রবিবার কাটোয়ায় প্রকাশ করা হল শোভাযাত্রার এই নতুন পথ। নিজস্ব চিত্র
শহরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে এ বার কার্তিকের শোভাযাত্রায় নতুন রুটে সায় দিয়েছিল বেশির ভাগ পুজো কমিটিই। রবিবার সেই নতুন রুটের ম্যাপ প্রকাশ করল পুলিশ-প্রশাসন।
এ দিন বিকেলে পুলিশের প্রশাসনিক কার্যালয়ে এই ম্যাপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাজ মুখোপাধ্যায়, মহকুমাশাসক (কাটোয়া) সৌমেন পাল, পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। মহকুমাশাসক জানান, দর্শনার্থীদের কাছে কার্তিক পুজোর শোভাযাত্রা আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেই এই সিদ্ধান্ত। আগে ২.৭ কিলোমিটার রাস্তায় শোভাযাত্রা হতো। এ বার তা বেড়ে হবে ৩.৩ কিলোমিটার।
চাউলপট্টি, ডাবপট্টি, হরগৌরিপাড়ার মতো এলাকায় সংকীর্ণ রাস্তায় শোভাযাত্রায় অসুবিধার জন্য প্রায় দশ বছর ধরে নতুন রুটের প্রস্তাব প্রশাসনকে দিয়ে আসছিল কয়েকটি ক্লাব। এই ক্লাবগুলি সাবেক থাকার সঙ্গে উঁচু আলোকসজ্জা নিয়েও বেরোয়। ফলে, সরু রাস্তায় তাদের সমস্যা হয়। দোকানের ছাউনি ভাঙার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া বাইরের নানা এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা খড়েরবাজার, চাউলপট্টির মতো সংকীর্ণ রাস্তায় শোভাযাত্রা দেখতে সমস্যায় পড়েন। কাছারিপাড়ার সঙ্গে মাধবীতলা, নিচুবাজারের কিছু ক্লাবও নতুন রুটের পক্ষে মত দেয়।
তবে প্রশাসনিক বৈঠকে নতুন রুটে রাজি হয়নি খড়েরবাজার, তাঁতিপাড়ার কয়েকটি ক্লাব। প্রথম দফায় মহকুমাশাসকের দফতরে ৮২টি পুজো কমিটির মধ্যে ১৭টি লিখিত মতামতে পুরনো রুটের পক্ষে সায় দেয়। যদিও পরে তাদের মধ্যে আরও ৯টি পুজো কমিটি নিজেদের মত পালটে নতুন রুটের পক্ষেই সায় দেয়। সব মিলিয়ে, এ দিন ৬৭টি পুজো কমিটি নতুন রুটের পক্ষে যায়। নতুন রুট অনুযায়ী, এ বার শোভাযাত্রা লেনিন সরণি থেকে এলআইসি মোড়, টেলিফোন ময়দান, মাধবীতলা হয়ে কারবালাতলা, সিদ্ধেশ্বরীতলা থেকে থানা রোডের দিকে যাবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কাছারি রোড, গোয়েঙ্কা মোড়, মাধবীতলার মোড়ে স্টেশনবাজারের দিকে যাওয়ার রাস্তা, শাঁখারী পট্টি থেকে হরগৌরিপাড়া যাওয়ার রাস্তা, সখী আখড়ার মোড়, থানা রোড থেকে কলাইপট্টির দিকে যাওয়ার মতো কিছু সংযোগকারী রাস্তাকে ‘নো এন্ট্রি’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই রাস্তাগুলি দিয়ে ঢুকে যাতে পুরনো ঘিঞ্জি রুটে কোনও ক্লাব শোভাযাত্রা নিয়ে যেতে না পারে, সে দিকে নজর রাখতেই এমন ব্যবস্থা। পুরসভা জানায়, এলআইসি মোড়, পুরসভা মোড়, নেহরু স্ট্যাচু, মাধবীতলা ক্রসিং, কারবালাতলা, বারোয়ারিতলা, চৈতন্য স্ট্যাচু, দেবরাজ ঘাট ও চৌরাস্তায় ২৫টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। সেই সৌজন্যে শহরের বাইরে থাকা মানুষজনও ইন্টারনেটের মাধ্যমে শোভাযাত্রা দেখতে পাবেন।
এমন সিদ্ধান্তে খানিক মনক্ষুন্ন হরগৌরিপাড়া, চাউলপট্টির অনেক বাসিন্দা। শ্রেয়া দাস, প্রণব দাসেরা বলেন, ‘‘ছোট থেকে বাড়িতে বসে শোভাযাত্রা দেখতে অভ্যস্ত। এ বার নিয়ম পাল্টানোয় অন্যত্র গিয়ে ঠাকুর দেখতে হবে। তাতে অসুবিধে হল।’’ ফি-বছর অন্য পাড়ার সরু রাস্তায় গাদাগাদি করে বসে শোভাযাত্রা দেখা মাধবীতলার সৈকত সাহা, কাছারী রোডের পিয়াসা দাসেরা আবার বলেন, ‘‘আলোগুলো ভাল ভাবে যেতে পারবে। শৃঙ্খলাও থাকবে।’’
বাইরের দর্শনার্থীদের কাছে কার্তিক পুজো আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এই নতুন রুটে, সুবিধাজনক হবে উদ্যোক্তাদের পক্ষেও—আশায় প্রশাসনের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy