Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

মুসলিম বাড়িতেই জগন্নাথের নিত্যপুজো

বিভেদের রাজনীতির মাঝে এই বাড়িতে এসে শান্তি পান এলাকার মানুষেরা। বাড়ির ছোট ছেলে, বছর চল্লিশের শাহ আলম খাদিম ফি দিন পুজো করেন জগন্নাথ, চৈতন্যের। তাঁর ভক্তির টানে এ বাড়িতে পুজো দিতে আসেন বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদের লোক।

কান্দরায় আলমের বাড়িতে পুজো। নিজস্ব চিত্র

কান্দরায় আলমের বাড়িতে পুজো। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ১২:৪০
Share: Save:

কাঠের নড়বড়ে দরজা। একদিকে সমাধি। অন্যদিকে নিত্যসেবা চলছে জগন্নাথ, নাড়ুগোপালের।

সন্ধ্যা হলেই সেখানে নমাজ পাঠ হয়, আবার তুলসিতলায় যত্নে প্রদীপ জ্বালেন বাড়ির ছেলে শাহ আলম খাদিম। কেতুগ্রামের কান্দরার মোল্লাপাড়ার খাদিম বাড়ি এমনই সহাবস্থানের নজির। বাড়ির কর্তা বলেন, ‘‘হিন্দু, মুসলমান নয়, এ মানুষের উপাস্যস্থল।’’

বিভেদের রাজনীতির মাঝে এই বাড়িতে এসে শান্তি পান এলাকার মানুষেরা। বাড়ির ছোট ছেলে, বছর চল্লিশের শাহ আলম খাদিম ফি দিন পুজো করেন জগন্নাথ, চৈতন্যের। তাঁর ভক্তির টানে এ বাড়িতে পুজো দিতে আসেন বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদের লোক। বাসিন্দারাই জানান, টিটু (শাহ আলমের ডাক নাম) স্কুলের গণ্ডী না পেরোলেও পুজোপাঠে ছোট থেকেই মতি তাঁর। বাবা জাহের খাদিমের কাছেই মন্ত্রপাঠ শেখা। জাহের খাদিমকে সমাধিস্থও করা হয়েছে জগন্নাথ মন্দিরের পাশে।

ভক্তদের দেওয়া চাল-কলা নিবেদন করতে করতে শাহ আলমও ডুবে যান স্মৃতিতে। বলে চলেন, এগারো পুরুষ আগে তাঁদের পরিবারের কোনও এক জন উত্তরপ্রদেশে অযোধ্যার পথে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন ধাতুর জগন্নাথ মূর্তি। তা নিয়ে বাড়ি আসেন তিনি। কিন্তু অন্যরা ‘ধর্মে’র নামে সেই মূর্তি ডোবায় ফেলে দেন। শাহ আলমের দাবি, এরপরেই পরিবারে নেমে আসে অমঙ্গল। বাড়ির এক জন স্বপ্নাদেশ পান, ডোবা থেকে মূর্তি তুলে আনলে শান্তি ফিরবে। জলে মূর্তি খুঁজতে নামলে মেলে ধাতুর নয়, জগন্নাথের দারুবিগ্রহ। সেই থেকেই জগন্নাথকে এখানে ‘বুড়োরাজ’ ডাকা হয়।

এলাকার প্রমীলা আচার্য, মিজানুল কবীররা বলেন, ‘‘যে কোনও অনুষ্ঠানে খাদিমবাড়িতে পুজো দেওয়াটা এ তল্লাটের রেওয়াজ।’’ ফি বছর মহালয়ার সপ্তাহখানেক আগে বড় উৎসবও হয়। শাহ আলমের স্ত্রী টুম্পা খাদিম বলেন, ‘‘রোজা রাখি। আবার স্বামীর অনুপস্থিতিতে ঠাকুরকে জল-বাতাসাটুকুও আমিই দিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE