Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পড়তে চেয়ে বিয়েতে না নাবালিকার

স্কুল ছুটির পরে জনা কয়েক সহপাঠীকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে হাজির হয়েছিল বছর পনেরোর মেয়েটি। জানিয়েছিল, সে পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু বাবা-মা তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। দু’দিন পরেই বিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

স্কুল ছুটির পরে জনা কয়েক সহপাঠীকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে হাজির হয়েছিল বছর পনেরোর মেয়েটি। জানিয়েছিল, সে পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু বাবা-মা তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। দু’দিন পরেই বিয়ে।

মঙ্গলবার দশম শ্রেণির ছাত্রী সোনালি মণ্ডলের মুখে এ কথা শুনেই ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জামুড়িয়ার বাগডিহা-সিদ্ধপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শান্তনু ভট্টাচার্য। তাদের কথা মতো বিষয়টি জানান ‘চাইল্ডলাইন’কে। সোনালিকেও ফোন করতে বলে চাইল্ডলাইনে। বৃহস্পতিবার পুলিশ-প্রশাসনের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে সোনালির বাড়ি গিয়ে বিয়ে আটকানোর ব্যবস্থা করল চাইল্ডলাইন।

সোনালি জানায়, বছর পাঁচেক আগে তার দিদির বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা। তখন দিদির বয়সও কম ছিল। মাস কয়েক আগে শ্বশুরবাড়িতে সেই দিদির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। সোনালি বলে, ‘‘আমি তাই আতঙ্কে ছিলাম। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। কিন্তু এখনই বিয়ে দিয়ে দিলে সব স্বপ্ন ছারখার হয়ে যাবে।’’

সোনালির মা স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার কাজ করেন। তিনি জানান, অভাবের সংসার। তাই কলকাতার বাসিন্দা এক পাত্র পেয়ে মেয়ের অমত সত্ত্বেও বিয়ে ঠিক করেছিলেন। শুক্রবার একটি মন্দিরে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। প্রধান শিক্ষক শান্তনুবাবু জানান, সোনালির কাছে খবর শুনে তিনি জামুড়িয়া ব্লক ওয়েলফেয়ার অফিসার মিতালি জানাকে বিষয়টি জানান। তিনি চাইল্ডলাইনে ফোন করতে বলেন। ছাত্রীটিকেও চাইল্ডলাইনে ফোন করে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন। সেই মতো তাঁরা দু’জনেই ফোন করেন।

এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ সোনালির বাড়ি যান আসানসোলে চাইল্ডলাইনের আধিকারিক সাইনুর তরফদার। ছিলেন ব্লক প্রশাসন, পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা। সঙ্গে যায় কেন্দা ফাঁড়ির পুলিশও। সোনালি তখন স্কুলে ছিল। মেয়ের বয়স আঠারো হওয়ার আগে বিয়ে দেওয়া অপরাধ, প্রশাসনের কর্তারা এ কথা বোঝানোর পরে মেয়েটির মা বলেন, “প্রশাসনের কথা আমরা মানব। তাতে মেয়েরও পড়ার সাধ মিটবে। ও পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরে বিয়ে দেব।”

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘সোনালি পড়াশোনায় ভাল। তার পাশে থাকতে পেরে আমরা খুশি। স্কুলের তরফে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে।” বিয়ে রোখার পরে সোনালি বলে, ‘‘পড়াশোনা করে শিক্ষক হতে চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minor Girl Marriage School Study
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE