Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

স্কেচ আঁকিয়ে অভিযুক্তের খোঁজে পুলিশ

এখনও অন্ধকারে পুলিশ এবং দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে প্রসূতির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ওয়ার্ডে ঢুকে যে মহিলা ওই সদ্যোজাতকে নিয়ে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, তার স্কেচ আঁকার কাজ শেষ করেছে পুলিশ।

তদন্তে পুলিশ আধিকারিকেরা। ছবি: বিকাশ মশান

তদন্তে পুলিশ আধিকারিকেরা। ছবি: বিকাশ মশান

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৫
Share: Save:

সদ্যোজাত উধাও হওয়ার পরে কেটে গিয়েছে গোটা দু’দিন। এখনও অন্ধকারে পুলিশ এবং দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে প্রসূতির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ওয়ার্ডে ঢুকে যে মহিলা ওই সদ্যোজাতকে নিয়ে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, তার স্কেচ আঁকার কাজ শেষ করেছে পুলিশ। সেই ছবি নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশিও শুরু হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন থানায় সদ্যোজাত চুরি হওয়ার ঘটনা জানানো হয়েছে। তবে, হাসপাতালের সব ক’টি সিসি ক্যামেরা বিকল না হলে হয়তো এতো কাঠখড় পোড়াতে হতো না বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। বুধবার দুপুরে হাসপাতালে ফের তদন্তে আসেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী, এসিপি (পূর্ব) বিমলকুমার মণ্ডল।

ডিসি-র আশ্বাস, ‘‘ওই সদ্যোজাতকে উদ্ধারের জন্য সব রকম ভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দ্রুত কিনারা করে ফেলা হবে।’’ বুধবার সন্ধ্যাতেই দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানা খবর পায়, রাজারহাটেরাস্তার ধারে একটি ট্যুরিস্ট ব্যাগের মধ্যে এক সদ্যোজাত শিশুপুত্র উদ্ধার হয়েছে। ওই শিশুকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। উদ্ধার হওয়া শিশুটি, দুর্গাপুর হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া সদ্যোজাতই কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

তবে, এই ঘটনার জেরে সিসি ক্যামেরা অকেজো থাকার খবর জানাজানি হওয়ায় চূড়ান্ত অস্বস্তিতে দুর্গাপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ, হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই কাঠগড়ায়। এমনিতেও মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামো ও পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে রোগী ও রোগীর পরিজনদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। শহরে আরও কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থাকায় এই হাসপাতালের উপরে রোগীর চাপ রাজ্যের অন্য মহকুমা হাসপাতালের তুলনায় কম। শয্যার অভাবে বারান্দায় রোগীদের শুয়ে থাকার মতো ছবি এখানে দেখা যায় না। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা প্রায় ৩৩০। মাঝে মাঝে এক শয্যায় দু’জন রোগীকে রাখতে হয়।

সন্দেহভাজনের স্কেচ।

কিন্তু রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, স্ট্রেচারে করে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে হাসপাতালের কর্মীর দেখা মেলে না। বহিরাগত কেউ রোগীকে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে একশো টাকা নেন। হাসপাতালে তুলনায় ভাল শয্যা পেতে গেলে অতিরিক্ত ‘খরচ’ করতে হয়। একই ভাবে ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’ এর মতো জরুরি পরিষেবা ‘প্রণামী’র বিনিময়ে পাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।

রোগীর পরিজনদের আরও অভিযোগ, হাসপাতালের গেটে রক্ষী থেকেও নেই। উপযুক্ত কাগজপত্র না দেখিয়েই যে কেউ ওয়ার্ডে ঢুকে যেতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক নার্সও সে কথা জানিয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘বহিরাগতরা বিনা বাধায় ভিতরে ঢুকে পড়ে। সব সময় ভিড় লেগেই থাকে ওয়ার্ডে। কাজকর্মের অসুবিধা হয়। আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি।’’ পুলিশের একাংশের অনুমান, এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই সোমবার এক মহিলা প্রসূতি ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েছিল। তার পরেই উধাও হয়ে যায় ডিএসপি টাউনশিপের তিলক রোড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা পাপিয়া বিবির সদ্যোজাত পুত্রসন্তান। সোমবার দুপুরে অসুস্থ অবস্থায় অচেতন হয়ে পাপিয়া শুয়েছিলেন বিছানায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই সময় বহিরাগত মহিলা নিজেকে পাপিয়ার ‘আত্মীয়া’ পরিচয় দিয়ে ট্রেনি নার্সের হাত থেকে শিশুটিকে নেয়। পরে সুযোগ বুঝে সে শিশুটিকে নিয়ে চম্পট দেয়।

ট্রেনি নার্স ও পাপিয়ার পাশের শয্যায় থাকা আর এক প্রসূতির কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মধ্যবয়স্কা ওই মহিলার স্কেচ আঁকিয়েছে পুলিশ। সেই ছবি নিয়ে পুলিশ ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় গোপনে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সোমবার বিকেলে ঘটনার খবর পেয়ে প্রথমেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চাওয়া হয়। কিন্তু, সিসি ক্যামেরা বিকল থাকায় তা পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল ফটকের সামনে, সুপারের ঘরের সামনে, পুরনো রান্নাঘরের সামনে, নিরাপত্তারক্ষীদের বসার জায়গায়, প্রসূতি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটারের সামনে একটি করে এবং পুরনো প্রসূতি বিভাগের বাইরে ও ভিতরে একটি করে— মোট ৮টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু, একটিও কাজ করে না!

হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরা নতুন করে চালু করা এবং আরও কিছু নতুন ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করার জন্য কয়েক মাস আগেই স্বাস্থ্য দফতরে আর্জি পাঠানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Investigation Sketch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE