প্রচারে ব্যস্ত সন্তুবাবু। নিজস্ব চিত্র
ছোটবেলায় সাপের ছোবলে দিদিকে মারা যেতে দেখিছিলেন। জেদ চেপে গিয়েছিল তখন থেকেই। বড় হয়ে, সামর্থ্য হওয়ার পরেও আর কাউকে সর্পদষ্ট হয়ে মরতে না দেওয়ার সেই প্রতিজ্ঞার কথা ভোলেননি তিনি। কয়েকদিন ধরে কখনও দোকান, কখনও মন্দিরে ঘুরে সাপে কাটলে কি করা উচিত, তা বুঝিয়ে বেড়াচ্ছেন কাটোয়ার সন্তু চট্টোপাধ্যায়। সচেতনতা প্রচারে বিলি করছেন লিফলেটও।
মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ায় গত বছর সাপের ছোবলে ২৪ জনের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে মঙ্গলকোটে ৯, কেতুগ্রাম ২ ব্লকে ৭, কেতুগ্রাম ১ ব্লকে ২, কাটোয়া ১ ব্লকে ২ ও কাটোয়া ২ ব্লকে ৪ জন মারা যান। মহকুমা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন আধিকারিক বামদেব সরখেলের দাবি, বারবার সচেতনতা প্রচার চালানোর পরেও অনেক ক্ষেত্রেই সাপে কাটার পরে রোগীকে প্রথমে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় বা নিজেরাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। এ সব না করে সরাসরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে এলে অনেক তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। স্বাস্থ্য দফতরেরও দাবি, মহকুমার প্রতিটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই পর্যাপ্ত অ্যান্টি ভেনাম রয়েছে। এই প্রচারটাই করছেন কাটোয়া পুরসভার কর্মী, স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা সন্তুবাবু।
দিন সাতেক ধরে প্রতি দিন দুপুরে, সন্ধ্যায় রাস্তায় লিফলেট হাতে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। কখনও স্কুলের বাইরে লিফলেট হাতে পড়ুয়াদের বোঝাচ্ছেন, গোয়ালঘরের অন্ধকার কোণে বা মুরগি, হাঁসের খামারে সতর্ক ভাবে যেতে। কখনও রাস্তায় রিকশাচালক, ভ্যানচালকদের লিফলেট দিচ্ছেন। সন্তুবাবু বলেন, ‘‘সাপে কাটলে অনেকেই ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করে ফেলেন বা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলেন। এগুলো না করে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাণটা বাঁচে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এ দেশে সর্পদষ্ট হয়ে বছরে ৩০ হাজার লোক মারা যায়। ছোটবেলায় এক দিদিকেও মারা যেতে দেখি। তাই প্রচার চালাচ্ছি।’’ তিনি জানান, আপাতত ছ’শো টাকায় দু’হাজার লিফলেট ছাপিয়ে মন্দির, মসজিদের সামনে, ঘাটে-বাজারে বিলি করছেন তিনি। তাঁর প্রচার শুনে থমকে দাঁড়াচ্ছেন পথচলতিরাও। রিকশা চালক জমির শেখ, খাদিম মোল্লাদের কথায়, ‘‘এই লিফলেট হাতের কাছে রাখলে তা পড়ে কোনো সর্পদষ্ট মানুষকে সাহায্য করা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy