প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়ে রানিগঞ্জে ধস কবলিত এলাকার পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত জমি না মেলায় ইসিএলের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি ও মন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে এ বিষয়ে তিনি সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চান। তার পরেই অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠির দাবি, যেটুকু জমি মিলেছে তাতে প্রায় ১৩ হাজার বাড়ি তৈরি হবে। ইতিমধ্যেই পাঁচ হাজার বাড়ি তৈরির জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে।
বিস্তারিত শোনার পরে মুখ্যমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, ইসিএল কয়লা তুলছে বলেই ধস নামছে। মানুষ বিপদে পড়ছেন। ইসিএলের নৈতিক দায়িত্ব আছে। যদিও ইসিএল কর্তাদের দাবি, পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য কোন জমিতে আবাসন করা হবে, তার ছাড়পত্র কয়লা মন্ত্রকের ‘হাই-পাওয়ার কমিটি’র পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। তাঁরা শুধু সিদ্ধান্ত কার্যকর করেন।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই ছিল রানিগঞ্জে ধস কবলিত এলাকার পুনর্বাসন। ২০০৯ সালের জুন মাসে এই অঞ্চলের পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক ২৬২৯ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। খরচ কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকের হলেও পুনর্বাসনের জমি খোঁজা থেকে আবাসন তৈরির পুরো দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। ২০১৭ সালের গোড়ায় রাজ্যের আবাসন মন্ত্রক ধস কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য আবাসন তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর পরেই প্রকল্প রূপায়নের জন্য জামুড়িয়া-সহ আশপাশের এলাকা ঘুরে গিয়েছেন আবাসনমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে জামুড়িয়ার বিজয়গড় এলাকায় সেই কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে।
সোমবার কাজের পর্যালোচনা করার সময় জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি জানান, এখনও পর্যন্ত আবাসন তৈরির জন্য ১৭০ একর জমি মিলেছে। এই জমিতে ১২ হাজার ৯৭৫টি বাড়ি হবে। আপাতত পাঁচ হাজার বাড়ি তৈরির টেন্ডার ডাকা হয়েছে। তখনই রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটক বলেন, ‘‘আরও প্রায় ১২৭০ একর জমি চিহ্নিত হয়েছে। যেখানে অনেকটাই রাজ্যের খাস জমি। এই জমির নীচে কয়লা আছে বলে ইসিএল নো-অবজেকশান শংসাপত্র দিচ্ছে না। তাই আবাসন তৈরি করা যাচ্ছে না।’’ এই প্রসঙ্গে জেলাশাসক বলেন, ‘‘জমির নীচে কয়লা থাকলে কয়লা আইনে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে।’’
মলয় ঘটক ও জেলাশাসকের এই বক্তব্য শোনার পরই ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কয়লা তুলেছে বলেই তো ধস নামছে। ঘটনাটা তো ওদের জন্যই হয়েছে। ইসিএলের কোনও নৈতিক দায়িত্ব নেই? যে কোনও দিন ধস নামলে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবেন।’’
মাটির নীচে কয়লা থাকলে কোন কোন ক্ষেত্রে আবাসন তোলার অনুমতি দেওয়া যাবে না? এ প্রসঙ্গে ইসিএলের সিএমডির কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘আবাসন তৈরির জন্য নো-অবজেকশন শংসাপত্র দেওয়ার আগে চিহ্নিত জমি ঘুরে দেখেন কয়লা মন্ত্রকের একটি হাই-পাওয়ার কমিটি। এই কমিটির সুপারিশ মেনেই আমরা আবাসন তৈরির অনুমতি দিই। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই।’’ নীলাদ্রিবাবু জানিয়েছেন, সম্প্রতি ওই হাই-পাওয়ার কমিটি এলাকা ঘুরে গিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, মাটির উপরভাগ থেকে ৬০০ মিটার গভীরে কয়লা থাকলে, সেই এলাকায় আবাসন তৈরির অনুমতি দেওয়া হবে। ওই ১৭০ একর জমিতে ৬০০ মিটার বা তারও গভীরে কয়লার স্তর আছে। তাই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাকি ১২৭০ একর জমির উপরভাগ থেকে খুব কম গভীরে কয়লা স্তর আছে বলেই অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এ দিন এ প্রসঙ্গে আলোচনার শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘‘ওদের আইন আছে। আমাদেরও আইন আছে। আমাদের ভেস্টেড জমির নীচে কয়লা আছে। ওরা অনুমতি দেবে না কেন?’’ তিনি রাজ্যের মুখ্য সচিবকে বিষয়টি দ্রুত এবং অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। উত্তরে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘আমি কেন্দ্রীয় কয়লা সচিবকে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত অনুমোদন দেওবার আর্জি জানিয়েছি। ইসিএল কয়লা তুলেছে বলেই ধস নামছে।’’
আর মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ প্রসঙ্গে ইসিএলের সিএমডির কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানিয়েছেন, বেসরকারি আমলে কয়লাখনির মালিকেরা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কয়লা তুলতেন বলেই এই ধসের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখনকার ধসের জন্য ইসিএল কখনই দায়ী নয়। কারণ, প্রতি পদক্ষেপে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে ডাইরেক্টর জেনারেল মাইন্স সেফ্টি (ডিজিএমএস)। এই সংস্থার ছাড়পত্র ছাড়া ইসিএল খনি বানাতেই পারে না। তাই ধসের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, এমন অবস্থায় ডিজিএমএস ছাড়পত্র দেবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy