Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা অকেজো, দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভাঙচুর

শিশু কোলে চলে গেল কে, রহস্য

সদ্যোজাত শিশু উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেই ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পরে পুলিশি তদন্তে জানা গেল, এই সরকারি হাসপাতালের এক তলায় স্ত্রী ও প্রসূতি ওয়ার্ডের সামনের করিডরের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলি অকেজো!

তাণ্ডব: বিক্ষোভকারীরা তেড়ে আসতেই ভয়ে অফিসের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন নার্সরা। ছবি: বিকাশ মশান

তাণ্ডব: বিক্ষোভকারীরা তেড়ে আসতেই ভয়ে অফিসের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন নার্সরা। ছবি: বিকাশ মশান

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪২
Share: Save:

সদ্যোজাত শিশু উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেই ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পরে পুলিশি তদন্তে জানা গেল, এই সরকারি হাসপাতালের এক তলায় স্ত্রী ও প্রসূতি ওয়ার্ডের সামনের করিডরের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলি অকেজো! অথচ এই ক্যামেরাগুলির ফুটেজ হতে পারত শিশু উধাও তদন্তের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

সোমবার দুপুরে ওই শিশু উধাও হয় বলে তার বাড়ির লোকেদের দাবি। ওই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে বিকেলে হাসপাতালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রসূতির পরিজনেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো এবং কয়েক জন নার্সকে হেনস্থার অভিযোগও ওঠে প্রসূতির পরিজনদের বিরুদ্ধে। হাসপাতাল সূত্রের দাবি, প্রসূতির পরিবারের লোক দাবি করেই এক মহিলা শিশুটিকে নার্সদের কাছ থেকে কোলে নিয়েছিল। তার পর থেকে শিশু-সহ মহিলার খোঁজ মিলছে না। যদিও এই দাবি মানতে নারাজ শিশুটির পরিবার।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের তিলক রোড সংলগ্ন বস্তি এলাকার বাসিন্দা পাপিয়া বিবি। সোমবার সকাল ৬টা নাগাদ তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। তখন হাসপাতালে প্রসূতির স্বামী শেখ শফিক-সহ পরিবারের আরও কয়েক জন হাজির ছিলেন। সকাল ১০টা নাগাদ তাঁরা বাড়ি চলে যান। পাপিয়া বিবির দাবি, দুপুর ১২টা নাগাদ কর্তব্যরত নার্সরা শিশুটিকে পোলিও টিকা খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যান। শারীরিক ভাবে দুর্বল পাপিয়া সঙ্গে যাওয়ার জন্য বিছানা থেকে ওঠেন। কিন্তু, একটু যেতেই মাথা ঘুরে পড়ে যান। কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন, পাশে তাঁর সন্তান নেই। তিনি বলেন, ‘‘নার্সদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা জানান, আমার পরিবারের লোকজন ছেলেকে নিয়ে গিয়েছে।’’

পাপিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ হাসপাতাল থেকে ফোন করে তাঁর স্বামীকে খবর দেওয়া হয়। বাড়ির লোক হাসপাতালে এসে কর্তব্যরত নার্সদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। খবর পেয়ে নিউটাউনশিপ থানা থেকে পুলিশ আসে। নার্স ও হাসপাতালের কর্মীদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। হাসপাতালের করিডরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে উদ্যোগী হয় পুলিশ। তখনই দেখা যায়, সেগুলি অকেজো। পুলিশের মতে, এই ধরনের ঘটনার তদন্তে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খুবই কাজে আসে। গত বছরই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে নবজাতক চুরির ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অভিযুক্ত মহিলাকে চিহ্নিত করে তাকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছিল পুলিশ। উত্তেজনার খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস হালদার। তিনি জানান, শিশু চুরির তদন্ত করবে পুলিশ। হাসপাতালের কারওর গাফিলতি ধরা পড়লে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও তিনি দেন।

ভাঙচুরের পরে। ছবি: বিকাশ মশান

মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, পাপিয়া বিবি অসুস্থ থাকায় সোমবার দুপুরে তাঁর পরিবারের এক জনের হাতে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘একজন ট্রেনি নার্সের কোলে ছিল শিশুটি। ওই নার্স আমাদের জানিয়েছেন, পাপিয়া বিবির আত্মীয় পরিচয় দেওয়া এক জনের হাতে শিশুটিকে তুলে দেন তিনি।’’ যদিও সদ্যোজাতের বাবা শফিক বলেন, ‘‘হাসপাতালের গাফিলতিতেই আমার সন্তান চুরি হয়ে গিয়েছে। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’

মঙ্গলবার দুপুরে প্রসূতির পরিজনেরা ফের হাসপাতালে গিয়ে ক্ষোভ জানাতে শুরু করেন। এই সময় কয়েক জন মহিলা চিৎকার-চেঁচামেচি করে টেবিল-চেয়ার উল্টে দেন। উপস্থিত নার্সদেরও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, শিশু উধাও হওয়ার সময় প্রসূতি বিভাগে উপস্থিত নার্স ও অন্যান্য কর্মী এবং পাপিয়া বিবির পাশের শয্যার রোগিণীকেও জেরা করা হবে। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশুটিকে নিয়ে যে পালিয়েছে, তার স্কেচ আঁকানো হবে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন দুপুরে এক বেসরকারি হাসপাতালের এক আয়া ভিজিটিং আওয়ারে স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগে এসেছিলেন। তাঁর বাড়িও তিলক রোড এলাকায়। পুলিশ ওই আয়ার খোঁজ করছে। শিশুপাচার চক্রের সঙ্গে এই ঘটনার কোনও ভাবে যোগ আছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

সুপার জানিয়েছেন, পুলিশের পাশাপাশি আলাদা ভাবে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকেও বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তাঁরই নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে ওই কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE