Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাইশ বছর পরে ঘরে ফিরল ছেলে

থানা-পুলিশ, পরিচিতদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি বিস্তর করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু কোনও হদিস মেলেনি। আশা যখন নিভুনিভু, সে অবস্থায় কয়েকদিন আগে বর্ধমান থানা থেকে ছেলের খবর পান কাঞ্চননগরের ওই পরিবার।

আদর: মা-দিদির সঙ্গে উত্তম। —নিজস্ব চিত্র।

আদর: মা-দিদির সঙ্গে উত্তম। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

বাড়ির রেশনের জিনিসপত্র এনে দিয়েই ট্রেনে চাপার নেশায় স্টেশনে ছুটে গিয়েছিল বছর কুড়ির ছেলেটা। ইচ্ছেমতো একটা ট্রেনেও চড়ে বসেছিল। বাইশ বছর আগে ছেলের সঙ্গে সেই শেষ দেখা হয়েছিল বাবা-মার।

থানা-পুলিশ, পরিচিতদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি বিস্তর করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু কোনও হদিস মেলেনি। আশা যখন নিভুনিভু, সে অবস্থায় কয়েকদিন আগে বর্ধমান থানা থেকে ছেলের খবর পান কাঞ্চননগরের ওই পরিবার। পুলিশ জানায়, তাঁদের ছেলে উত্তম দেবনাথ চেন্নাইয়ের সরকারি মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি আছেন। চেন্নাই গিয়ে সোমবার দুপুরে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা।

২০ বছরের ছেলে এখন ৪২। চেহারাও বদলেছে কিছুটা। তবে ছেলেকে ফিরে পেয়েও চিন্তা যাচ্ছে না মা কল্পনাদেবীর। তিনি জানান, ছেলেটা বরাবরই মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিল। ওকে পুরোপুরি সুস্থ করাটা খুব দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেটা খালি বাইরে ছুটে যাচ্ছে। ওকে নজরে রাখতে শান্তিপল্লিতে মেয়ে অঞ্জনার বাড়িতে রাখা হয়েছে। এখন চিকিৎসার খরচ জোগানোটাই বড় কথা।’’

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, চেন্নাইয়ের ওই হাসপাতালে ২০১০ থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন উত্তম। প্রায় সাত বছর চিকিৎসার পরে মাস খানেক ধরে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাঁর কথায়, “ওই হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্স ও পুলিশ এসে নিয়মিত ভাবে নাম-ঠিকানা জানতে চাইত। আমিও মনে করার চেষ্টা করতাম। তারপর এক দিন বর্ধমান আর দিদি-জামাইবাবুর নাম বলি।” জানা যায়, ১৯৯৫ সালে হারিয়ে যান উত্তম। সেখান থেকে ঘুরতে ঘুরতে চেন্নাই স্টেশনে এসে পৌঁছন। চেন্নাইয়ের রেল পুলিশ উত্তমবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করে। রেল পুলিশই বর্ধমান থানাতেও খবর দেয়। সঙ্গে পাঠায় চিকিৎসাধীন উত্তমের ছবি। দিদি অঞ্জনাদেবী বলেন, “পুলিশ আমাদের ছবি দেখিয়েছিল। কিন্তু চিনতে পারিনি। কয়েক দিন পরে ফের পুলিশ এসে বেশ কিছু তথ্য জানানোর পরে বুঝতে পারি, ওটাই আমাদের হারানো ভাই।’’ এরপরেই চেন্নাই রওনা হয়ে যান অঞ্জনাদেবীর স্বামী চিত্তরঞ্জনবাবু-সহ তিন জন। চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, “পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, গুজরাট থেকে চেন্নাই স্টেশনে এসেছিল উত্তম। রেল পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে, বর্ধমানে থাকার সময়ই মানসিক চিকিৎসা শুরু হয়েছিল।”

সোমবার ছেলেকে পেয়ে চোখের জল বাঁধ মানেনি কল্পনাদেবীর। তবে ছেলের মাকে চিনতে অনেকক্ষণ সময় লাগে। ধীরে ধীরে অবশ্য দিদি, ভাই, পড়শিদেরও চিনতে পারছেন তিনি। পড়শিদের আশ্বাস, উত্তমের চিকিৎসার জন্য তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। উত্তমকে আর হারিয়ে যেতে দেবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Missing Bardhaman বর্ধমান
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE