Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
গাফিলতিতে বালকের মৃত্যুর অভিযোগ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে

২৮ ঘণ্টা পরে উঠল কর্মবিরতি

ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। শিশুমৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে ‘নিরাপত্তার অভাব’ ঘটছে দাবি করে কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।

বোঝানো: ডাক্তারি পড়ুয়াদের কাজে যোগ দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন হাসপাতাল সুপার। ছবি: উদিত সিংহ

বোঝানো: ডাক্তারি পড়ুয়াদের কাজে যোগ দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন হাসপাতাল সুপার। ছবি: উদিত সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪২
Share: Save:

দৃশ্য এক: চিকিৎসক না থাকায় ছেলেটা মারা গেল।— কাঁদতে কাঁদতে ছেলের মৃত্যুর জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির দিকে আঙুল তুলছেন এক বাবা।

দৃশ্য দুই: ‘তোমরা আমার ছেলে-মেয়ের মতো’ বলে প্রকাশ্যে হাতজোড় করে কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন সুপার। তাতে অবশ্য টনক নড়েনি জুনিয়র ‘ডাক্তার’দের।

—দু’টো দৃশ্যই শুক্রবার, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরের। শেষমেশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ২৮ ঘণ্টা বাদে শুক্রবার বিকেলে সেই কর্মবিরতি তুলে নেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।

ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। শিশুমৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে ‘নিরাপত্তার অভাব’ ঘটছে দাবি করে কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এই কর্মবিরতির জেরে ব্যাপক ভোগান্তি শুরু হয় বিএমসিএইচ-এ। হাসপাতালে সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে স্বাস্থ্য দফতর কর্মবিরতিতে ‘মদতদাতা’ জুনিয়র চিকিৎসকদের চিহ্নিত করে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার জন্য হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁকে নির্দেশ দেয়। শুক্রবার সকাল থেকেই রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও প্রবীণ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন উৎপলবাবু। তিনি লিখিত ভাবে জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে। ততদিন পর্যন্ত পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল ২৫ জন অতিরিক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার্স দেবেন বলেও জানিয়েছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যান্য দাবি মানারও আশ্বাস দেন সুপার।

শুক্রবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, উৎপলবাবু হাতজোড় করে অনুরোধ করছেন, ‘‘তোমরা আমার ছেলেমেয়ের মত। তোমাদের মূল দাবি মেনে নিয়ে লিখিত আকারে তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছি। রোগী-স্বার্থে তোমরা এ বার কর্মবিরতি তুলে নাও।” কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারেরা ওই লিখিত বয়ানের প্রতিটি অনুচ্ছেদের বিস্তারিত বিবরণ চেয়ে বিক্ষোভ জারি রাখেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, তাঁরা আলোচনায় রাজি আছেন, কিন্তু জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘ব্ল্যাক মেইল’ করার মানসিকতাকে প্রশ্রয় দিতে রাজি নন। এ কথা শুনে জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি জারি রাখার কথা জানায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাল্টা ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করলে জুনিয়র ডাক্তারেরা লিখিত ভাবে সুপারকে জানান, তাঁরা কাজে যোগ দিচ্ছেন। উৎপলবাবু বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও আলোচনার ভিত্তিতেই পড়ুয়ারা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে কর্মবিরতিতে মদতদাতা কয়েক জনকে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে।” তাঁদের বিরুদ্ধে ‘রিপোর্ট দেখার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলে জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য।

কর্মবিরতির জেরে রোগী-মৃত্যুরও অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালে। আউশগ্রামের রামনগরের বাসিন্দা শিবচরণ কোঁড়া এ দিন স্থানীয় পঞ্চায়েতে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘সিস্টারদের কথা মতো রক্ত জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু তাঁরা ‘চিকিৎসক নেই’ জানিয়ে ছেলেকে রক্ত দেননি। রাতেই ছেলে মারা গিয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জন্যেই এই ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে এক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসাও ঠিক মতো হয়নি বলে অভিযোগ করেন তাঁর আত্মীয়, গলসির জুজুটি-বাসপাড়ার বাসিন্দা দীপঙ্কর বিশ্বাস।

রোগীদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে হাসপাতাল সুপার বলেন, ‘‘কিছু সমস্যা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Burdwan Medical College Strike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE