ঝুঁকি: জেলা জুড়ে এ ধরনের সাঁকোর নিরাপত্তা ও বৈধতা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। জামালপুরে। নিজস্ব চিত্র
মাকে মোটরবাইকে চাপিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলেন ছেলে। পথে দামোদরের উপরে বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো ভেঙে তলিয়ে যান বছর পঞ্চান্নর রেহেনা বেগম। সোমবার জামালপুরের ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে, মঙ্গলবারও খোঁজ মেলেনি প্রৌঢ়ার। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে জেলার নানা প্রান্তে বাঁশের তৈরি অস্থায়ী সাঁকোগুলি নিয়ে। বাসিন্দাদের দাবি, ফি বছরই এই ভাবে ‘নিখোঁজ’ হন যাত্রীরা। ঘটে মৃত্যুর ঘটনাও।
তবে দামোদর ও অজয়ের উপরে অস্থায়ী সেতু তৈরি যে বেআইনি, তা জানান প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা জানান, কোথাও বাসিন্দারা, কোথাও বা ফেরিঘাটের ইজারাদারেরা যাতায়াতের সুবিধার্থে অস্থায়ী সেতু তৈরি করেন। সেচ দফতরের এক কর্তার কথায়, “এমন সেতু বিপজ্জনক। নদীর স্বাভাবিক গতিও রুদ্ধ হয়। জামালপুরের অমরপুরের কাছে কাঠের অস্থায়ী সেতু রয়েছে। সেখানে নদীর মাঝ বরাবর পলি পড়েছে। পাড়েরও ক্ষতি হচ্ছে।”
তার পরেও প্রশাসনের হিসেবে শুধুমাত্র জামালপুরের পাল্লা, শম্ভুপুর, অমরপুর-সহ ৭-৮টি জায়গায় দামোদরের উপরে এমন অস্থায়ী সেতু রয়েছে। এ ছাড়া কাটোয়া ও কালনা মহকুমায় খড়ি, ব্রহ্মাণী, বাবলা ও বাঁকার নদীর উপরেও এমন সেতু রয়েছে। কোথাও কোথাও পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, এমনকী জেলা পরিষদও এমন সেতু করেছে বলে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি।
এই ধরনের সেতুতে আলোর ব্যবস্থাও থাকে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। জামালপুরের সিপিএম বিধায়ক সমর হাজরার ক্ষোভ, “কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে এমন সেতুর সংখ্যা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বাড়ছে।” প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিকও বলেন, “গ্রীষ্মে নদীতে নৌকা চালানো যাবে না বলে ফেরিঘাটের ইজারাদাররা এ রকম সেতু তৈরি করে থাকে। নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, শীতকালের শুরুতে নদীতে জল কম থাকার সময় সেতু তৈরি করা হয়। নদীতে জল বাড়ার পরে তা খুলে নেওয়া হয়। কিন্তু এই ক’মাস সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে পারাপারের জন্য মোটরবাইক ও সাধারণ মানুষের কাছে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সোমবার রাতে রেহেনার নিখোঁজ হওয়ার পরে অবশ্য জামালপুরের শম্ভুপুরে সেতুটি খুলে দিয়েছেন বাসিন্দারা। চক্ষণজাদি গ্রামের মহম্মদ ওসমান মল্লিক, স্থানীয় বধূ লতিকা বিশ্বাসদের ক্ষোভ, “বিপজ্জনক ভাবে পারপার করতে হতো। আলোর অভাবে প্রাণ হাতে করে যেতাম।”
জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব অবশ্য বলেন, “এ রকম সেতু হতে পারে না। তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy