Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পূর্বস্থলীর ধরমপুরে ছড়াল আগুন, ভস্মীভূত ৮৬টি বাড়ি

সিলিন্ডার ফেটে পুড়ে ছাই পাড়া

এ দিন দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। টিনের চালের মাটি বা পাটকাঠির বেড়া দেওয়া বাড়িগুলিতে দ্রুত আগুন ধরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারাই আগুন নেভানো শুরু করেন। আশপাশের গ্রাম থেকেও লোকজন এসে তাঁদের সাহায্য করেন। পরে কাটোয়া, কালনা ও নবদ্বীপ থেকে দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন আসে।

ছড়িয়ে রয়েছে পোড়া জিনিসপত্র। সোমবার বিকেলে ধরমপুর গ্রামে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

ছড়িয়ে রয়েছে পোড়া জিনিসপত্র। সোমবার বিকেলে ধরমপুর গ্রামে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০২:০৯
Share: Save:

দুপুরে দমকা হাওয়া বইছিল। রান্নার সময়ে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন ধরে গিয়েছিল একটি বাড়িতে। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের নিমদহ পঞ্চায়েতের ধরমপুর গ্রামে সোমবার দুপুরে সেই আগুন ছড়িয়ে পুড়ে গেল প্রায় ৮৬টি বাড়ি।

এ দিন দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। টিনের চালের মাটি বা পাটকাঠির বেড়া দেওয়া বাড়িগুলিতে দ্রুত আগুন ধরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারাই আগুন নেভানো শুরু করেন। আশপাশের গ্রাম থেকেও লোকজন এসে তাঁদের সাহায্য করেন। পরে কাটোয়া, কালনা ও নবদ্বীপ থেকে দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন আসে। সন্ধে নাগাদ আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুরে গ্রামের উত্তরপাড়ায় একটি বাড়িতে রান্নার সময়ে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যায়। সেই সময়ে সেটির কাছে কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বাড়িতে আগুন ধরে যায়। ওই পরিবারের সদস্য প্রণতি দাস বলেন, ‘‘তখন দমকা হাওয়া বইছিল। চোখের সামনে বাড়িটা পুড়ে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বাড়িতেও।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই পাড়ায় ৪২টি বাড়ি রয়েছে। তার ৩৬টিতেই আগুন ধরে যায়। কলাবাগান, সর্ষের খেতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের মুসলিমপাড়াতেও। বাসিন্দারা জানান, সেখানে তখন আজাই শেখের মেয়ের বিয়ে চলছিল। খাওয়া-দাওয়া শুরু হয়েছিল। আগুন ছড়িয়ে পড়ায় সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

আতঙ্কে পুকুরে নিয়ে গিয়ে ফেলা হয়েছে সিলিন্ডার। নিজস্ব চিত্র

গ্রামবাসীরা জানান, এক সঙ্গে এত বাড়িতে আগুন ধরে যাওয়ায় হতভম্ব হয়ে যান তাঁরা। আশপাশের পুকুর, ডোবা, টিউবওয়েল থেকে জল নিয়ে এসে আগুন নেভানো শুরু হয়। তাঁদের দাবি, ঘণ্টাখানেক পরে দমকল আসে। তবে তার আগেই বাড়ির জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিকেলে পোড়া বাড়ির সামনে কাঁদতে-কাঁদতে মমতা দাস বলেন, ‘‘১৪ মার্চ মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। সে জন্য সোনার গয়না ও টাকা এনে রাখা ছিল বাড়িতে। সব পুড়ে গেল। এমন বিপর্যয়ে পড়তে হবে ভাবতে পারিনি!’’ অনেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখে ঘর থেকে গ্যাস সিলিন্ডার বের করে পুকুরে নিয়ে গিয়ে ফেলেন। অনেক সিলিন্ডার বের করা যায়নি। সেগুলি ফেটে যায়।

গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। খেতমজুরি করেন অনেকে। চাষের জন্য নানা বীজ-সহ উপকরণ রাখা ছিল অনেকের বাড়িতে। সে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুড়ে গিয়েছে পড়ুয়াদের বইপত্রও। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ছ’জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে। একাদশ শ্রেণি ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে চার জন। বিশ্বরম্ভা বিদ্যাপীঠের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী পপি দাস বলে, ‘‘বাড়িতে সেই সময়ে আমি একা ছিলাম। হঠাৎ লোকজনের চিৎকার শুনে বেরিয়ে দেখি, বাড়ির চাল জ্বলছে। কোনও রকমে শুধু অ্যাডমিট কার্ডটা বাঁচাতে পেরেছি।’’ ওই স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির ছাত্র সম্রাট দাসের কথায়, ‘‘বই-খাতা সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে পরীক্ষা দেব জানি না!’’ গ্রামের যুবক সমীর দাস গুজরাতে কাজ করেন। শনিবার বাড়ি ফিরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘরে একটি টিনের বাক্সে পাসপোর্ট, পড়াশোনার যাবতীয় শংসাপত্র, পরিচয়পত্র রাখা ছিল। সব ছাই হয়ে গিয়েছে।’’

মুসলিমপাড়ায় বেশ কিছু তাঁতির বাস। যন্ত্রে কাপড় বুনে হাটে বিক্রি করেন তাঁরা। সাবির আলি মল্লিক, সিরাজুল মণ্ডল, হালিমা বিবিরা বলেন, ‘‘দুপুরে অনেকেই তাঁত বুনছিলেন। অনেক শাড়িও তৈরি করে ঘরে রাখা ছিল। আচমকা আগুনে সব জ্বলে গিয়েছে। কোনও রকমে নিজেরা প্রাণ বেঁচেছি।’’ অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে লাগোয়া নিমদহ, কালেখাঁতলা, জামালপুর-সহ বেশ কিছু গ্রাম থেকে লোকজন ছুটে আসেন। তাঁরাও আগুন নেভানোয় হাত লাগান। ঘটনাস্থলে পৌঁছন কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানি, এসডিপিও শান্তনু চৌধুরী, বিডিও সোমনাথ দে ও পূর্বস্থলী থানার পুলিশ। গিয়েছিলেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মদন পালও।

কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানান, দু’টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে স্থানীয় শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা জেলা স্তরে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের জন্য বইপত্র ও অ্যাডমিট কার্ডের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Gas Cylinder Cylinder Burst
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE