সন্তানহারা: ২০১২ সালের ১০ মে ছেলের দেহ জড়িয়ে কান্না বামাপদ মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
আর পাঁচটা দিনের মতোই শুক্রবারও রান্না করছিলেন তিনি। শ্বশুরমশাই স্নানে গিয়েছেন। এমন সময়ে এক নেতা বাড়িতে এসে খবরটা বললেন, ‘‘বৌদি, মামলাটা এ বার সিবিআইয়ের হাতে।’’— শুনেই প্রায় পাঁচ বছর আগে খুন হওয়া বার্নপুরের সিপিএম নেতা অর্পণ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী ইন্দিরাদেবী বলেন, ‘‘এটাই আমাদের প্রথম জয়।’’
এ দিন হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, অর্পণবাবুর খুনের মামলার তদন্ত করবে সিবিআই। এই নির্দেশ শুনে আসানসোল এসবি গড়াই রোডের বাড়িতে বসে খানিকটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অর্পণবাবুর বাবা, এক সময়ের দাপুটে সিপিএম নেতা বামাপদবাবু, তাঁর স্ত্রী ও
ছেলে অর্কদেব।
‘‘আশা রাখি, এ বার অন্তত সত্যিটা বেরোবে’’— হাইকোর্টের নির্দেশ শুনে এ কথা বলতে বলতে গলা বুজে আসে আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন মেয়র বামাপদবাবুর। ২০১২-র ১০ মে দিনটার কথা মনে করলেই শিউরে ওঠেন প্রায় ৯৫ বছরের বৃদ্ধ বামাপদবাবু। শ্বশুরমশাইকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিতে দিতে ইন্দিরাদেবী বিড়বিড় করে বলেন, ‘‘আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম।’’
২০১২ সালের ঘটনার দিন আনন্দবাজার পত্রিকায়। ফাইল চিত্র
২০১২-র ওই দিনে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে বার্নপুর ফুটবল স্টেডিয়াম রোডে দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন সিপিএমের হিরাপুর জোনাল কমিটির নেতা অর্পণবাবু। তদন্ত শুরু করে কমিশনারেটের ‘আইবি’ বিভাগ। পরে পরিবারের দাবি মেনে খুনের তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিআইডি। পুলিশ-প্রশাসন, এমনকী, রাজ্যপালের কাছেও খুনের তদন্ত চেয়ে কখনও ইন্দিরাদেবী, কখনও বা বামাপদবাবু দরবার করেছিলেন। হাইকোর্টের শুনানিতে বিচারকের কাছে তদন্তকারী অফিসারেরা দুষ্কৃতীদের খোঁজ মিলছে না বলে জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেন সিপিএম নেতারা। এত কিছুর পরেও কে বা কারা, কী কারণে অর্পণবাবুকে খুন করেছিল, তার কিনারা অধরাই থেকে গিয়েছে। এর পরেই সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে
মামলা করেন অর্কদেব।
আরও পড়ুন: সিআইডি নিয়ে অসন্তোষ কোর্টের
অর্পণবাবুর পরিবারের মতোই এই নির্দেশের পরে তদন্ত ঠিক পথে এগোনোর আশা করছেন সিপিএম নেতারাও। খুনের ঘটনার দিন থেকেই তদন্ত চেয়ে সরব হতে দেখা যায় বাম নেতাদের। ঘটনার পরে রাজ্যের তৎকালীন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অর্পণবাবুর বাড়িতে এসে পরিবারের পাশে থাকার ও সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ দিন হাইকোর্টের নির্দেশের পরে সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আশা করি, এ বার ন্যায়বিচার মিলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy