Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
পুরনো ছায়াসঙ্গীদের নামে জাহেরকে খুনের নালিশ

কাছের লোকই শেষ করে দিল! আক্ষেপ মায়ের

ঘরের দাওয়ায় বসে অপলক স্ত্রী নুরুন্নেসা বেগম। নাগাড়ে কেঁদে চলেছেন। ঘুরে-ফিরে একটাই কথা, ‘‘বারবার বললাম বাইকে যেও না। শুনল না।’’ আক্ষেপটা যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

শোক: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন জাহের শেখের মা ও স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

শোক: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন জাহের শেখের মা ও স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

সুচন্দ্রা দে
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৪৭
Share: Save:

ঘরের দাওয়ায় বসে অপলক স্ত্রী নুরুন্নেসা বেগম। নাগাড়ে কেঁদে চলেছেন। ঘুরে-ফিরে একটাই কথা, ‘‘বারবার বললাম বাইকে যেও না। শুনল না।’’ আক্ষেপটা যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

পাশ থেকে বড় ছেলে নূর মহম্মদ আবার যোগ করলেন, ‘‘আগে একদিন বাইকে বেরিয়েছিল বাবা। মা বারণ করলেও শোনেনি। দ্বিতীয় দিনে বেরিয়েই এই পরিণতি।’’ বুধবার সন্ধ্যায় বাইকে ফেরাই যেন কাল হল কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখের।

কেতুগ্রামের খাসপুরে বছর ত্রিশেকের বাস জাহেরের পরিবারের। বৃহস্পতিবার জাহেরের বাড়িতে ছিল আত্মীয়, বন্ধুদের ভিড়। শেষবারের মতো নেতাকে দেখার আশায় বুধবার থেকেই তাঁর বাড়িতে ভিড় জমছিল। রতনপুর পীরতলা মোড়ের কয়েক’টি স্টেশনারি, মিষ্টির দোকান খুললেও এ দিন খাসপুরের প্রায় সব দোকানের ঝাঁপই ছিল বন্ধ। পরিবেশও ছিল থমথমে। উৎসুক জনতার কৌতূহল, ‘‘দাদার দেহ কখন আসবে!’’

বাদশাহী রোডের রায়খা ক্যানেলপাড় থেকে বুধবার রাতেই ময়না-তদন্তের জন্য সভাপতির দেহ কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এ দিন সকালে চিকিৎসকরা তাঁর দেহ থেকে ছ’টি গুলি বের করেন। ময়না-তদন্তের পর দলীয় পতাকায় মোড়া দেহ প্রথমে কান্দরায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে আনা হয়। দুপুর দু’টো নাগাদ নিশ্ছিদ্র পুলিশি নিরাপত্তায় দেহ আনা হয় খাসপুরের বাড়িতে। ফুঁটিসাঁকো মোড় থেকে রাস্তার ধারে গিজগিজে ভিড়।

স্ত্রী নুরুন্নেসার একটাই আক্ষেপ কেন তাঁর কথা শুনল না জাহের! তাঁর কথায়, ‘‘আগেই ভাল ছিল। সবসময় গাড়িতে যেত। সঙ্গে জনাচারেক কর্মীও থাকত। দেহরক্ষী পাবার পর থেকেই যেন বেপরোয়া হয়ে উঠল।’’ মাসপাঁচেক আগে পিসেমশাই মহম্মদ শেখ ও মাস দু’য়েক আগে ভায়রাভাই জামির শেখ খুন হতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন জাহের। কিছু পরে আর্জি মতো নিরাপত্তারক্ষীও পান। সেই রক্ষী আসার দিন পনেরোর মধ্যেই বাইকে বের হতে শুরু করেন জাহের।

মা রশিদা বিবি বলেন, ‘‘ছেলে যাঁদের স্নেহ করত, আপন ভেবে শাসন করত তাঁরাই ওকে শেষ করে দিল।’’ ভাই তাহের শেখ বলেন, ‘‘রায়খার একটি পুকুর খনন বাবদ বরাদ্দ টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে দাদার সঙ্গে দলেরই কিছু কর্মীর বিবাদ বাঁধে। ওরা টাকা হাতাতে চাইলে দাদা প্রতিবাদ করে। গত শুক্রবার দাদা ওই ঘনিষ্ট সঙ্গীর মেয়ের বিয়েতে না গেলেও স্নেহের বশে উপহার পাঠিয়েছিল। আর ওরাই কিনা হামলা চালাল।’’

এ দিকে, তখনও ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে সভাপতির বছর এগারোর ছেলে জাহাঙ্গির শেখ ও বছর দশেকের মেয়ে সাহিনূর খাতুন। তাদের জড়িয়ে ঠাকুমার আক্ষেপ, ‘‘মাথার উপর থেকে তো ওদের ছাদটাই চলে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Leader Politician Shot Dead
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE