শুভেচ্ছা: বর্ধমান রাজ কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে জয়া দত্ত। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব আগেই কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বর্ধমান রাজ কলেজে ছাত্র সংসদের হাতে অধ্যক্ষ হেনস্থার ঘটনায় এ বার কড়া পদক্ষেপের কথা শোনালেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত।
শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে শুক্রবার রাজ কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেন জয়া। অধ্যক্ষের প্রতি তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘আবদার মানুন, কিন্তু, ছাত্র সংসদের অন্যায় মানবেন না’। পাশাপাশি টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের নেতৃত্বকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, সংগঠনের নাম করে কোনও রকম অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষাক্ষেত্রে ঘেরাও, অধ্যক্ষের সঙ্গে ছাত্র সুলভ আচরণ না করার বিষয়টি তাঁরা ভাল চোখে দেখছেন না। জয়ার বক্তব্য, “যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সংগঠন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।”
এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ বর্ধমান রাজ কলেজের অধ্যক্ষ নিরঞ্জন মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করেন জয়া। সঙ্গে ছিলেন টিএমসিপি-র পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলার নেতা রাসবিহারী হালদার প্রমুখ। নিরঞ্জনবাবুর ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান টিএমসিপি নেত্রীকে। জয়া এর পরে পুরো বিষয়টি জানতে চান। অধ্যক্ষ তাঁকে জানান, মঙ্গলবার আচমকাই ছাত্র সংসদের সম্পাদক সুরোজ ঘোষের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের দল তাঁর ঘরে ঢুকে স্মারকলিপির দেওয়ার নাম করে ‘অশালীন’ আচরণ করে। আরও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গোও দুর্ব্যবহার করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ‘ভীত ও সন্ত্রস্ত’ হয়ে রয়েছেন। এ দিনও অধ্যক্ষ জয়ার সামনে দাবি করেন, ছাত্র সংসদের স্মারকলিপি কর্মসূচিতে বহিরাগতরাও হাজির ছিল। অধ্যক্ষের কথায়, ‘‘ছাত্র সংসদকে পিছন থেকে চালাচ্ছেন এই কলেজেরই এক শিক্ষক। স্মারকলিপির দাবিগুলি অন্যায্য হওয়ার জন্যেই আমার সঙ্গে ওদের সংঘাত বাধছে।’’
এর পরে অধ্যক্ষ স্মারকলিপিতে থাকা দাবিদাওয়া ও অভিযোগগুলির কথা জয়াকে জানান। স্মারকলিপিতে ছাত্র সংসদের মূল দাবি ছিল, পরীক্ষা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ চলতি বছর যে এফআইআর হয়েছিল সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে, তা তুলে নিতে হবে। আরও দাবি করা হয়, ক্যাম্পাসের ভিতরে গাছ বিক্রি ও ভর্তি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। বিল বই চুরি হয়েছে। সিসি ক্যামেরা থাকার পরেও মেয়েদের হস্টেলে চুরির ঘটনা ঘটছে। আরও মারাত্মক অভিযোগ ছিল ছাত্র সংসদের। কলেজের এক শিক্ষক নাকি মহিলাদের ‘কমনরুমে’র সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। যদিও জয়ার সামনে সে-সব নস্যাৎ করে অধ্যক্ষ জানিয়ে দেন, অধিকাংশ অভিযোগই ছাত্র সংসদের মনগড়া।
অধ্যক্ষের ঘর থেকে বেরিয়ে ছাত্র সংসদে গিয়ে জয়া তাদের বক্তব্য শোনেন। সুরোজদের ক্ষোভ, কলেজের বাণিজ্য বিভাগের এক শিক্ষক সব সময় অধ্যক্ষের ঘরে বসে থাকেন। তার জন্য ছাত্র সংসদের বিভিন্ন কাজ করতে অসুবিধা হয়। সব মন দিয়ে শোনার পরেও জয়া বলেন, ‘‘মঙ্গলবার অধ্যক্ষের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক। আমরা ওই ঘটনা কোনও ভাবেই সমর্থন করছি না। আমাদের দলের উচ্চ নেতৃত্বও বিষয়টি ভাল চোখে নেয়নি। ছাত্র-শিক্ষকের সুসম্পর্ক রেখেই ছাত্র সংসদ চালাতে হবে। ছাত্র সংসদের নানা রকম আবদার থাকতেই পারে, তবে অন্যায় আবদার কলেজ কর্তৃপক্ষ মানবে না।”
বৃহস্পতিবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথও জানিয়েছিলেন, রাজ কলেজের ঘটনা দল ‘ভাল চোখে’ দেখছে না। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সে কথারই প্রতিধ্বনি এ দিন করেছেন টিএমসিপি রাজ্য সভানেত্রী। জয়ার কথায়, “শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমি বর্ধমানে এসেছি। ফিরে গিয়ে রিপোর্ট দেব। সেখানে আমার সংগঠনের কেউ দোষী হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বুধবার রাতেই অধ্যক্ষ ছাত্র সংসদের সম্পাদক-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে পুলিশের লিখিত অভিযোগ করেছেন। সে প্রসঙ্গেও জয়া বলেন, “ওই তদন্তে কেউ দোষী হলেও সংগঠন ব্যবস্থা নেবে।”
এখন দেখার, সত্যিই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা। অভিযুক্ত সুরোজ অবশ্য চাপের মুখে কিছুটা সুর নরম করে এ দিন জানিয়েছেন, সংগঠনের উপদেশ মেনেই তিনি ছাত্র সংসদ চালাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy