Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ছত্তীসগঢ়ে দুষ্কৃতীদের ছুরির কোপে মৃত্যু কালনার ইঞ্জিনিয়ারের, জখম আরও এক।

শোকের সঙ্গে রোষের দাবি, ‘শাস্তি চাই’

পড়শিরা জানান, ছোট থেকে মেধাবী ছাত্র তুহিনের পড়াশোনা অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চবিদ্যালয়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৮০ শতাংশেরও বেশি। এর পরে দুর্গাপুরের একটি কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা ও তার পরে হুগলির মগরার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বি-টেক পড়া শুরু করেন।

বিষাদ: তুহিনের দেহ ঢুকছে পাড়ায়। সোমবার। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

বিষাদ: তুহিনের দেহ ঢুকছে পাড়ায়। সোমবার। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০২:১৩
Share: Save:

বিকেল চারটে, সোমবার। কালনার ভাদুড়িপাড়ায় পৌঁছল ছত্তীসগঢ়ে খুন হওয়া পাড়ার ছেলে তুহিন মল্লিকের দেহ। ততক্ষণে পাড়া তো বটেই, শহরের নানা প্রান্তেও রাস্তার দু’পাশে ভিড় জমিয়েছেন মৃতের পরিচিত, বন্ধু-সহ কয়েক হাজার মানুষ। সবারই এক দাবি, ‘দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ সেই সঙ্গে পাড়ার অলিগলিতে চলল আলোচনা, তুহিনকে নিয়ে।

সোমবার সকালে ঘটনার কথা চাউর হওয়ার পরেই ভিড় জমতে শুরু করে। বেলা ১২টা থেকে বারবার মানুষের মুখে মুখে ফেরে জিজ্ঞাসা, ‘আর কতক্ষণ পরে আসবে তুহিন!’ দেহ এলাকায় ঢোকার পরেই মানুষের ভিড়ে বন্ধ হয়ে যায় রাস্তা। আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে পাড়ার মহিলারা ধূপ জ্বেলে দেন। কারও হাতে দেখা যায় মোটা রজনীগন্ধার মালা। চোখ ছলছল চোখে সবারই একটাই আকুতি, ‘এক বার ছুঁয়ে দেখি ছেলেটাকে।’

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তুহিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোহিত অগ্রবাল, দেবাঞ্জন পাল, তন্ময় পালেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘ছোট থেকেই ও বলত, সংসারটাকে দাঁড় করাতে হবে। তাই সুযোগ পেয়েই চলে গিয়েছিল ভিন্-রাজ্যে। সময় পেলেই আমরা আড্ডা দিতাম।’’ ছত্তীসগঢ় থেকে ছেলের দেহ নিয়ে ফিরেছেন পেশায় ফার্মাসিস্ট পূর্ণেন্দুবাবু। তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।

পড়শিরা জানান, ছোট থেকে মেধাবী ছাত্র তুহিনের পড়াশোনা অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চবিদ্যালয়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৮০ শতাংশেরও বেশি। এর পরে দুর্গাপুরের একটি কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা ও তার পরে হুগলির মগরার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বি-টেক পড়া শুরু করেন। তিনি এখনও সেখানের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রও। পড়াশোনা করেছেন শিক্ষাঋণ নিয়ে। পাড়ায় অত্যন্ত শান্ত ছেলে বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মা সুমিত্রাদেবীর টিউমার অস্ত্রোপচার হবে শুনে সম্প্রতি দিন সাতেকের ছুটি নিয়ে তুহিন বাড়ি এসেছিলেন। গত বৃহস্পতিবারই পৌঁছেছেন কর্মস্থলে। ছেলের দেহ দেখে কথা বলতে পারেননি তিনিও।

ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্য শুভাশিস দাস। সঙ্গে ছিল একটি ফুটবল। কেন এটা? প্রশ্ন শুনেই তিনি বলেন, ‘‘তুহিন তো ফুটবলের অন্ধ-ভক্ত। রোনাল্ডো ওর সব থেকে প্রিয় ফুটবলার। ওর কফিনের পাশে ফুটবলটা দিতে এসেছি।’’

তবে শোকের পাশাপাশি বাসিন্দারা দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তুহিনের বন্ধুরা এই দাবিতে সোমবার বিকেল পর্যন্ত অন্তত পাঁচশো জনের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। স্মারকলিপি দেওয়া হবে প্রশাসনের কর্তাদের কাছে। স্থানীয় বাসিন্দা নীল দত্তের দাবি, ‘‘দুষ্কৃতীরা পশুর থেকেও নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে। ওদের শাস্তি চাই।’’ দেহ আসার আগেই এলাকায় এসেছিলেন কালনা পুরসভার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগও। তাঁরও দাবি, ‘‘দুষ্কৃতীদের কড়া সাজা চাইছি।’’ এসডিপিও (কালনা) শান্তনু চৌধুরী বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। ওই এলাকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE