জামালপুরের তেলকুপি ঘাটে ভিড়।নিজস্ব চিত্র
মাঘ মাসের প্রথম দিনে জমজমাট মেলা শুরু হল জেলার নানা প্রান্তে। বর্ধমানের সদরঘাট, কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুর থেকে জামালপুরে তেলকুপি ঘাটে সোমবার সেই উপলক্ষে ভিড় জমালেন হাজার-হাজার মানুষ।
সদরঘাটে রবিবার থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছিল। তবে মেলা শুরু হয় সোমবার। মেলার পাশাপাশি বালির চরে পিকনিকও করেন অনেকে। এই মেলায় পলেমপুর, রায়না, খণ্ডঘোষ-সহ দক্ষিণ দামোদরে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন আসেন। এ ছাড়াও বেলকাশ, তেলিপুকুর-সহ বর্ধমান শহরের বহু মানুষও আসেন। মেলা কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা সামসুল আলম জানান, এ বার মেলায় প্রায় ৩০০ দোকান বসেছে। খণ্ডঘোষ থেকে আসা বাবলু সমাদ্দার বলেন, “শহরে এলে ভাল ফল কিনে নিয়ে যাই। মেলাতেও কম দামে নানা ফল পেলাম। কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’’ চোখে পড়ার মতো ভিড় স্টেশনারি জিনিসের দোকানগুলিতেও। ব্যবসায়ী শেখ জিগরির বা কালু সাউরা জানান, গত ৭-৮ বছর ধরে তাঁরা এখানে আসছেন। প্রতি বারের মতো এ বারও ভাল বিক্রি হচ্ছে।
এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ মুরগি লড়াই। অনল খান, হিমাদ্রি সরকার, দিলিপ কারকেরা জানান, প্রতি বার এই লড়াই দেখতে তাঁরা মেলায় আসেন। বনতির, লোদনা, ইদিলপুর থেকে এ দিন বহু মানুষ পিকনিক করতেও এসেছিলেন। তার জেরে যানজটও হয় কৃষক সেতুতে।
ইতিহাস গবেষকেরা জানান, শ্রী চৈতন্যের অন্যতম পার্ষদ নিত্যানন্দের শিষ্য ছিলেন উদ্ধারণ দত্ত। হুগলির সপ্তগ্রামে আদি বসতি হলেও তিনি কেতুগ্রামে নৈহাটির রাজার দেওয়ান ছিলেন। নৈহাটি লাগোয়া গঙ্গার পশ্চিম পাড়েই সাধন-ভজন করতেন তিনি। তাঁর নামেই এলাকার নাম হয় উদ্ধারণপুর। উদ্ধারণ দত্তের আবির্ভাব তিথি উপলক্ষেই পৌষ সংক্রান্তির পর দিন এখানে উৎসবের আয়োজন হয়। মেলার আয়োজন করে মুর্শিদাবাদের সোনারুন্দি রাজবাড়ি ট্রাস্টি বোর্ড। রাজবাড়ি থেকে গৌরাঙ্গ বিগ্রহ এ দিন উদ্ধারণপুরে আনা হয়। আগে সারা মাঘ মাস ধরে মেলা চলত। এখন হয় চার দিন। এ বার মেলায় রয়েছে শ’দেড়েক স্টল।
সোমবার মেলার উদ্বোধন করেন বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ। এলাকার ইতিহাস গবেষক স্বপন ঠাকুর বলেন, ‘‘গঙ্গাস্নান সেরে গৌরাঙ্গের পুজো দিয়ে এই মেলার মাটিতে রান্না করে খাওয়াই রীতি।’’ মেলায় বাউল ও লোক উৎসবের আয়োজন করেছে সীতাহাটি পঞ্চায়ত। যাত্রাপালাও হবে বলে জানান উপপ্রধান বিকাশ বিশ্বাস।
কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুরে মেলা। নিজস্ব চিত্র
জামালপুরের তেলকুপি ঘাটে এ দিন কয়েক হাজার আদিবাসী মানুষজন পুণ্যস্নান সারেন। তার পরে পুজো দেন মারাং বুরু স্থানে। এ রাজ্য ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা থেকে বহু মানুষ আসেন এখানে। এই উপলক্ষে মেলাও বসে। আদিবাসী উৎসবকে স্বাগত জানাতে এ দিন উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অসীমা পাত্র, জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু। জেলার পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল সকালে সাইকেলে চড়ে এখানে পৌঁছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। ছিলেন এসডিপিও শৌভনিক মুখোপাধ্যায়ও।
পূর্বস্থলীর জালুইডাঙায় বসেছে কাঁদুনি মেলা। এলাকাবাসী জানান, নদীর পাড়ে সৎকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিজনেরা এ দিন এখানে এসে স্নান করে পুজো দেন। তার পরে প্রিয়জনের জন্য শোকপ্রকাশ করেন। এই রীতি বহু দিনের। একই রীতি পোলেরহাটের নদীর পাড়েও। পাটুলিতে ভাগীরথীর পাড়েও উওরায়ণের মেলা বসেছে সোমবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy