Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আট মাস ভাঙা পড়ে ক্রেন, সারাবে কে

একের পর এক দুর্ঘটনার জেরে নড়েচড়ে বসেছিল পুলিশ। টানা তিন দিন ধরে চলছিল নজরদারি। বৃহস্পতিবার সেই নজরদারি খানিক হাল্কা হতেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ফিরেছে স্বমহিমায়।

চলছেই: অনিয়মই যেন নিয়ম। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

চলছেই: অনিয়মই যেন নিয়ম। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৫
Share: Save:

একের পর এক দুর্ঘটনার জেরে নড়েচড়ে বসেছিল পুলিশ। টানা তিন দিন ধরে চলছিল নজরদারি। বৃহস্পতিবার সেই নজরদারি খানিক হাল্কা হতেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ফিরেছে স্বমহিমায়। এ দিন ২ নম্বর জাতীয় সড়কের নবাবহাট থেকে তেলিপুকুর পর্যন্ত অংশে বেনিয়মের টুকরো টুকরো ছবি ধরা পড়েছে। বর্ধমান পুলিশ-প্রশাসনের অভিযোগ, এই বেনিয়ম রুখতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ উদাসীন। ওই রাস্তার উপর অনেক জায়গায় আলো ও সিগন্যাল ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদেরও।

গত ২২ মার্চ সকালে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে রথতলায় পিচ বোঝাই ট্যাঙ্কার উল্টে একটি গাড়ির উপরে পড়ায় মারা যান একই পরিবারের সাত জন। মৃতদের মধ্যে ছিল ছোট ছোট তিনটি ছেলেমেয়ে। ছ’জন ঘটনাস্থলেই মারা গেলেও অনেকক্ষণ বেঁচেছিল বছর ছয়েকের আরভ শর্মা। পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশ মনে করেন, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (এনএইচএআই) কাছে আধুনিক ক্রেন থাকলে সে দিন আরভকে হয়তো বাঁচানো যেত। অভিযোগ, এনএইচএআই-এর হাতে থাকা হাইড্রোলিক সুবিধা যুক্ত ক্রেনটি আট মাস ধরে জৌগ্রামে ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওই ক্রেনটিকে সারানো বা নতুন করে কেনার ব্যাপারে তারা চুপচাপ।

রথতলার ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরেও অবশ্য এনএইচএআই-এর টনক নড়েনি। এ প্রসঙ্গে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প ম্যানেজার (রক্ষণাবেক্ষণ) ঋতম গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, “ওই ক্রেনটি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নয়। সম্ভবত ক্রেনটি পুলিশের। তাতে এনএইচএআই লিখে রেখেছিল!” পুলিশ এই দাবি মানেনি।

ডানকুনি থেকে পালশিট—এই ১৩৪ কিলোমিটার রাস্তায় মাত্র তিনটে পুরনো মডেলের অ্যাম্বুলেন্স রাখা থাকে (ডানকুনি, পালশিট ও বর্ধমানে)। পুলিশের দাবি, জাতীয় সড়কে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার অন্তর আধুনিক মানের অ্যাম্বুলেন্স রাখা বাধ্যতামূলক। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা ওই অ্যাম্বুলেন্সগুলির কার্যকারিতা নিয়ে জেলা পুলিশ প্রশ্ন তুলেছে। ‘হেল্প ডেস্ক’ কিয়স্কও ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় নেই বলে অভিযোগ পুলিশের। নিত্য যাতায়াতকারীদের আবার দাবি, এক সময় চারটি নজরদারি গাড়ি চলত। এখন সেখানে দু’টি গাড়ি চলে। তার ফলেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকছে ট্রাক-লরি-বাস। দুর্ঘটনাও ঘটে চলেছে।
যদিও ঋতমবাবুর দাবি, তাঁদের কাছে ৬টি নজরদারি গাড়ি রয়েছে। রাস্তায় চারটি চলে। তা হলে রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে কী ভাবে? সদুত্তর মেলেনি।

পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “আমরা বেশ কিছু সমস্যা তুলে ধরে এনএইচএআই-কে চিঠি দিয়েছি। সেখানে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতি এক কিলোমিটার অন্তর সতর্কতামূলক বোর্ড লাগানো এবং বেশ কিছু জায়গায় গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।” ওই চিঠিতে আলো ও সিগন্যাল ব্যবস্থা ঠিক করার দাবিও জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও রাস্তার ধারে ফেন্সিং ঠিক করা, রাতের বেলা রাস্তার শেষ প্রান্ত বোঝার জন্য ‘রোড রিফ্লেক্টর’ লাগানোর দাবি করা হয়েছে। পানাগড় বাইপাস সম্পূর্ণ করার জন্যও বলা হয়েছে। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে কী কী করতে হবে, বুধবারের বৈঠকে তা বলা হয়েছে।” জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, ২০১৪-১৫ সালের তুলনায় দুর্ঘটনার হার কমতে শুরু করেছে। প্রকল্প অধিকর্তা অরিন্দম হান্ডিক বলেন, “সব সমস্যা তো আমরা মেটাতে পারব না। তার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Expressway Modern Equipments
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE