Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

তাঁর হাতেই তৈরি নেতা ডালিম, দাবি বিকাশের

১৯ জুন মঙ্গলকোটের নিগনে খুন হন তৃণমূলের শিমুলিয়া অঞ্চল সভাপতি সানাউল্লা ওরফে ডালিম শেখ। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এই খুন দাবি করে নিহতের পরিবার স্থানীয় বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লা চৌধুরী ও বিকাশবাবু-সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করে।

কাটোয়া আদালতে বিকাশ রায়চৌধুরী। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

কাটোয়া আদালতে বিকাশ রায়চৌধুরী। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ০২:০২
Share: Save:

তিনি দলের অনেক পুরনো নেতা। এক সময়ে এলাকায় দলের সংগঠনের অনেকটা তৈরি হয়েছিল তাঁর হাতেই। সেই দলেরই এক নেতা খুনের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পরে এ নিয়েই আক্ষেপের সুর মঙ্গলকোটের তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশ রায়চৌধুরীর মুখে।

সোমবার তাঁকে কাটোয়া আদালতে হাজির করানোর সময়ে বিকাশবাবু বলেন, ‘‘মঙ্গলকোটের সব নেতা আমার তৈরি। ডালিমকে আমি নেতা বানিয়েছি। মনে হচ্ছে ছেলে খুনে বাবার শাস্তি হচ্ছে।’’ আদালত তাঁকে এক দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। তবে এ দিন আইনি জটিলতায় মামলার শুনানি হয়নি। আজ, মঙ্গলবার তা হবে।

১৯ জুন মঙ্গলকোটের নিগনে খুন হন তৃণমূলের শিমুলিয়া অঞ্চল সভাপতি সানাউল্লা ওরফে ডালিম শেখ। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এই খুন দাবি করে নিহতের পরিবার স্থানীয় বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লা চৌধুরী ও বিকাশবাবু-সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করে। ১৪ জন ধরা পড়লেও তাঁরা দু’জন অধরা ছিলেন। ইতিমধ্যে মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির হাতে। সেপ্টেম্বরে আদালতে ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। তবে তাতে বিকাশবাবু ও রহমতুল্লার নাম ছিল না।

রবিবার গাড়িতে কলকাতা যাচ্ছিলেন বিকাশবাবু। বর্ধমানের উল্লাস মোড়ের কাছে মামলার তদন্তকারী অফিসার শ্যামল সিকদারের নেতৃত্বে সিআইডি-র একটি দল গাড়ি আটকে তাঁকে গ্রেফতার করে। এ দিন অভিযুক্তের আইনজীবী ধীরেন্দ্রনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘চার্জশিটে নাম নেই, এমনকী গ্রেফতারি পরোয়ানাও নেই। তা সত্ত্বেও কী ভাবে ওঁকে গ্রেফতার করা হল?’’ ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম সুচিত্রা দেব মামলাটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে (প্রথম) পাঠান। আজ, মঙ্গলবার সেখানেই শুনানি হবে।

সম্প্রতি মঙ্গলকোটে এক সভায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল দলের পুরনো কর্মীদের অগ্রাধিকারের নির্দেশ দেন। কিন্তু তার পরপরই এলাকায় দলের অন্যতম পুরনো নেতাকে গ্রেফতারে ফের শাসকদলে চাপান-উতোর তৈরি হয়েছে। বিকাশবাবুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ দিন আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। ব্লক মহিলা তৃণমূল সভাপতি ঝর্না ঘোষ দাবি করেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করছি। চক্রান্ত করে এক গোষ্ঠী ওঁকে ফাঁসাচ্ছে। তবে আমাদের আইনের উপরে আস্থা আছে।’’ আর এক নেতা জামাত আলির অভিযোগ, ‘‘সিপিএম থেকে তৃণমূলে আসা কিছু লোকজনই চক্রান্ত করছে।’’

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ২০১১-র বিধানসভা ভোটে অপূর্ব চৌধুরীর মঙ্গলকোটে টিকিট পাওয়ার পর থেকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়। সে বার অপূর্ববাবু মাত্র ১২৬ ভোটে হারার পরে দলীয় নেতৃত্ব বিকাশবাবুর উপরে ক্ষুন্ন হন। তবে ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর নির্বাচনী এজেন্ট হন বিকাশবাবু। বছর দুয়েক ধরে মঙ্গলকোটে সিদ্দিকুল্লা-বিকাশবাবুর অনুগামীদের সঙ্গে অপূর্ববাবুর গোষ্ঠীর লোকজনের বিবাদ বেধেছে প্রায়ই। এই পরিস্থিতিতে অপূর্ব-অনুগামী বলে পরিচিত ডালিম শেখকে খুনে বিকাশবাবুর নাম জড়ায়।

এ দিন বিধায়ক সিদ্দিকুল্লার সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। অপূর্ববাবু শুধু বলেন, ‘‘প্রকৃত দোষী যেন ছাড়া না পায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE