Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মন্ত্রীর ‘আত্মীয়’ হলেও ছাড় নয়, গ্রেফতার

লালবাতি লাগানো একটি গাড়ি পুলিশের ‘নাকা’য় আটকে পড়ল। জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পুলিশকে গাড়ির আরোহীরা দাবি করলেন, তাঁরা পুরুলিয়ার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর আত্মীয়। এক জন নিজেকে বাঘমুণ্ডি ব্লকের মাঠা পঞ্চায়েতের ‘সদস্য’ বলেও পরিচয় দিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৭ ০০:৪১
Share: Save:

লালবাতি লাগানো একটি গাড়ি পুলিশের ‘নাকা’য় আটকে পড়ল। জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পুলিশকে গাড়ির আরোহীরা দাবি করলেন, তাঁরা পুরুলিয়ার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর আত্মীয়। এক জন নিজেকে বাঘমুণ্ডি ব্লকের মাঠা পঞ্চায়েতের ‘সদস্য’ বলেও পরিচয় দিলেন। কিন্তু, লালবাতি জ্বালিয়ে দুরন্ত গতিতে যাওয়া কেন? সদুত্তর না পেয়ে পুলিশ গাড়ির আরোহী তারাচাঁদ দাস, দীপাঞ্জন দাস ও আশিসকুমার দত্তকে গ্রেফতার করে।

ঘটনাস্থল, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর পালসিট টোলপ্লাজা। সোমবার রাতে দু’ঘণ্টা ও মঙ্গলবার দুপুরে বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল সদলবলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একের পর এক গাড়ি পরীক্ষা করছিলেন। পুলিশ সুপার বলেন, “পুরুলিয়ার মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে কেউ পার পেয়ে যাবেন, সেটা তো হয় না। সে জন্য ওই গাড়ির আরোহীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।’’ তা ছাড়া, গাড়িতে লালবাতি লাগানোর নির্দিষ্ট নিয়মকানুনও রয়েছে। পরিচয় ভাঁড়ানো, সরকারি কাজে বাধা ও পরিবহণ আইনে মামলা দায়ের হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার তাঁদের আদালতে হাজির করানো হলে এক দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বর্ধমান জেলা পুলিশ জানায়, তারাচাঁদ মাঠা পঞ্চায়েতের সদস্য। তাঁর ও দীপাঞ্জনের বাড়ি মাঠা গ্রামেই। আশিসের বাড়ি কলকাতার হরিদেবপুরে। তাঁরা এ দিন কলকাতা থেকে ফিরছিলেন। যদিও তৃণমূলের মাঠা অঞ্চল সভাপতি গৌতম গড়াইয়ের দাবি, তারাচাঁদ দলের কেউ নন। পঞ্চায়েতের সদস্যও নন। পঞ্চায়েত ভবনের পাশে তারাচাঁদের বাড়ি। তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘না-না, ওই রকম কোনও আত্মীয় আমার নেই। ভুল করে থাকলে পুলিশ ধরে ঠিকই করেছে।’’

শুধু ওই গাড়ি নয়, পরপর দু’দিন রাস্তায় গাড়ি পরীক্ষা করতে গিয়ে পুলিশের আরও অভিজ্ঞতার হয়েছে। ‘নাকা’র জালে ধরা পড়েছে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বিডিও-র গাড়ি, অন্ডাল থানার গাড়ি, আয়কর দফতরের আধিকারিকের গাড়ি থেকে বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার গাড়ি। প্রতিটি গাড়িকেই পরিবহণ আইনের নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয় এবং জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর হঠাৎ ‘নাকা’ কেন? পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার থেকেই পালসিট টোলপ্লাজার কাছে গাড়ি আটকে চালক ও সামনের সিটের আরোহী সিট বেল্ট পরেছেন কি না, গাড়ির নথি ঠিক আছে কি না পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে বর্ধমানমুখী রাস্তায় ১৫ মিনিট অন্তর গাড়ি আটকে বর্ধমান শহরের উপর চাপ কমাতে চাইছিল পুলিশ। গত কয়েক দিন ধরে ওই রাস্তার উপর লাগাতার দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। মঙ্গলবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ওই দুর্ঘটনা কমানোর জন্যই জেলা পুলিশ ‘নাকা’ করছিল।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “বেশি গতিতে ওই রাস্তায় যাওয়ার জন্য আধিকারিকদের গাড়ি তো বটেই, অন্য গাড়িরও জরিমানা করা হয়েছে।” জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে ২০০টি গাড়ি পরীক্ষা করে ১২০টি গাড়ির কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে ৫০টি গাড়ি থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। দু’দিনে পুলিশ প্রায় চার লক্ষ টাকা জরিমানা বাবদ সরকারের ঘরে ঢুকিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Red beacon lights Durgapur Expressway 3 arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE