‘শিল্প ক্ষেত্রে’ চরছে গরু। নিজস্ব চিত্র
উদ্বোধনের পরে কেটে গিয়েছে দু’বছর। শিল্প তো দূরঅস্ত, এখনও পরিকাঠামো তৈরির কাজই শেষ হয়নি। এমনই হাল, দুর্গাপুরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ফেজ ২-র। এমনকী শিল্পতালুকের ভিতরে এখনও বাস করছে বেশ কয়েকটি পরিবার।
ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগম সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-র জানুয়ারিতে আসানসোল পোলো গ্রাউন্ডের এক জনসভায় ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ফেজ ২’ তৈরির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুর স্টেশনের কাছে বন্ধ পড়ে থাকা উড ইন্ডাস্ট্রিজের ১৩.৪৮ একর জমিতে প্রায় ৮ কোটি টাকা খরতে নতুন শিল্পতালুক তৈরির কাজ শুরু হয়।
২০০০ সালে উড ইন্ডাস্ট্রিজ পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হওয়ার পরে বেশ কিছু পরিবার পড়ে থাকা জমিতে অস্থায়ী বাড়ি বানিয়ে বসবাসও শুরু করে। কিছু পরিবারকে পাশে অন্য জায়গা দিয়ে এবং বাকিদের ‘সবার জন্য গৃহ’ প্রকল্পে বাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরে সীমানা পাঁচিল ও পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করে নিগম। ২০১৬-র ১৬ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে শিল্পতালুকটির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু রবিবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এখনও সীমানা পাঁচিল তৈরির কাজই শেষ হয়নি। শিল্পতালুকের ভিতরে চরছে গবাদি পশুরা। শিল্পতালুকের ভিতর দিয়ে যাওয়া জলের পাইপ খুলে স্নান করছে খুদেরা। কয়েক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি থেকে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে তার। রাস্তার পাশে ফুটপাথ বসে গিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। রাতে বেশ কিছু আলোও জ্বলে না। পুরো চত্বর জুড়ে একমাত্র সরকারি নির্মাণ ‘অফিস ঘর’-এর দেওয়ালেও ফাটল ধরেছে। প্রবেশ পথটিও সংস্কারের অভাবে বেহাল।
লাগোয়া এলাকায় পুনর্বাসন দেওয়া পরিবারগুলি এখনও জমির সরকারি নথি পায়নি বলে অভিযোগ। শিখা ধীবর, সরস্বতী বিশ্বাসেরা বলেন, ‘‘যাতায়াতের পাকা রাস্তা না থাকায় শিল্পতালুকের ভিতর দিয়েই চলাফেরা করতে হয়।’’ শিল্পতালুকের ভিতরে এখনও থাকা রাজু মণ্ডল, সাহেব শেখ, ডলি বিবি’রা বলেন, ‘‘নতুন আবাসন দেবে বলে আমাদের কাছে ২০১৬-র ডিসেম্বরে ১০ হাজার টাকা করে পুরসভা নিয়ে গিয়েছে। আজও সে আবাসন পাইনি।’’
যদিও নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ৫৮টি প্লটের মধ্যে ৫০টি তৈরি করে ফেলা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত একটিও শিল্প আসেনি। দুর্গাপুরের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের অভিযোগ, বাজার না থাকায় বহু ইউনিট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এক সময় দুর্গাপুরে প্রায় ২৮০টি শিল্প ছিল। এখন সেই সংখ্যাটা একশোরও নীচে। ক্ষুদ্র শিল্পে নতুন করে লগ্নির জন্য জমির চাহিদা তেমন নেই বলে দাবি তাঁদের। ‘দুর্গাপুর স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি কৃপাল সিংহ বলেন, ‘‘একের পর এক ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বড় ও মাঝারি শিল্পের উন্নতি হলে তবেই ক্ষুদ্র শিল্পে জোয়ার আসবে। কিন্তু সে সম্ভাবনা এখনও না দেখা যাওয়ায় ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য জমির চাহিদা নেই।’’
দুর্গাপুরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পতালুকগুলির দায়িত্বে থাকা নিগমের আধিকারিক লক্ষ্মীকান্ত চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘নতুন শিল্পতালুকে ১০ কাঠা এবং পাঁচ কাঠার চারটি করে জমির ‘অ্যালটমেন্ট প্রসেস’ শুরু হয়েছে। অর্ধেক দামও মিটিয়ে দিয়েছেন শিল্পোদ্যোগীরা। বাকিটা মেটাতে কিছুটা সময় চেয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy