেন ভাড়া বাড়িতে। তখন সঙ্গে ২ বছরের সন্তান।

গাছতলায় মায়ের কাছে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র

গাছতলায় মায়ের কাছে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র

রঞ্জন লাহিড়ী
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩২
Share: Save:

শ্বশুরবাড়ির ‘অত্যাচার’ সহ্য করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে স্বামীর সঙ্গেই শ্রীপল্লির ভাড়াবাড়িতে উঠেছিলেন তিনি। সেই সুখও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তাঁর। স্বামী সুভাষ সাহা তাঁদের ছেড়ে পালিয়েছেন।

আর এখন বাড়ির ভাড়া দিতে না পেরে ছেলেকে নিয়ে ওই বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন মিতালি মণ্ডল। তাঁর এখন ঠিকানা আসানসোল কোর্টচত্ত্বর। বছর আটেকের ছেলে স্বর্ণাভকে নিয়ে সেখানেই গত সাতদিন ধরে রাত কাটাচ্ছেন তিনি।

মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই ঘটনা আমার নজরে এসেছে। মহিলা ও তাঁর ছেলের কী ব্যবস্থা করা যায় সেটা দেখছি।’’

মিতালিদেবী জানিয়েছেন, কোথাও সাহায্য পাননি। গোটা শহর জুড়ে হেঁটে হেঁটে কাজের সন্ধান করছেন। কিন্তু, কেউ মুখ তুলে তাকায়নি। তাই পথই এখন তাঁদের ঠিকানা। পড়াশোনায় বেশ ভাল ছেলেটি। সামনেই পরীক্ষা ওর। মায়ের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে গাছ তলাতেই বই খুলে পড়তে বসে।

২০০৬ সালে আসানসোলের রাসডাঙা অঞ্চলে বিয়ে হয়েছিল কল্যাণপুরের বাসিন্দা মিতালি মণ্ডলের। মিতালির অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পণের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর উপর অত্যাচার করত। একপ্রকার মুখ বুজে সহ্য করে সেখানেই থাকতে শুরু করেন। সন্তান হওয়ার পরেও অত্যাচারের মাত্রা কমেনি। বরং বেড়েছে।

অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে থেকে স্বামীকে নিয়ে ওঠেন ভাড়া বাড়িতে। তখন সঙ্গে ২ বছরের সন্তান। মিতালি বলেন, ‘‘স্বামী বেশি দিন আমাদের সঙ্গে থাকেননি। বাড়িতেই ফিরে যায়।’’ তবে তিনি আর শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাননি। যাননি বাপেরবাড়িতেও। সেই থেকে শুরু লড়াই। যা আজও চলছে।

ছেলে মানুষ করতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন কাজের খোঁজে। প্রথমে মার্কেটিংয়ের চাকরিতে যোগ দেন। পরে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। মিতালির অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ি না গেলেও তাঁর উপর মানসিক নির্যাতন কমেনি। নানাভাবে তাঁকে হেনস্থা শুরু হয়। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কাজে লাগিয়ে তাঁকে সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

তবে দমে যাননি তিনি মিতালি। হার মানেননি। ভাড়া বাড়িতে থেকে পাঁপড়-সহ বিভিন্ন খাবার জিনিস বিক্রি করে দিন কাটাতে শুরু করেন। ছেলে স্বর্ণাভকে ভর্তি করেন আসানসোলের একটি স্কুলে। পড়াশোনাতেও বেশ ভাল স্বর্ণাভ। এভাবেই চলছিল।

কিন্তু সম্প্রতি তাতে ছেদ পড়ে। বাড়ি ভাড়া কয়েকদিন দিতে দেরি হয়েছিল মিতালির। তাই ভাড়াটিয়া তাঁকে বের করে দেন। আটকে রেখে দেয় তাঁর সমস্ত জিনিসপত্র। স্বর্ণাভর বইও দেয়নি তাঁরা। বাধ্য হয়ে কোর্টের অস্থায়ী ছাউনিতে এখন রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা। প্রতিদিন ভোরে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কাজের সন্ধানে যান। রাতে ফিরে আসেন গাছতলাতেই। রাস্তাতেই খাবার জোটে অন্যের দয়াতে। স্থানীয় চায়ের দোকানের কর্মচারী দিলীপ সরকার বলেন, ‘‘কয়েকদিন ধরে মা ছেলেকে এখানে দেখছি। গাছতলাতেই থাকে। খারাপও লাগে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mother Son
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE