Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শিশুদের পার্কে কেন বিয়ের অনুষ্ঠান, ক্ষোভ

শুধু ওই দম্পতি নন। নেহরু শিশুকেন্দ্রে এ ভাবে বিয়েবাড়ির প্রস্তুতি দেখে হকচকিয়ে থমকে গিয়েছেন পথচলতি অনেকেই।

বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সাজানো হয়েছে পার্ক। নিজস্ব চিত্র

বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সাজানো হয়েছে পার্ক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৭
Share: Save:

শীতের পড়ন্ত বিকেল। স্ত্রী ও চার বছরের নাতিকে নিয়ে বেড়াতে এসে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় কল্যাণ সামন্তের। পার্কে ঢোকার মুখে ও ভিতরে সাজানোর কাজ করছে। পাতা রয়েছে কার্পেট। পার্কে ঢোকার মুখে রংবেরঙের ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী গেট। খোঁজ নিয়ে তাঁরা জানলেন পার্ক জুড়ে চলছে বিয়েবাড়ির প্রস্তুতি। এই দৃশ্য দেখা গেল ডিএসপি টাউনশিপে নেহরু শিশুকেন্দ্রে। এই প্রস্তুতির মাঝেই কোনও রকমে এক বার ভিতরে ঢুকে নাতির আবদার মিটিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন এ-জোনের বাসিন্দা কল্যাণবাবু ও স্ত্রী অন্তরাদেবী।

শুধু ওই দম্পতি নন। নেহরু শিশুকেন্দ্রে এ ভাবে বিয়েবাড়ির প্রস্তুতি দেখে হকচকিয়ে থমকে গিয়েছেন পথচলতি অনেকেই। জওহরলাল নেহরুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৮৯ সালের ১৪ নভেম্বর শিশুদের জন্য পার্কটির উদ্বোধন করেন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার (ডিএসপি) তদানীন্তন ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রথম থেকে ডিএসপি কর্তৃপক্ষই পার্কটির দেখভাল করতেন। শিশুদের জন্য বিভিন্ন শিক্ষামূলক সামগ্রী, নানা রাইড ছাড়াও ভিতরে বাহারি ফুলের বড় বাগান, খেলার মাঠ রয়েছে। ছৌ নাচের বিভিন্ন মূর্তিও রাখা আছে। পার্কে ঢুকতে কোনও প্রবেশ মূল্য ছিল না। বছর খানেক আগে পার্কটি পরিচালনার দায়িত্ব ডিএসপি কর্তৃপক্ষ একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেন। তারপর থেকেই টিকিট চালু হয়।

এ দিন দেখা যায়, পার্কের ভিতরে বিয়েবাড়ির প্রস্তুতি চলছে। মণ্ডপ, গেট তৈরির কাজ করছেন কর্মীরা। অনেকেই বাড়ির খুদেদের নিয়ে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ছেলেকে নিয়ে পার্কে এসেছিলেন এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী রুম্পা রায়। তিনি বললেন, ‘‘শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট পার্ক কীভাবে বিয়েবাড়ির জন্য ভাড়া দেওয়া হল বুঝতে পারছি না। আমার ছেলে বিকেলে এখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটায়।’’ এ দিন আর ভিতরে ঢুকে লাভ নেই বলে, তিনিও বেরিয়ে গেলেন। একই কথা জানিয়েছেন বি-জোনের প্রবীণ বাসিন্দা অনিরুদ্ধ বাগচি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি প্রতিদিন বিকেলে কিছুক্ষণ আসি পার্কে। বাচ্চারা খেলাধুলো করে। আমি দেখি। আর সামান্য হাঁটাচলা করি। পার্কে বিয়েবাড়ি মেনে নেওয়া যায় না।’’

বর্তমানে পার্কটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থার কর্তা উজ্জ্বল মজুমদার অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁদের পরিচিত একজনের বিয়ের প্রীতিভোজ আয়োজনের জন্য পার্কের একাংশ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানে অনুষ্ঠান হবে। উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘পার্কে বাচ্চাদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে কথা মাথায় রেখেই পার্কের একদিক ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, যে সময় অনুষ্ঠান হবে তখন বাচ্চারা সাধারণত পার্ক ছেড়ে চলে যাবে।’’

কিন্তু শিশুদের জন্য তৈরি পার্ক এ ভাবে কোনও অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া যায় কি? ডিএসপি’র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক চিন্ময় সমাজদার বলেন, ‘‘লিজের শর্ত অনুযায়ী, বাচ্চাদের গতিবিধি কোনওভাবে লঙ্ঘিত না করে পার্ক ভাড়া দিতে পারে সংস্থা। তবে অনেকেই এ দিন আপত্তি জানিয়েছেন। পরের বার লিজ দেওয়ার সময় এ ব্যপারে ভাবনাচিন্তা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage ceremony Children's Park
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE