Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পড়ুয়া নেই, ধুঁকছে বহু প্রাথমিক

সম্প্রতি হেয়ার স্কুলের দ্বিশতবর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে এসে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিতে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমেও পঠনপাঠন চালু করার চেষ্টা চলছে বলে জানান।

ফাঁকা: কালনার জাপট এলাকার একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

ফাঁকা: কালনার জাপট এলাকার একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৩৫
Share: Save:

ক্লাসঘর রয়েছে, রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। পরিকাঠামোরও খামতি নেই। কিন্তু যাদের জন্য এত কিছু, সেই পড়ুয়ার সংখ্যাই হাতে গোনা। এই পরিস্থিতিতে ধুঁকছে কালনা শহরের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল। শিক্ষক মহলের দাবি, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারাটাই এর প্রধান কারণ।

শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা শহরে এক সময় প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ছিল ৩৪। এর মধ্যে পড়ুয়ার অভাবে উঠে গিয়েছে জনকল্যাণ ও গারোরডাঙা প্রাথমিক স্কুল। যে স্কুলগুলি চলছে, তার অনেকগুলিতেই পড়ুয়ার সঙ্কট। যেমন, কালনা ও জাপট জিএসএফপি-তে সাত করে, শ্যামসুন্দর প্রাথমিকে ছয়, কাঠিগঙ্গা জিএসএফপি-তে তিন ও যোগীপাড়া জিএসএফপি-তে মোটে ন’জন পড়ুয়া রয়েছে। এ ছা়ড়া আরও ছ’টি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ত্রিশ বা তার আশেপাশে। অথচ এই সব স্কুলেই দু’-তিন জন, কোথাও বা তার থেকে বেশি সংখ্যায় শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। সম্প্রতি কাঠিগঙ্গা প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, ঝাঁ চকচকে নিলসাদা ভবন। রয়েছেন দু’জন শিক্ষক। কিন্তু ক্লাসঘরে বসে মাত্র এক জন ছাত্রী। জাপট জিএসএফপি-তে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে হাজির পাঁচ জন পড়ুয়া।

কিন্তু কেন এমন হাল? শহরের শিক্ষা মহলের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের দাবি, কালনা শহর ও আশেপাশে সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের রমরমা বেড়েছে। সেই স্কুলগুলিতেই ছেলেমেয়েদের ভর্তি করার ঝোঁক বেশি অভিভাবকদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, এমন কথাও শুনতে হয়েছে, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে ছেলেমেয়েদের বেশি ‘দায়িত্ব’ নিয়ে পড়ানো হয়। কমল গাইন নামে এক অভিভাবকও দাবি করেন, ‘‘বেসরকারি স্কুলগুলি পড়াশোনার বিষয়ে অনেক বেশি যত্নবান।’’

সম্প্রতি হেয়ার স্কুলের দ্বিশতবর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে এসে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিতে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমেও পঠনপাঠন চালু করার চেষ্টা চলছে বলে জানান। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষাবিদদের মধ্যে অবশ্য দ্বিমত রয়েছে। পবিত্র সরকারের মতো শিক্ষাবিদ এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘এ ভাবে চলতে থাকলে বাংলা ভাষাটিকেই উপেক্ষা করা হবে।’’ যদিও শিক্ষকদের একটা বড় অংশের দাবি, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবে কার্যকর হলে অভিভাবকদের মধ্যে পড়ুয়াদের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুলে ভর্তির যে অনীহা, সেই প্রবণতায় খানিকটা লাগাম পড়বে।

পড়ুয়া-সমস্যা সম্পর্কে কালনা পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই সব স্কুলগুলিকে অন্য স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রস্তাব জেলায় পাঠানো হয়েছে। মহাপ্রভুপাড়ার শ্যামসুন্দর এফপি বিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চালুর চেষ্টা চলছে।’’ তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষা সেলের জেলা সভাপতি তপন পোড়েওল বলেন, ‘‘একাধিক স্কুল মিশিয়ে দিলে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বাড়বে। আর যেখানে শিক্ষকের অভাব রয়েছে সেখানে ওই শিক্ষকদের পাঠানো যেতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Primary school student প্রাথমিক
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE